মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবার পূর্বে শতবার ভাবুন
মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবার পূর্বে শতবার ভাবুন (ইনসেটে ডা. রতীন্দ্র নাথ মন্ডল)
একজন ৩০ বছর বয়সের রোগী ৫ দিন থেকে জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এখন এই রোগীর চিকিৎসা কি হবে? শুধু জ্বর কমানোর ঔষধ যেমনঃ প্যারাসিটামল দেয়া, গা মোছানো করলেই কি এই রোগী ভালো হয়ে যাবে? অথবা একটা এন্টিবায়োটিক দিলেই কি এই রোগী সুস্থ হয়ে যাবে?
উত্তরঃ কখনোই না। কেউ বাই চান্স সুস্থ হয়ে যেতে পারে। প্রকৃতপক্ষে এই রোগীর জ্বরের যে কারণ, সেই কারণের চিকিৎসা দিতে হবে।
এখন দেখি ৫ দিনের জ্বর হলে কি কি কারন হতে পারে?
১) Seasonal ভাইরাল ফিভার
২) ডেঙ্গু
৩) করোনা
৪) প্রসাবে ইনফেকশন
৫) টনসিলের ইনফেকশন
৬) শ্বাসনালীর ইনফেকশন
৭) নিউমোনিয়া
৮) যক্ষ্মা
৯) কিডনিতে ইনফেকশন
১০) ম্যালেরিয়া
১১) ব্লাড ক্যান্সার
১২) ব্রেনে ইনফেকশন
এতগুলো সম্ভবনা থেকে একটি কারণ বের করা কি খুব সহজ? এগুলোর জন্য রোগীর ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা করা দরকার। এবং রোগীর রক্ত, প্রসাব, এক্সরে, আল্ট্রা পরীক্ষা ইত্যাদি জ্বরের কারণ বের করতে প্রধান ভূমিকা পালন করে।
জ্বরের কারণ বের করার পর চিকিৎসা। কিন্তু এই চিকিৎসা কিছুদিন পর পর পরিবর্তন হয়। যেমনঃ পূর্বে যে এন্টিবায়োটিক দিয়ে নিউমোনিয়ার চিকিৎসা করা হত, সেগুলো এখন কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে, এই পরিবর্তন না জানলে সঠিক, যুগোপযোগী চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হয় না। তাই একজন ডাক্তারকে শুধু পাস করার জন্য নয়, মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত রেগুলার পড়াশোনা করতে হয়।
এজন্যই সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে পরিশ্রমী ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের মেডিকেল কলেজে পড়ার জন্য মনোনীত করা হয়।
আমার মেয়েকে ছোট থেকেই অনেকে জিজ্ঞাসা করতো- বড় হয়ে কি হতে চাও। ও উত্তর দিতো- উদ্যোগতা, কখনো বিউটিশিয়ান, কখন পুলিশ অফিসার, কখনো ব্যবসায়ী। বোঝার মত বয়স হবার পর ভুল করেও সে একবার বলে নাই যে সে ডাক্তার হতে চায়। অনেকেই দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসা করে কেন তুমি কি ডাক্তার হতে চাও না? ওর উত্তরঃ আমি আমার জীবনটা পড়তে পড়তে শেষ করে ফেলতে চাই না।
একথা বলার পিছনে ওর যুক্তি হলো- ও আমাদের এখনো পড়তে দেখে। আমি ও ওর মা প্রতিদিন পড়ি। বিশেষজ্ঞ হবার এক যুগ পার হয়েছে, কিন্তু এখনো মনে হয় কিছুই জানি না। সব নতুন নতুন মনে হয়। প্রতিনিয়ত বইগুলো চেন্জ হচ্ছে, চিকিৎসার পদ্ধতি, ঔষধ পরিবর্তন হচ্ছে, যারা সব সময় পড়তে পারবে, এমবিবিএস পাস করার পর বিশেষজ্ঞ হবার লেখাপড়া করতে পারবে, বার বার ফেল করেও নতুন উদ্যোগে পড়াশোনা করবে, বিশেষজ্ঞ হয়েও নিয়মিত পড়াশোনা করতে পারবে- তাদেরই মেডিকেল কলেজে পড়ার ইচ্ছা পোষণ করা উচিত। কারণ একজন মানুষের একটি সমস্যার অসংখ্য কারণ থাকতে পারে, সে কারণ খুঁজে বের করে মান সম্মত, আধুনিক চিকিৎসা দেয়া খুব সহজ কোন কাজ নয়।
লেখকঃ
ডা. রতীন্দ্র নাথ মন্ডল
সহযোগী অধ্যাপক
মেডিসিন বিভাগ
প্রাইম মেডিকেল কলেজ
প্রতিষ্ঠাতা- ডাক্তারখানা (জিপি সেন্টার)