সন্তানের সামনে কখনই স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া নয়
সন্তানের সামনে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া (ইনসেটে ডা. রতীন্দ্র নাথ মণ্ডল)
আজকে অত্যন্ত intelligent , mature এবং unfortunate একটা ছোট্ট মেয়েকে দেখলাম। মেয়েটির বয়স মাত্র ১০ বছর। আমার কাছে আসছেন মাথা ব্যথার জন্য। দুই বছর ধরে মাথা ব্যথা। আমার কাছে আসার আগে একজন চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ এবং একজন নিউরোলিজিস্ট দেখিয়েছেন। নিউরোলজিস্ট সঠিক রোগ নির্ণয় করেছেন- মানসিক চাপের জন্য মাথা ব্যথা হচ্ছে (Tension type headache) এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়েছেন।
কিন্তু ওর কোন উন্নতি হচ্ছে না, সে জন্যই আমার কাছে এসেছেন। আমি মেয়েটির সাথে কথা বলছি আর অবাক হচ্ছি, এত সুন্দর স্মার্ট একটা মেয়ে, খুব মিষ্টি দেখতে, হেঁসে হেঁসে আমার সাথে কথা বলছে।
আমি রোগ সম্পর্কে কিছু কথা বলার পর শিউর হলাম তার রোগ নির্ণয় সঠিক হয়েছে, কিন্তু মাত্র ১০ বছরের একটি বাচ্চার কি নিয়ে এতটা মানসিক চাপ হতে পারে?
আমি বিভিন্নভাবে তার সাথে কথা বলছি তার রোগের কারন বের করার জন্য। ও ক্লাস ফোরে পড়ে। কি ভালো লাগে জিজ্ঞাসা করায় বলল- ঘুরতে ভালো লাগে। এরপর আমি জানতে চাইলাম- ওর জীবনের সবচেয়ে ভালো স্মৃতি কোনটি, সে উত্তর দিল। এরপর জিজ্ঞাসা করলাম- এমন কোন স্মৃতি আছে কি যেটা ভাবলে ওর খারাপ লাগে বা ওকে খুব কষ্ট দেয়। সে হেঁসে হেঁসে উত্তর দিল, একন কোন স্মৃতি নেই।
আরো অনেক কথা হলো ওর সাথে- ওর একটি ভাই আছে ওর চেয়ে বড়। বাবা চাকুরী করত অবসরে গেছেন, মা গৃহিণী। বাবা ও মা এর কেউ ওর সাথে আসেন নাই, ওর খালা ওকে নিয়ে আসছেন।
মেয়েটির আরো কিছু সমস্যা আছে যেমনঃ ওর ধুলা-বালি ও ঠান্ডায় এলারজি আছে, কাশি ও মাঝেমাঝে শাস-কষ্ট হয়। এছাড়াও সে দুরের জিনিস দেখতে পায় না। ক্লাসে বসলে বোর্ডের লেখা পড়তে পারে না। আমি প্রেসক্রিপশন লেখা শেষ করে ওকে বিভিন্ন জিনিস বলছি, যেমন- এটা বড় কোন রোগ নয়, ধুলা-বালি এড়িয়ে চলবে ইত্যাদি।
এ সময় অবাক হয়ে খেলাম করলাম ও খুব আনমাইন্ডফুল হয়ে আছে, আমার কথা শুনছে না ঠিকমত। আরো অবাক হয়ে খেয়াল করলাম ও ওর সব কষ্ট চাপা দিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না।
শেষ পর্যন্ত আমি ওকে প্রেসক্রিপশন করে দিয়ে বললাম- মামনি তুমি বাইরে বসো আমি তোমার খালার সাথে একটু কথা বলি।
ওর খালাকে বললাম- আমার মনে হয় বাচ্চাটা অনেক কষ্ট পেয়েছে বা পাচ্ছে। এ কথা বলার সাথে সাথেই উনি বললেন- জি ও ছোট থেকেই অনেক কষ্ট পেয়ে বড় হচ্ছে, পারিবারিক অশান্তি দেখতে দেখতে সে এ পর্যায়ে আসছে। যাহোক, আমি উনাকে অনুরোধ করলাম-বাচ্চাটাকে বাঁচান, কোন ডাক্তার ওকে সুস্থ করতে পারবে না। ওকে সুস্থ করার একটাই উপায় ওর কষ্টগুলো দূর করা, সেটা একমাত্র ওর বাবা-মা করতে পারবে।
লেখকঃ
ডা. রতীন্দ্র নাথ মণ্ডল
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
প্রতিষ্ঠাতা- ডাক্তারখানা।