আরেকজনের প্রতি সহানুভূতি নেই কেন?
হাসপাতালের লিফটে অপেক্ষমান গুরুতর রোগী (ইনসেটে লেখক)
সিসিউতে কোনো বেড ফাঁকা নেই, থাকেও না। ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এক রোগীর লোক এসে বলছে, তার রোগীর জন্যে যেন সিসিউতে একটা বেডের ব্যবস্থা করে দিই। আমি জানালাম, দেখছেনই তো সব বেডে রোগী শুয়ে আছেন, কীভাবে ব্যবস্থা করব? উনি তাও বলছেন, দেখেন না একটু কিছু করা যায় কি না৷ আমি বললাম, তাহলে এক কাজ করি, অন্য একজনকে বেড থেকে নামিয়ে দিয়ে আপনার রোগীকে তুলতে বলি? লোকটি বেশ আনন্দিত হয়ে গেলেন। উনি বললেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ, ডাক্তার সাহেব সেটাই করেন। খুব ভালো হয়, খুব ভালো হয়।
কেন আরেকজন মানুষের প্রতি সহানুভূতি নেই?
কোনো রোগী যখন হঠাত ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশানে চলে যায়, খুব তড়িঘড়ি করে ম্যানেজ করার জন্য আমরা ছুটে যাই। হয়তো কোনো একটা ওষুধ দিচ্ছি আর অবজার্ভ করছি, মনিটর দেখছি অবস্থাটা কোন দিকে যায়। এরমধ্যেই দিব্যি আরামে শুয়ে আছে এমন রোগীর স্বজনরা এসে প্রায়ই বলেন, আমার রোগীটার হাত-পা চাবাচ্ছে একটু দেখে যান তো। একটা মানুষ মৃত্যুর মুখে সেখানে একজন ডাক্তার দাঁড়িয়ে শেষ চেষ্টাটুকু করছেন, সেখানে এরা কীভাবে এ কথাগুলো বলতে আসে ভেবে আমার খুব অবাক লাগে। দশ মিনিট পরেও তো এ সমস্যাটির কথা বলা যাবে।
কেন আরেকজন মানুষের প্রতি সহানুভূতি নেই?
রোগীর অবস্থা যখন সঙ্কটাপন্ন সে সময় ঐ ওয়ার্ডের রোগীদের স্বজন তো বটেই পাশের ওয়ার্ড থেকেও বিভিন্ন মানুষ চলে এসে গোল হয়ে রোগীর পাশে দাঁড়িয়ে যায়। প্রতিবার রোগীর কাছে যেতে শাউট করে বেডের পাশ থেকে তাদের সরাতে হয়। এতো সহজেই সরে? ডাক্তার আবার শাউট করবে কেন? ডাক্তারের তো ব্যবহার খারাপ। মিনমিন করে বলে দেখেছি কেউ সরে না। সরে তো আমাকে জায়গা দিলো কিন্তু আবার এসে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকবে। ভাবটা এমন যেন সার্কাস দেখতে এসেছে। আপনি চিন্তা করুন সেখানে আপনি কাজ করছেন, আপনার সাথে হয়তো কোনো নারী ইন্টার্ন আছেন, কোনো নার্স আছেন যারা হাঁটু ভাঁজ করে ফ্লোরে রোগীর ব্লাড প্রেশার দেখছেন, পালস দেখছেন, ইনজেকশান দিচ্ছেন আর অন্তত ৫০ জন লোক ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বিষয়টা যথেষ্ট অস্বস্তিকর না? এভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করা যায়? এই যে রোগীর কাছে যেতে এতো ভিড়ের কারণে আমার দুমিনিট সময় বেশি লাগলো, ঐ মুহূর্তে রোগীর জন্য দুটো মিনিট সময় অনেক কিছু না?
কেন আরেকজন মানুষের প্রতি সহানুভূতি নেই?
অথচ বিরাট বিরাট বুলি দিতে একেকজন সিদ্ধহস্ত।
লেখক :
ডা. মারুফ রায়হান খান
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য),
হৃদরোগ বিষয়ে ডি-কার্ড ও এফসিপিএস প্রশিক্ষণরত।