হবু মায়ের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না হলে যত ঝুঁকি, জেনে নিন করণীয়

ডা. তাবাসসুম পারভীন, সহযোগী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
2020-08-19 16:48:34
হবু মায়ের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না হলে যত ঝুঁকি, জেনে নিন করণীয়

বর্তমান যুগে আমরা যে ফ্রি কনসেপশোনাল কাউন্সেলিংয়ের কথা বলা হচ্ছে। আগে আমরা জানতাম যে, প্রেগনেন্সি হবে তারপরে সে ডাক্তারের কাছে আসবেন, এখন বলছে যে না আগে থেকেই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

একটা ডিআইপি মায়ের ক্ষেত্রে ফ্রি কাউন্সেলিংয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ সারা বিশ্বেই এখন প্রাক-গর্ভকালীন কাউন্সিলিং বা প্রি প্রেগনেন্সি কাউন্সেলিং যেটাই আমরা বলি না কেন অতি প্রচলিত একটা জিনিস। বাইরের দেশগুলোতে, উন্নত দেশগুলোতে এগুলো ছাড়া ওরা প্রেগনেন্সির কথা চিন্তাই করতে পারে না। কিছুটা নতুন হতে পারে আমাদের কনসেপ্টে কিন্তু আমাদের দেশেও এটা মোটামুটি প্রচলিত।

আমরা যখন ফিটা মেটারনাল মেডিসিন বা হাইরিকস প্রেগনেন্সি নিয়ে কাজ করছি, এটার ওপরে আমরা অনেক কাজ করছি এবং সেটার সুফলও আমরা পাচ্ছি।

এবার আসি ডায়াবেটিসের কথায়, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস যদি থেকে থাকে, গর্ভকালীন সময় অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস নিয়ে যদি একটা মা থাকেন এর যে কেবলমাত্র স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি শুধু মায়ের তা কিন্তু নয় এর সন্তানের কিন্তু ঝুঁকি থাকে। এর কারণে ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে প্রি প্রেগন্যান্সি কাউন্সিলিংয়ে যেটা বলেছিলাম তার গুরুত্ব অপরিসীম।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না থাকলে নবজাতকের যত ঝুঁকি

দেখা গেছে, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে, যখন একটা মেয়ে গর্ভবতী হয়, ৯ সপ্তাহের মধ্যে তার গর্ভস্থ শিশুর বেশিরভাগ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি ডেভেলপ করে যায়। এরপরে এটা সাইজে বাড়তে থাকে।

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস যদি থাকে মায়ের সুগারটা সন্তানর মধ্যে যদি যায় তাহলে এটা অত্যন্ত বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ওপরে। ফলে গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে, গর্ভে শিশুর মৃত্যু হতে পারে। যেটা খুব গুরুত্বের সাথে আমি বলতে চাই, সেটা হলে শিশুর জন্ম জন্মগত ত্রুটির হার তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যায়।

জন্মগত ত্রুটির মধ্যে রয়েছে শিশুর হৃদরোগের ঝুঁকি যেমন হার্টের ছিদ্র, হার্টের ভাল্বের ত্রুটি, রক্তনালীর ত্রুটি ইত্যাদি। এছাড়া স্নায়ুতন্ত্রের কিছু জন্মগত ত্রুটি.... যেমন ব্রেনটা ডেভেলপ করলো না, ডাউন সিনড্রোম এগুলো দেখা যায় হচ্ছে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে।

দেখা গেছে একটি টেস্টের কথা যাদের ডায়াবেটিস আছে, আশা করি তারা সবাই জানেন হিমোগ্লোবিন এ ওয়ানসি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো-গত তিন মাসে একজনের সুগার নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা সেটা বোঝার একটা টেস্ট।

এটাকে আমরা বলি ৬ এর নিচে বা ৬.৫ এর নিচে রাখতে সন্তান নেওয়ার আগে। তো যদি এটা দশের ওপরে থাকে সরাসরি আমরা নিষেধে করি সন্তান নিতে। কারণ তখন জন্মগত ত্রুটির পরিমাণ বেড়ে যায় প্রায় ২৩ শতাংশ অর্থাৎ চারটা সন্তান হলে একটা সন্তান হবে এবনরমাল।

এখন দেখুন একটা মেয়ে কিংবা একটা মা যদি প্রেগনেন্সি পিরিয়ডে না আসে, আট সপ্তাহ বা নয় সপ্তাহের মধ্যে যেহেতু প্রেগনেন্সির সবকিছু হয়ে যায়,তখন এসে কিন্তু লাভ হবে না।একটা মেয়ে যে প্রেগন্যান্ট এটা বুঝতে বুঝতে অনেক সময় দুই সপ্তাহ চলে যায়। তাই ডায়াবেটিসের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রি-প্রেগনেন্সি চেকআপে আসা।

শিশুর জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে যে চিকিৎসা দেয়া হয়

আমি কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিতে চাই এই সময়ের জন্য প্রেগনেন্সি অবস্থায় অবশ্যই আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন, ফলিক অ্যাসিড নামে একটা ম্যাজিকাল ড্রাগ আছে খুবই সস্তা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা ৫ মিলিগ্রাম করে খেলে জন্মগত ত্রুটির পরিমাণ অনেক কমে যেতে পারে এবং যেটা বলেছি হিমোগ্লোবিন A1C এর মাত্রা ৬.৫ এর নিচে নিয়ে আসতে হবে।

তার মানে হল- আপনার সুগারের লেভেলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আপনি বাসায় টেস্ট করে করে দেখে নেবেন আপনার সুগার নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা। প্রি প্রেগনেন্সি পিরিয়ডে আমরা চাই বাসি পেটে এটা ৪.৫ থেকে ৫.৫ এর মধ্যে থাকবে আর খাওয়ার পরে ৫-৬ এর মাঝে থাকবে।

ওষুধ সেবনের আগে সাবধান হোন

এ কারণে আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে আর একটা কথা বলতে চাই কিছু কিছু ডায়াবেটিসের ঔষধ আমাদের মায়েরা খেয়ে থাকেন, উচ্চ রক্তচাপের জন্য হতে পারে আবার এ ডায়াবেটিসের জন্য হতে পারে।

এগুলো প্রেগনেন্সির জন্য নিরাপদ নাও হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ওষুধগুলো পরিবর্তন করে যেগুলো নিরাপদ সে গুলোকে শুরু করে দিতে হবে। তাহলে এটা মোটামুটি , আপনাকে একদম প্রিপেয়ার করবে।

একজন ডক্টর যখন আপনাকে বলবে আপনি এখন ফিট আছেন সন্তান নেওয়ার জন্য তখনই আপনি সন্তানর জন্য চেষ্টা করবেন তাতে আপনি যেমন সুস্থ থাকবেন এবং আপনার সুস্থ সন্তানও আমরা আশা করতে পারি।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবু মায়েদের করণীয়

আর এসব ডায়াবেটিসের রোগীদের অন্যান্য রোগ কিন্তু লেগেই থাকে, যেমন উচ্চ রক্তচাপ। এরকমটা যদি হয়ে থাকে তবে রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এখানে উপরের রক্তচাপ ১৩০ এবং নিচের রক্তচাপ ৮০ নিচে নিয়ে আসতে হবে।

আপনার ওজন যদি বেশি থাকে সেটাকে আপনার নিয়ন্ত্রনে আনতে হবে, প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট করে হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। আর যেটা বলছিলাম মায়ের ও কিছু ঝুঁকি আছে, কারণ ডায়াবেটিস এমন একটা রোগ এটা পা থেকে মাথা পর্যন্ত এফেক্ট করে। বিশেষ করে চোখ, হৃদপিণ্ড এবং কিডনি ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা এটা দেখে নেয়াটা খুব জরুরি।

⇒পুরো অনুষ্ঠানটি দেখতে নিচে ক্লিক করুন


আরও দেখুন: