প্রথম আলোর প্রতিবেদন এবং প্রাসঙ্গিক কথা
রোগীর কথা শুনছেন চিকিৎসক (ইনসেটে ডা.মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম)
প্রথম আলোর চমকপ্রদ প্রতিবেদন। আগ্রহ নিয়ে পড়লাম এবং হতাশ হলাম। এত ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকবে তা ধারণা করতে পারিনি।
১. ক্লিনিক্যাল বিষয়ে যাঁরা কোর্সে যান, তাঁরা চিকিৎসা সেবা দেওয়ার বাইরে নন। এদের শেখার প্রক্রিয়া হলো Learning by doing. এরা সকালে রোগী দেখার পাশাপাশি বিকালে ও রাতে রোস্টার ডিউটি করেন। হাসপাতালে তাঁদের সার্ভিস গুরুত্বপূর্ণ। স্নাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষার জন্য ওএসডি সাড়ে চার হাজার। এদেরকে যদি চিকিৎসা সেবার বাইরে ধরা হয়, তাহলেও এমন চিকিৎসক মোট পদের ২১% হয় না, ১৩% হয়।
২. মোট ওএসডি সাড়ে সাত হাজার। শিক্ষার জন্য সাড়ে চার হাজার। বাকি তিন হাজার কোথায় আছেন তা প্রতিবেদক এড়িয়ে গেছেন। এরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংযুক্ত থেকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। এসব হাসপাতালে পর্যাপ্ত পদ তৈরি হয়নি। তাই সংযুক্ত চিকিৎসক প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে রাজধানী শহরের হাসপাতাল আছে, আছে মফস্বলের নতুন প্রতিষ্ঠিত মেডিক্যাল কলেজ, আছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কেন এরা ওএসডি সে প্রশ্ন অসংগত, বরং পর্যাপ্ত পদ তৈরি হচ্ছে না কেন সে প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ।
৩. কয়েক মাস উপজেলায় থেকে ওএসডি হওয়ার সুযোগ নেই। ওএসডি হওয়ার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। উপজেলায় চাকরি ২ বছর (দুর্গম এলাকায় চাকরি অথবা Basic Medical Subjects এ পড়ার জন্য ১ বছর) না হলে শিক্ষার জন্য ওএসডি হওয়ার সুযোগ নেই। কেউ যদি নিয়ম লংঘন করে থাকে তার জন্য সবাইকে দোষারোপ করা অন্যায়।
৪. প্রেষণ নীতিমালা অনুযায়ী এক ডিগ্রি পাস করার তিন বছরের মধ্যে পরবর্তী ডিগ্রির জন্য ওএসডি হওয়ার সুযোগ নেই। কেউ যদি কিছু দিনের মধ্যে পরবর্তী ডিগ্রির জন্য ওএসডি হয়, সেটা নিয়মের লংঘন। অনুসন্ধান করে বের করুন এমন কতটা ঘটনা আছে এবং কারা এজন্য দায়ী।
৫. মানুষকে বিশেষায়িত স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের প্রয়োজন। এটা জনস্বার্থ, ব্যক্তি স্বার্থ নয়। একমাত্র বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে যথাযথ সেবা দেওয়ার জন্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রয়োজন; যা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ, দীর্ঘমেয়াদী এবং কষ্ট সাধ্য। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অপ্রয়োজনীয় এমন সব সেক্টরে ওএসডি ১০%। এ হিসাবের সাথে স্বাস্থ্য সেক্টরকে মিলানো হাস্যকর। এখানে দেখতে হবে কোন বিষয়ে কতজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের প্রয়োজন এবং তা ঠিকমতো হচ্ছে কিনা।
৬. প্রতি বছর স্নাতকোত্তর কোর্সে ভর্তি হওয়া এবং কোর্স শেষ করা চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় সমান। কোর্স শেষ করে চিকিৎসক বাধ্যতামূলকভাবে ডিউটি পোস্টে যোগদান করেন, ওএসডি থাকেন না। কাজেই ওএসডি হওয়া সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের কারণ নয়।
পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। স্নাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষার নীতিমালায় হয়তো পরিবর্তন প্রয়োজন আছে। কিন্তু পরিবর্তন যদি বাস্তবতার আলোকে না হয়ে আবেগ নির্ভর হয়; তাহলে সমস্যা বাড়বে, কমবে না।
লেখকঃ
ডা. মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক, পেডিয়াট্রিক্স বিভাগ,
আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নোয়াখালী।
আরও পড়ুনঃ ওএসডি চিকিৎসকও হাসপাতালে সেবা দেন