পানি নেই শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, রোগিদের ভোগান্তি চরমে
শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
দক্ষিণবঙ্গের সেরা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি গভীর নলকূপ সম্প্রতি বিকল হয়ে পড়েছে। এ কারণে হাসপাতালটিতে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা–কর্মচারী এবং রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা দুর্ভোগে পড়েছেন।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, এখানে পানি সরবরাহের জন্য নলকূপ আছে দুটি। এগুলোর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে গণপূর্ত বিভাগ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সিটি করপোরেশনের সরবরাহ লাইন থেকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানি দেওয়া হয়। কিন্তু বেশ দূর থেকে পাইপ দিয়ে পানি আনায় ট্যাপে পানির গতি ছিল কম।
হাসপাতালের পানি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী সেলিম তালুকদার বলেন, ১৯৬৮ সালে হাসপাতালে পানি সরবরাহের জন্য দুটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু ওই নলকূপ দুটির একটি থেকে সম্প্রতি লবণাক্ত ও ঘোলা পানি উঠছে। নলকূপটি মেরামতের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। গত রোববার রাত থেকে এই সংকট তৈরি হওয়ার পর গতকাল দুপুর পর্যন্ত পানির সরবরাহ অপ্রতুল ছিল। এখন নতুন নলকূপ স্থাপন করে পানির সরবরাহ স্বাভাবিক করতে হবে। এ জন্য শিগগিরই পানির সংকট দূর হওয়ার সম্ভাবনা কম।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, এক হাজার শয্যার হাসপাতাল হলেও এখানে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার রোগী থাকেন। এ ছাড়া প্রতি রোগীর সঙ্গে গড়ে তিন স্বজন, চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলিয়ে ৮ থেকে ১০ হাজার লোক থাকেন। কিন্তু এখানে পানি সরবরাহক্ষমতা আছে ৩০০ শয্যার।
গতকাল দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন রোগীর চাপ কম। তবু গতকাল মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১৬৪। এ ছাড়া প্রতি শিফটে হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারী আছেন পাঁচ শতাধিক। রোগীর স্বজনেরা প্লাস্টিকের বোতল, কনটেইনার দিয়ে বাইরের নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করছেন।
তৃতীয় তলার সার্জারি ওয়ার্ডের রোগী রফিকুল ইসলাম বলেন, গত রোববার রাতে পানি সরবরাহ বন্ধ হওয়ার পর রোগীদের মধ্যে হুলুস্থুল শুরু হয়। খাওয়ার পানি ও শৌচাগারে পানি না থাকায় দূরদূরান্ত থেকে পানি সংগ্রহ করেন অনেকে। আবার অনেকে বোতলজাত পানি কিনে কোনো রকমে প্রয়োজন মেটান। সোমবার কিছু সময়ের জন্য পানি দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। ফলে শৌচাগার থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তিনতলা থেকে নেমে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এটা খুবই কষ্টকর।
গাইনি ওয়ার্ডের এক রোগীর স্বজন রুনা লায়লা বলেন, ওয়ার্ডে এখন দুর্গন্ধে টেকা দায়। শৌচাগারে পানিসংকটের কারণে গোসল ও অন্যান্য কাজ ব্যাহত হচ্ছে। দুর্ভোগের কথা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।
হাসপাতালের পরিচালক মো. বাকির হোসেন পানিসংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, হাসপাতালে জরুরি মুহূর্তে পানি সরবরাহের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় সংকট তৈরি হয়েছে। নতুন একটি নলকূপ স্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। কবে নাগাদ এটা পাওয়া যাবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। হাসপাতালে যে রোগীর চাপ, তাতে অন্তত চারটি নলকূপ প্রয়োজন।