বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তিতে অনিয়ম বন্ধে অটোমেশন পদ্ধতি চালু
বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তিতে অনিয়ম বন্ধে অটোমেশন পদ্ধতি চালু
দেশের বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি অনিয়ম বন্ধে চালু হলো অটোমেশন পদ্ধতি। নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়া হবে সফটওয়্যারে। ফলে অনিয়ম ও অর্থের বিনিময়ে অমেধাবীদের ভর্তির সুযোগ বন্ধ হবে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, এবার এমবিবিএস ভর্তিতে পাস নম্বর ৪০ হলেই হবে না, মেধাক্রমে থাকতে হবে ৩০ হাজারের মধ্যে। সূত্র : ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, অনিয়ম বন্ধে বিভিন্ন সেক্টরে নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন সরকার। আমাদের দেশে দুই ধরনের মেডিকেল শিক্ষা আছে- এর একটি আন্ডারগ্র্যাজুয়েট, অন্যটি পোস্টগ্র্যাজুয়েট।
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল শিক্ষা হয়ে থাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিসিপিএস এর মাধ্যমে। বিসিপিএস একটি এক্সামিনি বডি। ট্রেইনিং বা হাসপাতাল সুবিধা নাই। অন্য হাসপাতালে থেকে কাজ করতে হয়, এক্সামিনি বডি হিসেবে থাকে বিসিপিএস।
মেডিকেলের এমডি-এমএস ডিগ্রি হয়ে থাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালযের সরাসরি তত্ত্বাবধানে।
বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য বলেন, দেশে আরও ৪টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। সেইগুলোর অধীনে বেশকিছু মেডিকেল কলেজ আছে- সরকারি, বেসরকারি। ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বেশকিছু সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে।
আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ের এই সব মেডিকেল কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে বিএমডিসি। আইনে বলা আছে, বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এই দেশে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা করবে। সেই সুবাদে বিএমডিসি এবং ডিরেক্টর জেনারেল মেডিকেল এডুকেশন (ডিজেএমই) একত্রে একটা টিম করে সরকারের পক্ষ থেকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ডিজি অফিস এবং বিএমডিসি একত্রে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির বেলায়- শিক্ষার্থীরা কত মার্কস পেয়েছে সেটা আগে দেখা হতো না। এতদিন ভর্তি পরীক্ষায় পাস করলেই টাকা দিয়ে ভর্তি হতে পারতো। এককথায়, টাকা থাকলেই বেসরকারি মেডিকেলে আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে ভর্তি হওয়ার সুযোগ ছিল। এ কারণে বিএমডিসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে একত্রে বসে ঠিক করা হলো- ভর্তি পরীক্ষায় ৪০ নম্বরের কম পেলে কেউই বেসরকারি মেডিকেল কলেজেও ভর্তি হতে পারবে না। কারণ, কেউ ৭০ এর নিচে পেলে সরকারি কোন মেডিকেলেই ভর্তি হতে পারে না। পরবর্তী পর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত এসেছে, শুধু ৪০ নম্বর পেলেই হবে না। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১১ হাজার শিক্ষার্থী মেডিকেলে ভর্তি হতে পারে। ভর্তি পরীক্ষায় পাসকৃত শিক্ষার্থীদের আসনের পাঁচগুণ রেখে বেসরকারিতে ভর্তির সুযোগ রাখা হবে। শুধু টাকা থাকলেই বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি হতে পারবে- এমনটা নয়। টাকার পাশাপাশি মেধাও থাকতে হবে। এতে যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হলে প্রাপ্ত মার্কস ৫০/৫৫ পর্যন্ত নামতে পারে। ৪০ পর্যন্ত হয়তো আর নামবে না।
সরকারের এই নতুন নির্দেশনা বা আইনটি অত্যন্ত সময়োপযোগী বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন। তিনি বলেন, এর চেয়ে ভাল আইন আর হতে পারে না।
তিনি আরও জানান, বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির স্বচ্ছতা আনতে আর একটা কাজ করেছে সরকার। সেটা হলো অটোমেশন পদ্ধতি। ভর্তি ফরমে পছন্দের মেডিকেলের ৭০টি অপশান তাকে পূরণ করতে হবে। মেধাক্রম ও কলেজ বাছাই এর ক্রমানুরে ভর্তির সুযোগ দেয়া হবে। অটামেশনের মাধ্যমে, একইসাথে মেধাক্রম ও অপশানকে মেইটেইন করা হবে। যিনি ৭০টি অপশান পূরণ করবেন না- তাঁর আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। সুতরাং সরকারের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী- বেসরকারি মেডিকেলে পড়তে এখন মেধা এবং টাকা দুটোই লাগবে।
বেসরকারিতে ৫ ভাগ মেধাকোটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অটোমেশন পদ্ধতি কার্যকর হলে সরকারের কন্ট্রোল আসবে বেসরকারি মেডিকেলে। সুতরাং অতীতে এ বিষয়ে এলোমেলো করার সুযোগ থাকলেও- এখন আর তার কোন সুযোগ থাকছে না।
তিনি বলেন, প্রতিটি বেসরকারি মেডিকেলের নিজস্ব ম্যানেজিং কমিটি আছে। তারা ভর্তির যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষার্থী সিলেকশান করবেন, এরপর সরকার সেটা যাচাই-বাছাই করে দেখবেন। এভাবে মেধাবী কোটা সংরক্ষণ সম্ভব হবে। অটোমেশন কার্যকর হলে অনিয়ম বন্ধ করা সহজ হবে। ফলে অযোগ্য কেউই আর মেডিকেলে ভর্তি হতে পারবে না।
উল্লেখ্য, এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা ১০ মার্চ। ৩৭টি সরকারি মেডিকেলে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি। আর ৭২টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবেন ৬ হাজার ১৬৮ জন।
গত বছর মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ৩৯ হাজার শিক্ষার্থী । ৪০ নম্বর পেয়ে পাস করে ৭৯ হাজারেরও বেশি। যেখানে মোট আসন ১০ হাজার ৫১৮টি।