মানুষের জীবন যে ঠিক কতটা আনপ্রেডিক্টেবল!

ডা. ফাহমিদা মাহবুবা
2023-10-10 16:01:08
মানুষের জীবন যে ঠিক কতটা আনপ্রেডিক্টেবল!

মানুষের জীবন যে ঠিক কতটা আনপ্রেডিক্টেবল (ইনসেটে ডা. ফাহমিদা মাহবুবা)

মানুষের জীবন যে ঠিক কতটা আনপ্রেডিক্টেবল!

তবুও আমরা বড়াই করি কত কিছু নিয়ে। বিনা কারণে আরেকজনকে ছোট করার হীন প্রয়াস চালাই। কারণে অকারণে আরেকজনের পেছনে লেগে থাকি। কারো ভালো দেখলে সহ্যই করতে পারি না।

কেন রে ভাই?

কাজ না থাকলে ধর্মে কর্মে মন না দিয়ে আরেকজনের পেছনে লেগে থাকলে সবদিক দিয়েই লস।

পৃথিবীতেও সম্মান পাওয়া যায় না… এজ ওয়েল মৃত্যুর পরবর্তী জীবনও সহজ হবে না।
মনটা খুব খারাপ। একজন হাসি খুশি মানুষের ক্যান্সার ধরা পড়েছে। দিন দিন অবস্থা খারাপের দিকেই যাচ্ছে। আজ তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। দেখে আসার পর থেকে মাথার মধ্যে উপরের চিন্তাগুলো ঘুরছে।

যে মানুষটার ক্যান্সার, ওকে চিনি প্রায় সাত আট বছর ধরে। কখনো হাসিমুখ ছাড়া দেখি নাই।দেখা হলেই মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে বলতো- ম্যাডাম, কেমন আছেন?

কারো এমন হাসিমুখ দেখলে মনটা তো এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।
সেই হাসি মুখটার হাসি মিলিয়ে গেছে ….
আজ দেখতে গিয়ে সেই হাসিমুখটাই খুঁজেছিলাম.. নেই ..!
সেই মুখটাতে ভর করেছে বিষাদ .. যন্ত্রনা.. চিন্তা ..!

মুখ্য চিন্তা তার একমাত্র মেয়েকে নিয়ে। মেয়ের বয়স ১২ কি ১৪ বছর হবে। মা থেকেও নেই।
নেই বলতে দু তিন বছর আগে নিজের অফিসেই ছেলেটা ওর বৌকে চাকরি দিয়েছিলো। ওর বৌ চাকরির ৬ মাসের মাথায় ঐ অফিসেরই আরেকজনকে বিয়ে করেছে।
সেই থেকে বাচ্চাটা মা ছাড়া।

আর এখন ছেলেটা নিজে অসুস্থ। ওকে দেখাশোনারও কেউ নেই। বৃদ্ধা মা আছেন, কিন্তু উনাকে দেখতেই আরেকজন লোক লাগে।

আপাতত ছেলেটার বোন আছে পাশে। কিন্তু তিনিই বা কতদিন থাকবেন? তার নিজেরও সংসার আছে!

অর্থনৈতিক চাপ তো আছেই। ক্যান্সারের মতন রোগের সাথে লড়াই করা ভয়াবহ কঠিন … বোথ ফিজিকালি, মেন্টালি, সোসালি এবং ফিনানসিয়ালি।

তবুও মন থেকে অনেক অনেক দোয়া। আল্লাহ্ ওকে সব কিছু সহ্য করার ধৈর্য্য দিন।
আমার মায়ের ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করার সময়টা গত আটবছরেও আমার স্মৃতিতে এক আনা ম্লান হয়নি। হবেও না আজীবন!

ক্যান্সারের রোগী দেখলেই আমার মনে পড়ে সেই ভয়াবহ সময়টার কথা। যে ঝড় আমার তথা আমার পুরো পরিবারের উপর দিয়ে গিয়েছিলো।

আজকে আমার স্মৃতিতে নতুন আরেকটা দৃশ্য যোগ হলো। যেটা হয়তো আমি ভুলতে পারবো না আজীবন।

দৃশ্যটা হলো -
আমরা যখন অসুস্থ ছেলেটাকে দেখতে গেলাম .. গিয়ে দেখি ওর ছোট্ট মেয়েটা চোখে টইটম্বুর অশ্রু নিয়ে হাত পাখা দিয়ে বাবাকে বাতাস করছে!

দৃশ্যটায় কী ছিলো জানিনা। কিন্তু আমাকে প্রাণপণ চেষ্টা করতে হয়েছে নিজের অশ্রু ঠেকাতে ……..!

লেখক পরিচিতিঃ

টাংগাইল জেলার ভুয়াপুর থানার নিকলা দড়িপাড়া গ্রামে জন্ম ফাহমিদা মাহবুবার। বন্যা নামেও ডাকেন কাছের মানুষেরা।

বাবা মা দুজনেই শিক্ষকতা পেশায় থাকলেও পরবর্তীতে মা সন্তানদের বেশি সময় দেবার জন্য চাকরি ছেড়ে দেন। ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত হাসি খুশি ও প্রাণবন্ত একজন মানুষ তিনি। সব ধরনের নেতিবাচক জিনিস এড়িয়ে চলার সর্বাত্নক চেষ্টা থাকে তার মাঝে।

পেশায় ডাক্তার হলেও লেখালেখিটা করেন ভালবেসে। বর্তমানে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের পাশাপাশি মেডিকেল অফিসার হিসাবে কর্মরত আছেন ইপিলিয়ন গ্রুপে।

তার প্রথম রম্য উপন্যাস ‘বিচ্ছু মেয়েটা’ প্রকাশিত হয় ২০২১ এর বই মেলায়। এছাড়াও ‘অলিখিত সুখ’, ‘লেডি ডক্টর’, ‘জ্যাম থেকে জমিদার’, ‘গহীনে দহন’, ‘ঘটনার ঘনঘটা’ নামক সুখপাঠ্য বই আছে তার ঝুলিতে। প্রকাশের অপেক্ষায় আছে বেশ কিছু পান্ডুলিপি। এছাড়াও বিভিন্ন সংকলনে তার বেশ কিছু গল্প আছে। ই-বুকে এসেছে ‘রহস্যময়ী সুন্দরী’ নামে সাইকো থ্রিলার এবং সামাজিক গল্প ‘জটিল সমীকরণ’।

তবে তার স্বাচ্ছন্দ্যের গন্ডি হল- রম্য।

ডাক্তারি এবং লেখালেখির পাশাপাশি তিনি নাম লিখিয়েছেন বিজনেসে।
উত্তরার দিয়াবাড়িতে ‘ক্রাফটস মেকার বিডি’ নামে ছোট্ট একটা হ্যান্ডি ক্রাফটসের ফ্যাক্টরি আছে তার। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে ইকো ফ্রেন্ডলি পণ্যের কোন বিকল্প নেই। এটা মাথায় রেখেই তিনি কচুরী পানা, হোগলা পাতা, জুট, গার্মেন্টসের ঝুট, ভুট্টার খোল দিয়ে তৈরি করছেন বাস্কেট, ব্যাগ, রাগ, ম্যাট সহ অনেক কিছু।

সবকিছু সামলে অবসর সময় খুব একটা পাওয়া হয় না তার। তবুও কিছুটা সময় পেলে পছন্দের কাজগুলো করতে বসে যান। বই পড়া, ড্রাইভিং, গান শোনা তার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। সবচে বেশি পছন্দ করেন দুই কন্যাকে নিয়ে লং ড্রাইভে যেতে।

স্বপ্ন দেখেন লেখালেখি নিয়ে অনেক দূর যাবার।
দুই মেয়ে নিঝুম, নির্ঝর ও স্বামী নজরুল ইসলামকে নিয়ে তার ছোট্ট ভালবাসার নীড়।


আরও দেখুন: