চামড়ার রং ফর্সাকরণে ক্যান্সারের ঝুঁকি কতটা?

ডা. রুবাইয়া আলী
2020-10-25 05:18:41
চামড়ার রং ফর্সাকরণে ক্যান্সারের ঝুঁকি কতটা?

ডা. জাহানারা খান ঝুমু

কথায় বলে 'প্রথমে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী'। আর এই কারণেই সবাই নিজেকে একটু সুন্দর করে দেখাতে চাই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখানকার মানুষের সৌন্দর্যের প্রতি একটু আকর্ষণ বেশি কাজ করে। তাই অনেককে রং ফর্সাকারী ক্রিমও ব্যবহার করতে দেখা যায়। এতে অনেক সময় ক্যান্সারের মতো রোগ হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। এবিষয়ে ডক্টর টিভিতে কথা বলেছেন বিশিষ্ট অ্যাস্থেটিক ডার্মাটোলজিস্ট ডা. জাহানারা খান ঝুমু।  সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডা. রুবাইয়া আলী

ডক্টর টিভি: আমাদের দেশে অনেক রোগী আছে যারা স্কিন হোয়াইটিনিং (চামড়ার রং ফর্সাকরণ) এর কথা বলে। একদিকে তারা স্কিন হোয়াইট করতে চাচ্ছে কিন্তু আরেকদিকে তারা আশঙ্কা করছে স্কিনে ক্যান্সার হওয়ার।  এটা নিয়ে কিছু বলুন। 

ডা. জাহানারা খান ঝুমু: প্রকৃতপক্ষে স্কিন হোয়াইট করা কখনই পসিবল না। আল্লাহ আমাকে যে ন্যাচারাল রংটা দিয়েছে, মেলানোসাইটস, পিগমেন্টগুলো দিয়েছে। এগুলো যে আমাদের জন্য কত উপকারি এটা আমাদের অনুধাবন করা উচিত।  হোয়াইটরা কেন ব্রাউন হতে চায়, কারণ ওরা জানে, ওদের কোন সান ড্যামেজ হলে ওদের ফোসকা পড়ে যায়, ঘা হয়ে যায়, ক্যান্সার হয়ে যায়।  আমাদের সেগুলো হয় না।

আমরা যদি এই মেলানোসাইটকে নষ্ট করতে থাকি তাহলে অচিরেই কিন্তু আমাদেরও এই সমস্যা হবে। আমাদের দেশে স্কিন ক্যান্সার খুবই কম। তবে আল্লাহ আমাদের যেটা দিয়েছে সেটা আমাদের অনুধাবন করা উচিত। আমাদের ন্যাচারালি সুন্দর একটা রং দিয়েছে। আমাদের দেশে ৭০% মেয়ে কিন্তু শ্যাম বর্ণের। শ্যাম বর্ণের কোন মেয়ে জন্ম নিলে প্রথমেই পরিবার থেকে বলা হবে আমাদের মেয়েটা কালো, তারপর পাশের বাড়ি থেকে বলবে- ও তো কালো, ওকে কেমনে বিয়ে দিবেন।

এই সব ধরনের যে স্টিগমা শুরু হয়, মেয়েটার ওপরে যে মানসিক টর্চার চলতে থাকে, যার কারণে ওর ন্যাচারাল সৌন্দর্যটা দেখাই যায় না।  ম্যাক্সিমাম শ্যাম বর্ণের বাংলাদেশের মেয়েকে অসুস্থ, অসুখী এবং ভীষণ ডিপ্রেশনে দেখায়।  এই রং ঢাকতে গিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের ক্রিম ব্যবহার করে যার জন্য তারা চিন্তা করে না এই ক্রিমগুলোর সাইড ইফেক্ট কী হতে পারে।  এই যে ক্যান্সারের কথা বলা হয়, ওই যে ১০০ টাকার ক্রিমটা মাখল এতে ক্ষতিটা কিন্তু হতে থাকলো।

আমরা দেহে ব্রাইটনিং ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইউজ করি।  গ্লুটাথাইনটা ব্রাইটিং এজেন্ট হিসেবে খুবই ভালো।  এন্টি অক্সিডেন্ট এটা ডিটক্স করে বলে ভেতর থেকে কিন্তু ব্রাইটেনিং চলে আসে।  তার প্রত্যেকটার সেল পরিষ্কার হতে থাকে।

ডক্টর টিভি: এন্টি অক্সিডেন্স কথাটাকে যদি একটু ব্যাখ্যা করুন। 

ডা. জাহানারা খান ঝুমু: অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর একটা জিনিস। উই নিড অক্সিজেন নট অক্সিডেন্স। এখনো হচ্ছে টক্সিন, আমাদের শরীরে হেভি মেটাল জমে, আমরা বিভিন্ন রকম পলিউশন ফ্রি, রেডিকেলস জমছে এগুলোকে এলিমিনেট করার জন্য কিন্তু আমরা লুটাথন দেই। মানে লুটাথনের কাজ কিন্তু মেলানোসাইট নষ্ট করে না, এটা ডিটক্সিফাইং।

আমার ভেতর থেকে যে এনার্জিটা আসবে, আমার চোখ উজ্জ্বল হয়ে যাবে, স্কিন উজ্জ্বল হয়ে যাবে, সেজন্য আমাকে ব্রাইট আর সুন্দর লাগবে। আমি হাসতে পারবো আমার মন ভালো হয়ে যাবে। বাংলা ভিডিওতে অনেক সময় দেখে থাকব একটা চেহারা সাদা হয়ে গেল। প্রকৃতপক্ষে ওখানে কার্বন পার্টিকেল দেয়া হয় ফেইসে, এমনকি সুইচ সেই কার্বন পার্টিকেল তাকে এবজর্ভ করে।

ইন্সট্যান্টলি দেখা যায় কালো থেকে সাদা হয়ে গেল এটা নিয়ে মানুষের অনেক প্রশ্ন থাকে। আসলে ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়, বাট আমাদের স্কিনে যে ইম্পিরিটিস আছে সেটাকে সে নিয়ে নিতে পারে। এটা ভেরি সাইন্টিফিক। দেখা যায় স্কিন সুন্দর হচ্ছে, দিস ইজ গ্লুটাথায়ান। গ্লুটাথায়ানে আমরা ভিটামিন সি ইউজ করি।

আমরা সবাই জানি ভিটামিন সি একটা পাওয়ারফুল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। আমরা একটা গ্লুটাথায়ন দেই এটাতে কোলাইজেন থাকে, স্টেম সেল থাকে, ইটস রেইলি গুড ফর ইনার হেলথ। এটাতে আরো ইমিউনিটি বাড়ছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ছে। এটার জন্য ক্যান্সার হওয়ার কোন ভয় নেই।

বেশি বেশি করে ভিটামিন সি খেতে হবে, বেশি বেশি করে ফলমূল শাকসবজি খেতে হবে। বাহির থেকে সানব্লক দেয়ার সাথে সাথে আপনার ভিটামিন-সি ভিতর থেকে সানব্লকের কাজ করবে।

[ অনুলিখন- আমিনুল ইসলাম]

→ সাক্ষাৎকার গ্রহণ অনুষ্ঠানের পুরো ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন


আরও দেখুন: