মানসিক রোগ নিয়ে অসচেতনতা এবং 'হকিস্টিক' ও 'বেলনের' গল্প
মানসিক রোগ নিয়ে অসচেতনতা এবং 'হকিস্টিক' ও 'বেলনের' গল্প (ইনসেটে ডা. সাঈদ এনাম)
আমেরিকার হলিউডের বক্স অফিস হিট কিছু কিছু ছবির মুল পটভূমিতে রয়েছে মানসিক রোগ নিয়ে সচেতনতা তৈরি। যেমন 'এ বিউটিফুল মাইন্ড' ছবিটির কথাই ধরুন। এখানে দেখানো হয় একজন অসাধারণ মেধাবীর হঠাৎ ঘোরতর মানসিক রোগ 'সিজোফ্রেনিয়া' আক্রান্ত হওয়া। তারপর সে রোগী তার অসুস্থতাকে জয় করে কিভাবে নোবেল পুরস্কার পান সেই কাহিনী।
আবার ভারতের বলিউডের কিছু কিছু ছবির পটভূমিতে রয়েছে মানসিক রোগ। যেমন অটিজম নিয়ে একটি ছবি রিলিজ হয়েছিলো বেশ আগে। আমির খান ছিলেন ঐ ছবিতে।
আমাদের দেশে মানসিক রোগের পটভূমি নিয়ে কোন গল্প সিনেমা আছে বলে শুনিনি।
আমাদের সিনেমাতে মানসিক রোগ নিয়ে বড় জোর আছে, ভিলেন নায়ককে মাথায় 'হকিস্টিক' দিয়ে একটি বাড়ি দেয়, এতে তার স্মৃতি হারিয়ে যায়। আর সে সুযোগে ভিলেন নায়িকাকে তুলে গিয়ে নিজের আস্তানায় কয়েকদিন 'জব্দ' করে রাখে।
ভিলেনের 'জব্দখানা' থেকে নায়িকা, 'ওরে ওই শয়তান, তুই আমার মন পাবি কিন্তু দেহ পাবিনা', কিংবা 'দেহ পাবি তুই কিন্তু মন পাবি না' এরকম 'ইমোশনাল ব্ল্যাম মেলিং ডায়লগ' দিয়ে হয়তো ছলে-বলে-কৌশলে পালিয়ে আসে।
কিন্তু এসে বাঁধে বিপত্তি। নায়ক তার অতীত স্মৃতি হারিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করছে। নায়িকাকে দেখে 'আম্মাগো' বা 'খালাম্মাগো' দুটো টাকা দেন ভাত খামু, বলে হাতে পায়ে ধরছে।
মনের দুখে নায়িকা তখন বনে জঙ্গলে 'দরবেশ' বাবাকে খুঁজতে যায়। হয়তো দরবেশ বাবা ফুঁ দিলে নায়কের স্মৃতি ফিরে আসবে। কিন্তু ব্যার্থ, 'দরবেশ' বাবার ফুঁ-এ কোন কাজ করেনা। বরং দরবেশ বাবায় নায়িকাকেই কেনো যেনো ফুঁ দিতে চায়।
সেই দুঃখে নায়িকা হাতে একটা 'বেলন' নেয় (পাউরুটি বানানোর বেলুন) । সেটা দিয়ে সজোরে নায়কের মাথায় আবার একটা বাড়ি দেয়।
"অয়াপনারা জানলে অবাক হবেন", বেলনের বাড়ি খেয়ে নায়ক তার হারানো স্মৃতি পূনরায় ফিরে পায়। আর দর্শক তখন মনের আনন্দে আত্মহারা হয়ে হাততালি দেয় আর একে অপরের গায়ে পড়ে লুটোপুটি খায়।
যেমন সিনেমা তেমন দর্শক, একেবারে সোনায় সোহাগা।
এ দেশে মানসিক রোগ নিয়ে অসেচতনতা আর কুসংস্কার বিস্তারে এসব সিনেমায় নায়ক নায়িকার এই 'হকিস্টিক' আর 'বেলনের' বাড়াবাড়ি খুব একটা কম দায়ী নয়।
জানিনা এই 'বাড়া-বাড়ি', 'হাততালি' আর 'লুটোপুটি' কতকাল চলবে!
লেখকঃ
ডা. সাঈদ এনাম
এমবিবিএস (ডিএমসি,কে-৫২) এম ফিল (সাইকিয়াট্রি)
সহকারী অধ্যাপক, সিলেট মেডিকেল কলেজ।