ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবু মায়ের চেকআপ কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
স্কয়ার হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ডা. নার্গিস ফাতেমা
ডায়াবেটিসের সঙ্গে প্রায় সবাই পরিচিত। কিন্তু প্রেগনেন্সি বা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ে আমাদের মাঝে অনেক শংকা, অনেক অজানা তথ্য রয়ে গেছে। গর্ভকালে ডায়াবেটিসে ভুগা হবু মায়েদের পরামর্শ দিয়েছেন স্কয়ার হসপিটালের সিনিয়র কনসালটেন্ট স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ডা. নার্গিস ফাতেমা। সম্প্রতি ডক্টর টিভির স্বাস্থ্য সমাধান অনুষ্ঠানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডা. তানিয়ার রহমান মিতুল
ডক্টর টিভি: যে হবু মা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের জন্য চেকআপটা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
এন্টিন্টাল চেকাআপ যেটা স্ট্যান্ডার্ড। আমরা যারা সবচেয়ে ভালো সুযোগ সুবিধার মধ্যে আছে তাদের যে স্ট্যান্ডার্ড প্রটোকল আর প্রেগনেন্সি ডায়াবেটিসের স্ট্যান্ডার্ড প্রটোকল সেটা মোটামুটি এক। আর যাদের সুযোগ-সুবিধা কম যারা who. চারটা মিনিমাম প্রটোকলে যায় তাদের কিন্তু জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস হবে না। তার কারণ হচ্ছে তারা হাই রিস্ক গ্রুপে পড়েছে। প্রেগনেন্সি হাই রিস্ক গ্রুপে একদম স্ট্যান্ডার্ড এমন ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রত্যেক মাসের শুরুতে এন্ট্রাল চেকআপ , তারপরে দুই সপ্তাহ পরপর এবং শেষের মাসে গিয়ে সাত দিন পর পর এন্ট্রাল চেকআপ, সেটা তো তোর কিছুটা কম বেশি করবেন। এটা হচ্ছে তাদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড। আর সুগার যাদের খুব ভালো কন্ট্রোল আছে তারা হয়তো এর চেয়ে একটু কম হলেও চলবে, বিশেষ করে এই করোনা মহামারীতে।
কিন্তু সুগার যখন কন্ট্রোল নাই, সুগার খুব ভালো কন্ট্রোল থাকলে শুধু শুধু ডায়েট এবং হাঁটা দিয়ে যদি সুগার খুব ভালো কন্ট্রোল থাকে তাহলে কিন্তু সে বেশ ভালো আছে। এবং তার তখন হয়তো একটু দেরি করে গেল তারপর দুই সপ্তাহের জায়গায় তিন সপ্তাহ গেল। বাসায় যেতে সে মনিটর করছে।
আসলে হোম মনিটরিং ছাড়া প্রেগনেন্সি ডায়াবেটিস কন্ট্রোল করা সম্ভব নয়। যতবারই আমি ডাক্তারের কাছে যাই আবার ডে টু ডে কন্ট্রোল জানতে হবে। অনেকেই আমরা দেখেছি আমরা বলা সত্ত্বেও হয়তো শুধু ফাস্টিং নাস্তার দু ঘন্টা পরে করেন, লাঞ্চের পরে অথবা ডিনারের পরে অনেকে করতে অতটা উৎসাহিত হন না। কিন্তু একটা সুগার দিনের একবেলা ভালো একবেলা খারাপ থাকলে বাচ্চার ওপর যে প্রতিক্রিয়া সেটা কিন্তু হবে।
কাজেই সুগারটা যদি সে নিজে স্ট্রাইক্টলি মাইন্টেন করে,দায়িত্বটা বুঝে নেয়। আমার বাচ্চা আমাকে দেখে রাখতে হবে, আমাকে দায়িত্ব নিতে হবে। আমার অসুখটা আমাকে কন্ট্রোল করতে হবে । আপা যেটা বারবার বলছেন, নিজেকে নিজে ডা. হতে হবে। অসুখটা সম্পর্কে আমাদের দায়িত্ব তাদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া এবং এটা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ বাচ্চার কারণে। আমি তো বলে যাদের অল্প ডায়াবেটিস তাদের কিছুই হয় না, প্রেগনেন্সি ডায়াবেটিস তিন মাসের আগে হয় না।
এই সাত মাসে যদি তাদের নিজের সুগার একটু বেশিই থাকে তাহলে তাদের নিজের কিন্তু কিছুই হবে না। এবং কোন সেন্ট্রাম থাকবে না বাচ্চার কিন্তু ওই সময়টায় ভাইটাল। তার বাচ্চার জন্য প্রতিটা মুহূর্ত ভাইট্রাল। সে মায়ের পেটে বড় হচ্ছে, তার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ডেভেলপড হচ্ছে। এই সময় সুগার কন্ট্রোল রাখাটা বাচ্চার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। না হলে পেটের বাচ্চা বিকলাঙ্গ হওয়া থেকে শুরু করে, বাচ্চা মারা যাওয়া পর্যন্ত প্রবলেম হতে পারে, ডেলিভারির সময় ডিফিকাল্ট হতে পারে এবং ডেলিভারির পরেও বাচ্চা বিলিরুবিন হাইপোগ্লাইসেমিয়া হাওয়া শ্বাসকষ্ট হওয়া অপরিপক্ক ফুসফুস নিয়ে জন্ম নিতে পারে। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ইম্পর্টেন্ট।
যে মায়ের ডায়াবেটিস কন্ট্রোল নাই সে মায়ের বাচ্চা ৪০ সপ্তাহ ফুসফুস শ্বাস নেওয়ার মতো পরিপক্ক হয় না। জন্মের পরে দেখা যায় এ বাচ্চাদেরকে ভেন্টিলেটরে দিতে হচ্ছে। কাজেই মা যদি আমাদের কাছ থেকে এই মেসেজগুলো ভালো মত পায়, কিভাবে কন্ট্রোল করবে ভালোভাবে বুঝতে পারে, তাহলে সে নরমাল এন্টিলেটার চেকআপে এসে প্রয়োজনমতো এর সাথে যদি সুগার কন্ট্রোল না হয় ডায়াবেটিক সেন্টার কানের ডাক্তারের কাছে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রেগনেন্সিতে ডায়াবেটিস থাকলে আসলে তিনজনে মিলে সে রোগীর ট্রিটমেন্ট দেওয়ার কথা, শুধু গাইনোকোলজিস্ট না, এটা একটা টিমওয়ার্ক। আমরা গাইনোকোলজিস্টটা দেখব তার প্রেগন্যান্সির সাইটটা এবং সুগার কন্ট্রোল করছে কিনা।যখন সুগার কন্ট্রোল হয়ে যাবে যখন ইনসুলিন দিতে হবে তখন এন্ড্রোলজিস্ট একটা মতামত থাকা খুবই জরুরি। এই পার্টটা তিনি আরো ভালো এডজাস্ট করতে পারবেন। এবং একজন ডায়েটিশিয়ান এবং পারলে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট, এই সবকিছু মিলিয়ে, প্রয়োজন হলে যদি দীর্ঘমেয়াদী ডায়াবেটিস হয় তাহলে তার চোখটা চেক করে দেখা, এটা কিন্তু একটা চোখের ডাক্তারও লাগতে পারে। তাহলে এ প্রেগনেন্সি ডায়াবেটিসের অন্যান্য সব চেকআপের মত ডায়াবেটিসের চেকআপ করতে হবে। আর অফুরন্ত তাকে বাসায় রেগুলার সপ্তাহে কমপক্ষে ২ থেকে ৪ দিন সুগার পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে সুগার টার্গেট লেভেলে আছে কিনা।
১০০টার মধ্যে যদি ৯০টা টার্গেট লেভেল এর মধ্যে থেকে যায় তাহলে তেমন বড় কোনো সমস্যা নয়, টেন পার্সেন্টের বেশি যদি টার্গেট লেভেল এর উপরে সুগার থাকে অর্থাৎ খালি পেটে ৫.১ এবং খাবার খাবারের পরে যদি ৭ এর উপরে যদি যায়, তাহলে অবশ্যই এটা টার্গেট লেভেলে নাই। দশটার মধ্যে দুইটা ভ্যালু যদি এর মধ্যে যায় তাহলে তাকে কিন্তু আবার এডজাস্ট করতে হবে।
সে নিজে নিজে ইনসুলিন এডজাস্ট করতে পারবে অথবা যদি এমন হয় যে সে নিজে নিজে এডজাস্ট করতে গিয়ে ডায়াবেটিস আরো বেড়ে যাচ্ছে টেন ইউনিটের বেশি থাকে এডজাস্ট করতে হয়েছে। তখন কিন্তু তাকে আরেকবার ডাক্তারের পরামর্শে আসতে হবে। আর শেষের দিকে গিয়ে তাকে ক্লোজ মনিটরিং লাগবে। আল্ট্রাসনোগ্রাম লাগবে, বাচ্চার মুভমেন্টকে ভালো করে খেয়াল করতে হবে। এবং কোন রকম জটিলতা মনে হলে তাকে অবশ্যই হাসপাতালে ইমারজেন্সি হক রয়েছে রুটিন চেকআপ হোক তাকে রিপোর্ট করতে হবে। জরুরি অবস্থায় থাকে বাসায় বসে থাকা যাবে না, যদি এ কাজগুলো সে করতে পারে তাহলে তার এন্টিনেটাল চেকআপ সুন্দর হবে। আর সে নিজে নিজে বুঝে নিজের কারনে সুগার কন্ট্রোল রাখতে পারবে।
পুরো অনুষ্ঠানটি দেখতে নিচে ক্লিক করুন