মেডিকেল পার্সনদের মধ্যে আত্মহত্যার হার কেন এতো বেশি
চিকিৎসা শিক্ষার্থী ও তরুণ চিকিৎসকদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা আশঙ্কাজনক (ইনসেটে ডা. মারুফ রায়হান খান)
বৃহস্পতিবার রাতে মাহি যাত্রাবাড়ীর ভাড়া বাসায় আসে। এরপর কাউকে কিছু না বলে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে রাখে। পরে দীর্ঘক্ষণ পেরিয়ে গেলেও তার কোনো সাড়া না পেয়ে প্রতিবেশীদের সহায়তায় রুমের দরজা ভেঙে মাহিকে কাপড় শুকানোর রশি গলায় পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। নিহত মহিবুল ইসলাম মাহি শাহবাগের ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
চিকিৎসা শিক্ষার্থী ও তরুণ চিকিৎসকদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা আশঙ্কাজনক। কিছুদিন পরপরই আমরা এমন সংবাদ পাচ্ছি। কেন তাদের মধ্যে এতো আত্মহত্যা প্রবণতা এ বিষয়ে গভীর পর্যালোচনা প্রয়োজন। আত্মহত্যার পেছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দায়ী থাকে মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার।
মাহির আত্মহত্যার বিষয়ে কথা হচ্ছিল একজন অভিজ্ঞ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের সাথে (নন মেডিকেল)। তিনি দীর্ঘদিন মেডিকেল স্টুডেন্ট ও ডক্টরদের নিয়ে কাজ করেছেন। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এই প্রফেশনের মানুষদের মধ্যে কেন এতো বেশি আত্মহত্যার হার।
ক. ওয়ার্কলোড
খ. কলিগদের/ক্লাসমেটদের সাথে সম্পর্ক
গ. টিচারদের আচরণ
ঘ. ফ্যামিলি মেম্বার বা পার্টনারের সাথে অ্যাডজাস্টমেন্ট ইস্যু
ঙ. প্রি-মরবিড ভালনারিবিলিটি
চ. পিয়ার প্রেশার
ছ. ক্যারিয়ারে সব সময় ট্র্যাকে থাকতে না পারা
জ. কম্পিটিটিভ এক্সামগুলোতে আশানুরূপ রেজাল্ট না পাওয়া
ঝ. প্রেগন্যান্সি বা পোস্ট প্রেগন্যান্সির সময়কালীন ইস্যু
তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অবজারভেশন :
মেডিকেল স্টুডেন্টদের অধিকাংশই পড়াশোনায় সিরিয়াস হওয়ায় সোশ্যালাইজ করা বা ফ্যামিলি-ফ্রেন্ড সার্কেলে টাইম স্পেন্ড করা বা লাইফের অন্যান্য অ্যাসপেক্টে তেমন ইনভেস্ট না করায় একদিকে তাদের জীবনে বৈচিত্র্য কম, অন্যদিকে অ্যাডজাস্টমেন্ট অ্যাবিলিটি তুলনামূলক কম। আবার নিজের প্রফেশনের প্রতি যে ধরনের প্রত্যাশা নিজের ও অন্যদের থাকে তা ফুলফিল করতে না পারাও একটা দীর্ঘস্থায়ী হতাশা বা লো সেফ-এস্টিমের জন্ম দেয় মনে হয়। আরো দুটো ব্যাপার হলো, ডক্টর-পেশেন্ট রিলেশনশিপ এবং কোনো ক্রিটিক্যাল কেস রিলেটেড ইন্সিডেন্ট থেকে মানসিক ভাবে রিকভার না করা। যেটা পরবর্তীতে পারফরম্যান্সকে এফেক্ট করে বা প্রোডাক্টিভিটি কমিয়ে দেয়।
ডা. মারুফ রায়হান খান
পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসক, হৃদরোগ বিভাগ
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।