গর্ভকালে যাদের ডায়াবেটিস ঝুঁকি বেশি
ডায়াবেটিসের সঙ্গে প্রায় সবাই পরিচিত। কিন্তু প্রেগনেন্সি বা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ে আমাদের মাঝে অনেক শংকা, অনেক অজানা তথ্য রয়ে গেছে। এ বিষয়ে ডক্টর টিভির স্বাস্থ্য সমাধান অনুষ্ঠানে কথা বলেছেন দেশের দুজন স্বনামধন্য চিকিৎসক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিকোম্যাকানাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তাবাসসুম পারভীন ও স্কয়ার হসপিটালের সিনিয়র কনসালটেন্ট স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ডা. নার্গিস ফাতেমা।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডা. তানিয়ার রহমান মিতুল
ডক্টর টিভি: ডা. তাবাসসুম ম্যাডামের কাছে প্রশ্ন- এই যে আমরা বলছি গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস মেডিকেলের ভাষায় আমরা যাকে বলছি জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস মেলিটাস। এই যে রোগটা প্রেগনেন্সিতে হচ্ছে এ জিনিসটা কী? এটা যদি দর্শকদের উদ্দেশে সহজ করে বলে দিতেন।
ডা. তাবাসসুম পারভীন: ডায়াবেটিসের সাথে আমরা সবাই পরিচিত, সবাই জানি। ডায়াবেটিস মানে হচ্ছে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। তার মানে কী? তার মানে হচ্ছে আমাদের রক্তে সুগারের একটা স্বাভাবিক মাত্রা আছে।এই সুগার আসলে অনেকটা ওই রকম, যেমন বন্ধু তুমি, শত্রু তুমি।
বন্ধু কখন?
-যখন এটা স্বাভাবিক থাকছে।
কেন?
-কারণ শর্করা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।এটা আমাদের শরীরে শক্তি যোগায়, আমরা যে দৈনন্দিন কাজকর্ম করছি, এটার ধারায় তা পরিচালিত হয়। আর শত্রু হয়ে যাচ্ছে যখন এটা বেশি হয়।
তাহলে আমরা কিভাবে ডায়াবেটিস বলবো।একটা টেস্ট আছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) রিকুমেন্ট করে দিয়েছে, সেটা হল বাসি পেটে একবার টেস্ট করতে হবে এবং গ্লুকোজ খেয়ে দু'ঘণ্টা পর আবার টেস্ট করতে হবে। গ্লুকোজের পরিমাণ হলো ৭৫ গ্রাম।এখন গর্ভকালীন অবস্থায় গ্লুকোজের স্বাভাবিক মাত্রা আমাদের জানতে হবে। যদি আমরা বুঝতে চাই, প্রেগন্যান্সিতে ডায়াবেটিস কী?
বাসি পেটে যদি এটা ৫.১ এর উপরে থাকে, গ্লুকোজ খাওয়ার দু'ঘণ্টা পরে এটা যদি 8.৫ এর নিচে থাকে তাহলে এটা নরমাল। এর বেশি হয়ে গেলে এটাকে আমরা ডায়াবেটিস বলছি।
একটা স্বাভাবিক প্রশ্ন আসতে পারে যে, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস মানে হচ্ছে গর্ভাবস্থায় হয়েছে আবার চলে যাবে। হ্যাঁ, কিছুটা এটা সত্য কথা।
তবে গ্লুকোজের মাত্রা নির্ভর করে প্রেগনেন্সি ডায়াবেটিসকে আমরা দু ভাগে ভাগ করেছি। একটা হল জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস অল্পমাত্রায় ডায়াবেটিস, আরেকটু বেশি মাত্রার ডায়াবেটিসকে আমরা বলছি ডায়াবেটিস এম প্রেগনেন্সি।
বাসি পেটে যদি এটা ৭ এর উপরে চলে যায় আর গ্লুকোজ খাওয়ার পরে যদি এটা ১১.২ বা তার উপরে চলে যায় তখন এটাকে আমরা বলি ডায়াবেটিস ইম প্রেগনেন্সি।এই যে দুটো ভাগ করলাম, এটার কিন্তু একটা গুরুত্ব আছে। কারণ হলো যেটাকে আমরা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস বলছি, সাধারণত যখন ডেলিভারি হয়ে যায় তখন এটা নরমাল হয়ে যায়। কিন্তু ডিআইপি বা ডায়াবেটিস ইম প্রেগন্যান্সি এমন হতে পারে যেটা আগে থেকেই ছিল প্রেগনেন্সিতে এসে প্রথম ধরা পরল, আরেকটা হতে পারে যে, না প্রেগনেন্সিতে অনেক বেশি মাত্রার হলো। সাধারণত ডেলিভারির পর এই ডায়াবেটিস ঠিক হয়ে যায়।কাজেই এই যে দুটো ডায়াবেটিসের কথা বললাম, জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস এবং ডিআইপি ডায়াবেটিস ইম প্রেগন্যান্সি মাত্রার ওপর ভাগ করে, এই দুটি ডায়াবেটিসকে আমরা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলে থাকি।
এটার মাত্রা সম্প্রতি বলা হয়েছে, ছয়টা শিশুর মধ্যে একজনের এটা হতে পারে। সাধারণভাবে বলা হয় যে দশ পার্সেন্ট রোগীদের এটা প্রেগনেন্সিতে দেখা যায়। কাজে কত ফ্রিকোয়েন্ট এটার ইনসিডেন্স সেটা আমাদের বুঝতে হবে, মানে এটা খুব কমন একটা সমস্যা প্রেগনেন্সির জন্য।
ডক্টর টিভি: অনেক ধন্যবাদ ম্যাডাম। আমরা শুনলাম যে প্রেগন্যান্সিতে ডায়াবেটিস , ডিআইপি, জে ডি এম অনেক কঠিন কঠিন শব্দ।তো ম্যাডাম জানতে চাই এখানে কী এমন আছে যে এদের বেশি হবে বা এদের কম হবে? কাদের বেশি হবে আমরা যদি সেটা জানতে পারি তাহলে তারা বেশি সতর্ক থাকতে পারবে। আর কাদের ঝুঁকি বেশি হতে পারে?
ডা. নার্গিস ফাতেমা: আমরা দেখছি মায়ের হচ্ছে ডায়াবেটিস কিন্তু বাচ্চাও সাফার করছে।এখন আমরা দুই ধরনের রিস্ক ফ্যাক্টর পাচ্ছি, কিছুটা ইতিহাস কিছুটা বর্তমান অবস্থা, যেসব মহিলার প্রেগনেন্সি ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি তাদের পরিবারের ডায়াবেটিস রয়েছে, রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়-স্বজনের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের ঝুঁকি বেশি।এছাড়া তাদের যদি নিজের আগের প্রেগনেন্সিতে ডায়াবেটিস হয়,নিজের যদি তার ওজন বেশি থাকে অথবা তার অনেক বড় মাপের বাচ্চা হয়েছে এ ধরনের ইতিহাস থাকে, সাধারণত ৪ কেজি বা তার চেয়ে বেশি মাপের বাচ্চা হয়েছে অথবা বাচ্চা ডেলিভারি হতে গিয়ে ডিফিকাল্টি ওয়ে বাচ্চা মারা গেছে অথবা পেটে বাচ্চা মারা গেছে যার কারণ হয়তো জানা ছিল না এরা সবাই হয়তো কোনো না কোনোভাবে প্রেগনেন্সি ডায়াবেটিসের সাথে জড়িত থাকতে পারে। এরা সবাই রিস্ক ফ্যাক্টর আর তাছাড়া তাছাড়া পুরনো ইতিহাস আগেরবার ডায়াবেটিস ছিল এটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস।
আর লাইফস্টাইল যদি কারোর সেকেন্ডারি লাইফস্টাইল হয়, শারীরিক পরিশ্রমের কাজ কম হয় তাদের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি কমন ঝুঁকি প্রেগনেন্সিতে ডায়াবেটিস হওয়ার। যাদের হাই ব্লাড প্রেসার থাকে তাদেরও এই ঝুঁকি থাকে।
ডক্টর টিভি: আমরা জেনে গেলাম যে কিছু কারণ থাকে, যেটা আগের প্রেগনেন্সিতে থাকতে পারে। বাচ্চার কথা জানলাম, যাদের হাই ব্লাড প্রেসার থাকে তাদেরও এটা হওয়ার চান্স রয়েছে। তারা আশা করছি সচেতন হবেন বরং সচেতন হয়ে ভালো থাকবেন।
পুরো অনুষ্ঠানটি দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন