যেসব গর্ভবতীর জন্য আইসিইউ প্রস্তুত রাখা উচিত
ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতীর জন্য আইসিইউ প্রস্তুত রাখা উচিত (ইনসেটে ডা. কামরুজ্জামান নাবিল)
সেদিন বারডেমে সন্ধ্যা পার হয়েছে, গাইনি এন্ড অবস ওয়ার্ডে ইভিনিং ডিউটি শেষ হয়ে এবার রুমে ফেরার ইচ্ছা।
আমাদের সি'এ কে নিজের ফলোআপে থাকা এক রোগীর আপডেট জানাতে গিয়ে দেখলাম ওনার সাথে একজন কথা বলছেন। ওনার স্ত্রী কিছুক্ষণ আগে Preterm Prelabour Rupture of Membranes (PPROM) বা নির্ধারিত সময়ের পূর্বে (৩৭ সপ্তাহ) পানি ভাঙা সমস্যা নিয়ে আমাদের বারডেমে ভর্তি হতে এসেছেন।
দেশে ট্রেনিং শুরুর পরে আমি সাধারণত চেষ্টা করি ইমার্জেন্সিতে ভর্তি হতে আসা রোগীদের যখন আমাদের ম্যাডাম বা সিনিয়র কাউন্সেলিং করেন তখন পাশে গিয়ে তাদের কাউন্সেলিং এর ভাষা এবং রোগীর প্রতিক্রিয়াগুলো অবলোকন করতে। বিভিন্ন সময়ে অনেক রোগীর অভিযোগ দেশে চিকিৎসকরা ভালোভাবে কাউন্সেলিং করেন না এই সূত্রে।
যাইহোক, ভদ্রলোক ওনার স্ত্রীকে নিয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলেন সেই বিকেলের দিকে, রোগীর অবস্থা দেখে সেখানকার চিকিৎসকরা বলেছেন, রোগীর যেকোনো মুহূর্তে আইসিইউ সাপোর্ট এবং ডেলিভারি হলে নবজাতকেরও এনআইসিইউ লাগতে পারে। তবে সেখানে এনআইসিইউ সিট খালি না থাকায় বারডেমে খালি আছে এই আশায় ওনার পরিবারের একজনের পরামর্শে আমাদের এখানে এসেছেন।
আসার পরে জানলেন বারডেমেও এনআইসিইউ খালি নেই। এ বিষয়ে আমাদের সি'এ রোগীর স্বামীকে বলছিলেন, আমরা রোগীকে ভর্তি নিয়ে চিকিৎসা দিতে রাজি আছি তবে ডেলিভারির পরে যদি রোগী এবং নবজাতকের নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন হয় তবে এই রিস্ক আপনাদের নিতে হবে। সেজন্য ভালো হয় আপনারা আশেপাশে এনআইসিইউ সিট খালি আছে এমন কোন হাসপাতালের খোঁজ নিন এবং রোগীকে সেখানে শিফট করুন।
আমাদের বারডেমে মাঝে মাঝে এমন অনেক গর্ভবতী মা আসেন যাদের গর্ভধারণের সময়টি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ এবং যেকোনো মুহূর্তে তাদের আইসিইউ এবং নবজাতকের এনআইসিইউ সাপোর্ট লাগতে পারে৷ কিন্তু আমাদের দেশে সরকারি হাসপাতালে জনসংখ্যার তুলনায় নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের স্বল্পতা থাকায় বেসরকারি হাসপাতালে রোগীরা যেতে বাধ্য হন। এরপরে কোথায় আইসিইউ সিট খালি আছে সেটা খুঁজতে খুঁজতেই অনেক সময় রোগীর অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার সৃষ্টি হয়।
এজন্য গর্ভবতী মায়েদের অভিভাবকদের আগে থেকেই ধারণা রাখা প্রয়োজন কোন গর্ভবতীরা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। এবং কাদের আইসিইউ এবং কোন নবজাতকের জন্য এনআইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন হতে পারে।
উচ্চঝুঁকি পূর্ণ গর্ভবতী এবং যাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র লাগতে পারে, যেমন অতিরিক্ত ওজনের গর্ভবতীদের, গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস শনাক্ত হওয়া মায়েদের, উচ্চ রক্তচাপ থাকা, গর্ভাবস্থার পূর্ব থেকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ রোগ আছে এমন মায়েদের, নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই ডেলিভারির অবস্থা সৃষ্টি হলে, রক্তশূন্যতা থাকা, হৃদপিণ্ডজনিত সমস্যা, ক্যান্সারে আক্রান্ত গর্ভবতী, থাইরয়েডের সমস্যা থাকা, ৩৫ বছরের অধিক বয়সীদের গর্ভাবস্থার জটিলতায়, কিডনি রোগে আক্রান্ত গর্ভবতীদের ইত্যাদি সমস্যায় থাকা৷
উপরোক্ত সমস্যাগুলো কোন গর্ভবতীর থাকলে আগে থেকেই আপনার বাসার পাশে কোন হাসপাতালে রোগীর জন্য আইসিইউ এবং নবজাতকের জন্য এনআইসিইউ সুবিধা আছে সেই তথ্য নিয়ে রাখা অনেক জরুরি যা গর্ভবতীদের সঠিক সময়ে সঠিক সেবা পেতে সাহায্য করবে।
লেখক :
ডা. কামরুজ্জামান নাবিল
ইন্টার্ন, বারডেম।
ও সাবেক শিক্ষার্থী,
ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইরান।
#বারডেম_ডায়েরি
২২/০৯/২৩