একটি জীবন বাঁচানোর অসাধারণ প্রচেষ্টা
রোগীর দেহে অজ্ঞাত সাপের কামড় (ইনসেটে ডা. রতীন্দ্র নাথ মণ্ডল)
একজন ১৭ বছর বয়সী এইসএসসি পরীক্ষার্থী সকাল থেকে খুব ছটপট করছেন, উনার বাবা পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসছেন সকাল ১০ টায়। মেয়েটি গত রাতে পড়াশুনে করে খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়েছিল। কোন রকম শারীরিক সমস্যা ছিল না। অতিরিক্ত গরম তাই মেয়েটি ফ্লোরে শুয়েছিল। ঘুমানোর আগ মুহূর্তে সে একদম সুস্থ ছিল।
রোগীর বাবা চিকিৎসকদের জানালেন মেয়ের পিঠের দিকে একটা লাল দাগ রয়েছে। একটা সুস্থ মানুষ ঘুম থেকে উঠার পর হটাৎ এত অসুস্থ হবার মত রোগ খুব কম আছে।
পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা সবাই একত্রিত হয়ে রোগীটি দেখলেন। পিঠের দাগ দেখে কোনভাবেই সর্প দংশন মনে হচ্ছে না, তারপরেও পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা হিরোর মত এই রোগীকে বিষাক্ত সাপে কামড় দিয়েছে বলে ডায়াগনোসিস করলেন।
কারণ রোগী ফ্লোরে ঘুমাচ্ছিল, পিঠে একটা দাগ ছিল এবং সবচেয়ে গুরুত্তপূর্ণ হলো মেয়েটি একদম সুস্থ অবস্থায় ঘুমিয়েছিল, খুব ছটপট করছিল, চোখের পাতা খুলে রাখতে পারছিল না, ঘাড় সোজা করে ধরে রাখতে পারছিল না এবং অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছিল।
এরপর চিকিৎসক, নার্সরা মিলে গাইডলাইন মেনে প্রোফাইল্যাকটিক আড্রেনালিন দিয়ে এন্টিভেনম দেন। প্রথম ডোজ এন্টিভেনম দেয়ার পর ম্যাজিকের মত রোগীর অবস্থার বেশ উন্নতি হয়।
কিন্তু কিছু সমস্যা রয়ে যাওয়ায় আবারও ২য় ডোজ এন্টিভেনম দেয়া হয়।
এরপর রোগী আরো সুস্থ হয়। যদিও রোগীটি চোখের পাতা পুরোপুরি খুলতে অসমর্থ হয়।
পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আর এন্টিভেনম না থাকায় রোগীটিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে রোগীরকে আর কোন এন্টিভেনম দেয়া হয় না। এমনিতেই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হোন।
রোগী চট্টগ্রাম থেকে ফিরে আবারও পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফলোআপ করতে আসেন। রোগী এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।
এরকম পুরোপুরী clueless রোগীকে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা ডায়াগনোসিস করে এন্টিভেনম দিয়েছেন, রোগ নির্ণয়ে আর কয়েক ঘণ্টা দেরী হলে বা রোগীকে এন্টিভেনম দিতে দেরী হলে এই রোগীর নিশ্চিত মৃত্যু হত। এমন সাহসী এবং হিরোচিত ডায়াগনোসিস এবং ম্যানেজমেন্টের জন্য পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচএফপিও মহোদয়, মেডিসিন কনসাল্টেন্ট ডা. তানিয়া তাজরিন, ডা. ইফতেখার এবং অন্যান্য টিম মেম্বারকে টক্সিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়।
এই কেস থেকে কয়েকটি শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে
১) সর্প দংশন এর জন্য টিপিক্যাল bite মার্ক বা কামড়ের দাগ জরুরী নয়।
২) একদম সুস্থ একজন মানুষ যদি হটাৎ করে চোখের পাতা খুলতে না পারে, খাবার গিলতে না পারে, ঘাড় সোজা করে ধরে রাখতে না পারে, তবে সর্প দংশন চিন্তা করতে হবে।
৩) সর্প দংশন প্রতিরোধ করতে ফ্লোরে ঘুমানো যাবে না। মশারী টাঙ্গিয়ে ঘুমাতে হবে।
লেখকঃ
ডা. রতীন্দ্র নাথ মণ্ডল
সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন
প্রাইম মেডিকেল কলেজ