চিকিৎসককে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়
ডা. মো. তরিকুল হাসান
রোগী চেয়ারে বসতেই কলম প্যাডের কাছে নিয়ে প্রশ্ন করলাম, বাবা আপনার নাম?
রোগী গর্জে উঠলো, খবরদার কিছু লেখবেন না! আমার কাগজপত্র দেখে নেন। আমি অনেক বড় ডাক্তার দেখাই। আপনার কাছে আসছি, আপনি শুধু আমারে বুঝাইয়া বলেন আমার কি রোগ হইছে!
পাশ থেকে তার স্ত্রী যোগ করলেন, সোজা বাংলায় বুঝাইয়া বলেন।
আমি কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেলাম। হতভম্ব ভাব কাটতেই রাগ না এসে কিছুটা মজাই লাগলো। দেখি উনাদের কেসটা কি?
কাউন্সেলিং এ একসময় বেশ দক্ষতা ছিল আমার। ইন্টার্নির সময় কার্ডিওলজি ওয়ার্ডে একবার বহু ধরনের ইনজেকশন প্রয়োগের পরও রোগী ঘুমাচ্ছিল না। রোগীর লোক আধা ঘণ্টা পর পর এসে অভিযোগ করছিল। শেষমেশ অন্যপথ ধরলাম। রোগীর কাছে গিয়ে বললাম,
আপনি শুধু আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। আপনি খুব ক্লান্ত। অবসাদে আপনার শরীর ভেঙে পড়ছে! আপনার চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে, আপনি ঘুমিয়ে পড়ছেন...
দেখতে দেখতে রোগী নাক ডেকে ঘুমিয়ে পড়লো। রোগীর লোকজন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো, এ কি ডাক্তার নাকি কবিরাজ!
সেই দক্ষতার তেমন কিছু অবশিষ্ট না থাকলেও ভাবলাম, দেখি চ্যালেঞ্জ নিয়ে।
যেকোন পাবলিক সার্ভিস যারা করেন, অর্থাৎ যারা সব ধরনের লোকজন নিয়ে কাজ করেন; তাদের বহুধরনের অবস্থায় পড়তে হয়। যেমন ধরুন, একজন ব্যাংকের কর্মকর্তা হয়তো একটু আগে এমন কোন অবস্থায় পড়েছিলেন যা অত্যন্ত কষ্টকর। এর পরপরই আপনি তার কাছে সেবা নিতে গিয়েছেন। সেই পূর্ব অভিজ্ঞতার খানিকটা রাগ আপনার উপর পড়া অস্বাভাবিক নয়। কেননা তারাও রক্তমাংসের মানুষ!
একজন বাসের কন্ডাক্টর হয়তো একটু আগেই একজনের সাথে ভাড়া নিয়ে তর্কাতর্কি করেছেন। তাই তার কিছুটা আঁচ আপনার উপরও পড়তে পারে!
একজন চিকিৎসককে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। তাই তাকে বোঝার চেষ্টা করুন। করোনার বিপদে প্রণোদনা বা ছুটি কিছুই না পেলেও তারা সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছেন। আপনারাও তাদের পাশে থাকুন।
রোগী-চিকিৎসক হাতে হাত রেখে পাশে থাকলেই দেশে একটি সুন্দর চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে উঠবে, ইনশাআল্লাহ।