পাবনা মেডিকেলে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অব্যাহত
ঘোষিত ৮টি দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আজও (রোববার, ২৩ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন পাবনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা
ঘোষিত ৮টি দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আজও (রোববার, ২৩ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন পাবনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এদিকে, চলমান সংকট নিরসনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য শিক্ষকদের নিয়ে কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. উবায়দুল্লাহ ইবনে আলী। রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় ডক্টর টিভিকে এ তথ্য জানান তিনি।
উল্লেখ্য, দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা সুশৃঙ্খলভাবে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বাজেট ঘাটতির অযুহাতে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের জন্য ভাড়া করা বাস বন্ধ রেখেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে মূল ক্যাম্পাস থেকে ক্লিনিক্যাল ক্লাস করতে নিজেদের টাকায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে যাতায়াত করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। নিজস্ব পরিবহন না থাকায় তাদের নিয়মিত ক্লাস করতে বেশ সমস্যা হচ্ছে। সময়মত তারা হাসপাতালে যেতে পারছেন না। বার বার বলার পরেও কোন পদক্ষেপ নেননি কলেজ কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে আরও রয়েছে- হোস্টেল ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদার, ক্যাম্পাসের দৃষ্টিনন্দন মূল ফটক নির্মান, কলেজের সম্মুখের ভাঙা সড়ক দ্রুত সংস্কার করা, ক্যাম্পাসের মধ্যে অবাধে গবাদী পশু বিচরণ বন্ধ, ছাত্র হোস্টেলের ভেতরে জলাবদ্ধতা দূর করা, ছাত্রী হোস্টেলের আশপাশে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ, হোস্টেলগুলোতে নিয়মিত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান, হোস্টেলের ক্যান্টিনে ভর্তুকি প্রদান ও শিক্ষার্থীদের খেলার জন্য স্থায়ী মাঠের ব্যবস্থা করা।
দাবি প্রসঙ্গে পাবনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. উবায়দুল্লাহ-ইবনে আলী জানান, এই কলেজের সমস্ত কাজ গণপূর্ত বিভাগ করে থাকেন। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে গণপূর্তের সাথে অনেকবার কথা হয়েছে। বর্তমানে তাদের বাজেট সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছে গণপূর্ত।
তিনি আরও জানান, পাবনা মেডিকেল কলেজের নিজস্ব কোন বাস নেই। এই মুহূর্তে নিজস্ব গাড়ি কেনার অনুমতিও নেই। চলমান সংকট দূর করতে গাড়ি ভাড়ার জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। অচিরেই এ সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
অধ্যক্ষ বলেন, ছেলেদের হোস্টেলের সামনে জলাবদ্ধতা দূর করতে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মেয়েদের হোস্টেলের পাশে বাইরের ছেলে-মেয়েরা এসে টিকটক বানায়, শিক্ষার্থীদের টিজ করে। এ সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট থানার সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। হোস্টেলের সীমানা প্রচীর নির্মাণ করা হলে এ সমস্যা আর থাকবে না।
শিক্ষার্থীরা বিদ্যুৎ বিভ্রাট দূর করার দাবি জানিয়েছেন। এটা সমাধানের ক্ষমতা কলেজ প্রশাসনের হাতে নেই। বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়লে- লোডশেডিং থাকবে না বলে জানান অধ্যক্ষ।
হোস্টেল ক্যান্টিনে ভর্তুকির দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা তো আদৌ সম্ভব না। কারণ, শিক্ষার্থীদের খাওয়ানোর জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ কোথা থেকে টাকা পাবেন? সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোন বাজেট পাওয়া যায় না।
স্থায়ী খেলার মাঠের দাবি প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ বলেন, এটা আপাতত: সম্ভব নয়। কারণ মেডিকেল কলেজের নিজস্ব হাসপাতাল তৈরির প্রচেষ্টা চলমান আছে। হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলেই খেলার জন্য স্থায়ী মাঠের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে।
বাস্তবতা মেনে শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে আন্দোলন তুলে নেয়ার আহ্বান জানান অধ্যক্ষ ডা. মো. উবায়দুল্লাহ-ইবনে আলী। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য শনিবার কয়েকজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামীকাল সোমবার (২৪ জুলাই) যথা সময়ে নতুন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশান ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নবীন শিক্ষার্থীদের এই আয়োজনে কোন বাধা না দেয়ার আশ্বাস পেয়েছেন অধ্যক্ষ।