মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা ও সমাজসেবামূলক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মেডিসিন ক্লাব
Doctor TV
2024-07-13 16:44:00
-
মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা ও সমাজসেবামূলক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মেডিসিন ক্লাব। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এটি ধর্ম ও রাজনীতি নিরপেক্ষ সংগঠন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যথা, বন্যা, শীত ও ঝড়-জলোচ্ছাসে ক্ষতিগ্রস্ত ও দরিদ্র অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়ে আসছে মেডিসিন ক্লাব। করোনা মহামারীর সময় টেলিমেডিসিন সেবা দিয়েছে সংগঠনটি। এক কথায় সদস্যদের মানবিক চিকিৎসক হওয়ার দীক্ষা দিয়ে থাকে মেডিসিন ক্লাব।
সংগঠনের মূলমন্ত্র- ‘নিজে শিখুন, অন্যকে শেখান, এবং মানবতার সেবায় এই শিক্ষার চরমতম ব্যবহার নিশ্চিত করুন’। ১৯৮১ সালের ৩১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মেধাবী তরুণদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা লাভ করে মেডিসিন ক্লাব।
সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে,
ক. চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে দুঃস্থ ও মানবতার সেবায় জেনেভা ঘোষণা কর্মজীবনে সর্বোতভাবে মেনে চলার জন্য উদ্বুদ্ধকরণ।
খ. চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে নিম্নলিখিতভাবে সহায়তা করে থাকে মেডিসিন ক্লাব।
১. সেমিনার, ২. সিম্পোজিয়াম, ৩. ক্লিনিক্যাল ডিসকাশন, ৪. গ্রুপ ডিসকাশন, ৫. ক্লিনিক্যাল মিটিং, ৬. চিত্র প্রদর্শনী, ৭. শিক্ষা ভ্রমণ, ৮. প্রদর্শনী, ৯. প্রতিযোগিতা, ১০. লাইব্রেরী/ওয়ার্কশপ অন্যান্য।
গ. ড্রাগ ব্যাংক স্থাপন এবং এর মাধ্যমে বিনামূল্যে দুঃস্থ ও দরিদ্র পীড়িত রোগীদের মাঝে ওষুধ বিতরণ।
ঘ. নিরাপদ রক্ত সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও রোগীর দেহে পরিসঞ্চালন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকল্পে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণীত আইন মেনে চলে ব্লাড ব্যাংক স্থাপন ও এর মাধ্যমে রক্তদান, রক্ত সংগ্রহ এবং বিনামূল্যে দুঃস্থ ও আর্তপীড়িতের মাঝে বিতরণ।
ঙ. থ্যালাসেমিয়া প্রজেক্টের মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের নিয়ে বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনা করা।
চ. টিকাদান কর্মসূচি এবং এর মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টি করা।
ছ. হাসপাতাল পরিসংখ্যাান প্রণয়ন
জ. পোস্টার, লিফলেট, ম্যাগাজিন, হ্যান্ডবিল, স্টিাকার মুদ্রন, প্রচার, বন্টন ও চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন। ভ্রাম্যমান চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবক দল গঠনের মাধ্যমে জনসাধারণকে রক্ত, কিডনী ও কর্ণিয়া দানে উদ্বুদ্ধ করা।
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শিক্ষা ও আনুষঙ্গিক স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাণ্ডে সহায়তা দান।
ঝ. রাষ্ট্র প্রণীত আইন মেনে কিডনী ব্যাংক স্থাপন ও এবং এর মাধ্যমে মরণোত্তর কিডনী দান, সংগ্রহ ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর ও বিতরণ।
ঞ. মেডিসিন ক্লাব রাষ্ট্রের পরিপন্থী কোন কর্মকাণ্ডে পরিচালিত হবে না।
ট. রাষ্ট্র প্রণীত আইন মেনে আই ব্যাংক স্থাপন এবং এর মাধ্যমে মরণোত্তর কর্ণিয়া দান, সংগ্রহ ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর ও বিতরণ।
ঠ. ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যে আন্তরিক ও হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক নিশ্চিত করা।
ড. সম্ভাব্য ক্ষেত্রসমূহে দরিদ্র ও দুঃস্থরোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা।
ঢ. প্রাকৃতিক দুর্যোগগ্রস্থ এলাকায় চিকিৎসক ও স্বেচ্ছঅসেবক দল প্রেরণের মা্ধ্যমে সেবাদান। রাষ্ট্রীয় ত্রাণ কার্যক্রমে প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ।
ণ. দুঃস্থ মানবতার জন্য কাপড়, নগদ অর্থ সংগ্রহ ও বিতরণ করা।
ত. মেডিসিন ক্লাব ইউনিটগুলোর জন্য পাঠাগার গড়ে তোলা।
থ. সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করা।
উপরে উল্লিখিত কার্যক্রম ছাড়াও সংগঠনের পরিপন্থী নয় এমন যেকোন কাজ করতে পারবে।
সংগঠনের সেন্ট্রাল জেনারেল সেক্রেটারি ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের কৃতি শিক্ষার্থী রিদওয়ান হোসেন ডক্টর টিভিকে বলেন, সাধ্যমত সব ধরনের মানবিক কাজে অংশ নেওয়া এবং মানুষের উপকার করাই মেডিসিন ক্লাবের কাজ। বর্তমানে দেশের ৩৩টি মেডিকেল কলেজে এই ক্লাব আছে। সংগঠন পরিচালনায় এর সদস্যরা মাসিক চাঁদা দিয়ে থাকেন এবং ইউনিটসমূহ বাৎসরিক ইউনিট ফি দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া সংগঠনের উপদেষ্টা ও শুভাকাঙ্খিদের কাছ থেকেও সহায়তা পেয়ে থাকেন মেডিসিন ক্লাব।
তিনি বলেন, রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, রক্তদান, ভ্যাকসিনেশন...আমরা এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় চিকিৎসা-সহায়তা দেওয়া, ত্রাণ বিতরণ, শীতে শীতবস্ত্র বিতরণ- এসব কাজেও আমরা আছি।
সদস্যদের পড়ালেখার মান বাড়াতে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ক্লিনিক্যাল ডিসকাশন, গ্রুপ ডিসকাশন, ক্লিনিক্যাল মিটিং করা হয়ে থাকে। প্রি ক্লিনিকাল ও ক্লিনিকাল সেশনগুলোর মাধ্যমে সদস্য শিক্ষার্থীরা নানাভাবে উপকৃত হয়ে থাকেন বলে জানান সংগঠনের সেন্ট্রাল জেনারেল সেক্রেটারি রিদওয়ান হোসেন।
মেডিসিন ক্লাবের কেন্দ্রীয় সভাপতি রুবাইয়াত জাহান ইমন ডক্টর টিভিকে বলেন, মেডিকেলে পড়াশুনার প্রচুর চাপ থাকে। পড়াশুনার এই একঘেঁয়েমি দূর করতে ক্লাবের কর্মসূচিগুলো অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে মেডিসিন ক্লাব আয়োজিত কর্মসূচিগুলো একজন মেডিকেল শিক্ষার্থীর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং লাভজনক হতে পারে। নিয়মিত কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার মাধ্যমে তারা নিজের স্কিল ডেভেলপমেন্ট করতে পারেন।
তাঁরমতে,ক্লাবের মাধ্যমে লিডারশীপ বৃদ্ধি ও কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপমেন্ট তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও মেডিসিন ক্লাবের প্রি ক্লিনিকাল ও ক্লিনিকাল সেশনগুলো পড়াশুনা সহজকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া নিয়মিত রক্তদান কর্মসূচির মাধ্যমে শত শত মানুষের জীবন বাঁচাতে এবং দুর্যোগকালীন জরুরী মূহুর্তগুলোতে সাহায্যের মাধ্যমে তাদের মুখে হাসি ফুটাতে নিয়মিত কাজ করছে এই মেডিসিন ক্লাব