ভুতুড়ে প্রেগন্যান্সি!

ডা. ফাহমিদা মাহবুবা
2023-10-15 15:25:49
ভুতুড়ে প্রেগন্যান্সি!

চেম্বারে রোগী দেখছেন চিকিৎসক

প্রেগনেন্সি টেস্ট পজেটিভ, আল্ট্রাতে বাচ্চার থলি আছে, কিন্তু ভেতরে বাচ্চা নেই.. কি ভুতূড়ে কান্ড রে বাবা!

অনেক রোগী আবার এক ডাক্তারের কাছ থেকে আরেক ডাক্তারের কাছেও যায় আরো কনফার্ম হতে।

আমিও চেম্বারে অহরহ এমন পাই।

এক্ষেত্রে রোগীকে বিষয়টা পুরোপুরি বোঝানো বেশ কষ্টসাধ্য। কিন্তু রোগীকে বিষয়টা সম্পর্কে ধারণা না দিলেও তো চলে না। তাই অনেক ভাবেই আমরা বিষয়টা বুঝানোর চেষ্টা করি।

আমি সোজা মানুষ তাই সহজভাবে বোঝানোর চেষ্টা করি।
সবচে সহজভাবে যেভাবে বোঝাই সেটা হল-

আপনারা যে মুরগীর ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটানোর জন্য বসান, সব ডিম থেকেই কি বাচ্চা হয়?

রোগীদের উত্তর- না, সব ডিমেই হয় না। কিছু ডিম বাজা থাকে।

তখন আমি বলি- সেইম এই জিনিসটাই আপনার বেলায় হয়েছে। এই ডিমটা থেকে বাচ্চা হবে না। এজন্য আপনার প্রেগনেন্সির সব সাইন সিমটম থাকলেও এখানে কোন বাচ্চা নেই।
রোগীরা তখন বুঝে যায় পুরোপুরি।

তখন তাদের প্রশ্ন থাকে- এখন কি করতে হবে?

আমি তখন বোঝাই- যেহেতু এখান থেকে বাচ্চা হবে না, তাই এটা আপনা-আপনিই নষ্ট হয়ে যাবে। আপনার ব্লিডিং শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু পুরোপুরি ক্লিয়ার হবে কিনা সেটা বলা যায় না। তাই সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি হচ্ছে ডি এন সি করে ফেলা। ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থেকে ওষুধ দিয়েও চিকিৎসা নেয়া যায়।

রোগী তখন বিষয়টা পুরোপুরি বুঝে এবং চিকিৎসা নিতে সম্মত হয়।
এখন আসি এতক্ষন যা বললাম এটাকে মেডিকেলের ভাষায় কি বলা হয়?

এটাকে বলে- Blighted Ovum (ব্লাইটেড ওভাম)।

কেন হয় ?

প্রকৃতপক্ষে এর কোনো কারণ নাই। বলা হয়ে থাকে- ক্রোমোজমাল অস্বাভাবিকতার জন্য খারাপমানের ডিম ও শুক্রানুর তৈরী এবং জেনেটিক এর কারণ হতে পারে।

লক্ষণ -

স্বাভাবিক প্রেগনেন্সির মতোই।

প্রেগনেন্সির প্রথম লক্ষণসমূহ যেমনঃ বমিভাব/বমি, মাথা ঘুরানো, খাবারে অরুচি, ব্রেস্টে ব্যাথা অনুভব ইত্যাদি। কিন্তু যখন এম্ব্রায়োর বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় এবং হরমোন লেভেল কমে যায়, তখন হালকা পেটে ব্যাথা এবং ব্লিডিং শুরু হয়।

তাহলে ইউরিন টেস্ট করলে পজেটিভ কেন আসে?

ব্লাইটেড ওভাম সাধারণত প্রেগনেন্সির প্রথম দিকেই হয়ে থাকে। প্রেগনেন্সি টেস্ট পজেটিভ আসে কারণ HCG hormone এর নিঃস্বরণ।

ডায়াগনোসিস কিভাবে করে?

আল্ট্রাসনোগ্রাম হলো কনফার্মেটরী টেস্ট। এখানে Gestational Sac তৈরি হয় কিন্তু কোনো Fetal pole থাকেনা। সাধারণত Gestational sac এর মাপ যদি ২৫মিমি এর বেশি হয় এবং এরমধ্যে যদি ফিটাল পোল না থাকে তাহলে একে Blighted Ovum হিসাবে ডায়াগনোসড করা হয়।

** অনেক রোগী প্রেগনেন্সি টেস্ট কনফার্ম করার সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে চলে আসেন।

রোগী যদি ৫-৬ সপ্তাহে আসে তাহলে তাকে আরো ২ সপ্তাহ পরে ফলোআপ আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে হবে, কারণ ৮ সপ্তাহের মধ্যে ফিটাল পোল চলে আসে স্যাকে।

** কিন্তু যদি ৮ সপ্তাহ বা আরো পরে আসে এবং হালকা ব্লিডিং হিস্ট্রি আছে প্লাস Gestational sac এর মেজারমেন্ট 25mm এর বেশি এবং কোন fetal pole নাই তখন রোগীকে উপরের কথা গুলো বুঝিয়ে বলে চিকিৎসার উপদেশ দিয়ে দিতে হয়।

রোগীদের জিজ্ঞাসা থাকে- এই বাচ্চা তো নষ্ট হয়ে গেল। আমি আবার কবে বাচ্চা নিতে পারব?

উত্তরে বলি- ৬ মাস পর আবার চেষ্টা করবেন। তার আগ পর্যন্ত অবশ্যই জন্ম নিয়ন্ত্রনের যে কোন পদ্ধতি ব্যবহার করবেন।
আজ এ পর্যন্তই থাক। সবার বোঝার সুবিধার্থে ব্লাইটেড ওভামের আল্ট্রার ছবি কমেন্ট বক্সে দিয়ে দিলাম।

কারো কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
সবার সুস্থতা কামনা করছি।

লেখক পরিচিতিঃ


টাংগাইল জেলার ভুয়াপুর থানার নিকলা দড়িপাড়া গ্রামে জন্ম ফাহমিদা মাহবুবার। বন্যা নামেও ডাকেন কাছের মানুষেরা।


বাবা মা দুজনেই শিক্ষকতা পেশায় থাকলেও পরবর্তীতে মা সন্তানদের বেশি সময় দেবার জন্য চাকরি ছেড়ে দেন। ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত হাসি খুশি ও প্রাণবন্ত একজন মানুষ তিনি। সব ধরনের নেতিবাচক জিনিস এড়িয়ে চলার সর্বাত্নক চেষ্টা থাকে তার মাঝে।


পেশায় ডাক্তার হলেও লেখালেখিটা করেন ভালবেসে। বর্তমানে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের পাশাপাশি মেডিকেল অফিসার হিসাবে কর্মরত আছেন ইপিলিয়ন গ্রুপে।


তার প্রথম রম্য উপন্যাস ‘বিচ্ছু মেয়েটা’ প্রকাশিত হয় ২০২১ এর বই মেলায়। এছাড়াও ‘অলিখিত সুখ’, ‘লেডি ডক্টর’, ‘জ্যাম থেকে জমিদার’, ‘গহীনে দহন’, ‘ঘটনার ঘনঘটা’ নামক সুখপাঠ্য বই আছে তার ঝুলিতে। প্রকাশের অপেক্ষায় আছে বেশ কিছু পান্ডুলিপি। এছাড়াও বিভিন্ন সংকলনে তার বেশ কিছু গল্প আছে। ই-বুকে এসেছে ‘রহস্যময়ী সুন্দরী’ নামে সাইকো থ্রিলার এবং সামাজিক গল্প ‘জটিল সমীকরণ’।


তবে তার স্বাচ্ছন্দ্যের গন্ডি হল- রম্য।


ডাক্তারি এবং লেখালেখির পাশাপাশি তিনি নাম লিখিয়েছেন বিজনেসে।
উত্তরার দিয়াবাড়িতে ‘ক্রাফটস মেকার বিডি’ নামে ছোট্ট একটা হ্যান্ডি ক্রাফটসের ফ্যাক্টরি আছে তার। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে ইকো ফ্রেন্ডলি পণ্যের কোন বিকল্প নেই। এটা মাথায় রেখেই তিনি কচুরী পানা, হোগলা পাতা, জুট, গার্মেন্টসের ঝুট, ভুট্টার খোল দিয়ে তৈরি করছেন বাস্কেট, ব্যাগ, রাগ, ম্যাট সহ অনেক কিছু।


সবকিছু সামলে অবসর সময় খুব একটা পাওয়া হয় না তার। তবুও কিছুটা সময় পেলে পছন্দের কাজগুলো করতে বসে যান। বই পড়া, ড্রাইভিং, গান শোনা তার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। সবচে বেশি পছন্দ করেন দুই কন্যাকে নিয়ে লং ড্রাইভে যেতে।


স্বপ্ন দেখেন লেখালেখি নিয়ে অনেক দূর যাবার।
দুই মেয়ে নিঝুম, নির্ঝর ও স্বামী নজরুল ইসলামকে নিয়ে তার ছোট্ট ভালবাসার নীড়।


আরও দেখুন: