একজন ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্টের গল্প
তরুণ ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ডা. ইকবাল মাহমুদ (ইনসেটে লেখক)
হার্ট এটাক পরবর্তী প্রতিটা মিনিট গুরুত্বপূর্ণ। হার্ট এটাকের পর যতো দ্রুততার সাথে রক্তনালীতে ব্লক ছুটানো যাবে- রোগী বেঁচে যাবার সম্ভাবনা ততো বেশি। ঔষধ দিয়ে সবসময় ব্লক ছুটানো যাবেনা। প্রয়োজন হতে পারে এনজিওগ্রাম করে রক্তনালীর ব্লক ছুটিয়ে স্টেন্টিং করা যেটাকে আমরা হার্টে রিং পড়ানো বলি।
আজ একজন তরুণ ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট এর গল্প বলবো।
আমাকে আরেকবার যদি ক্যারিয়ার শুরু করার সুযোগ দেয়া হতো তাহলে আমি কী হতে চাইতাম?
ফরেইন ক্যাডার? এডমিন/পুলিশ ক্যাডার?
না।
আরেকবার ক্যারিয়ার শুরু করার সুযোগ দেয়া হলে, আমি আবারো ডাক্তারই হতে চাইতাম।
স্পেসিফিকালি বললে, Dr. Iqbal Mahmud ভাইয়ের মতো ডেডিকেটেড ক্লিনিশিয়ান হতে চাইতাম।
ইকবাল ভাই এখনো খ্যাতনামা কোনো অধ্যাপক না। বিশেষজ্ঞ হিসেবে মাত্রই ক্যারিয়ার শুরু করেছেন।
❝Morning shows the day.❞
লিওনেল মেসি বিশ্বসেরা হবে এটা তার ১৭ বছর বয়সে খেলা দেখেই বুঝা গিয়েছিলো।
যারা সেরা হবে তারা ক্যারিয়ারের শুরুতেই সেটা জানান দেয়।
আমার সব জুনিয়রদের ভালো ক্লিনিশিয়ান হবার জন্য অধ্যবসায়, ডেডিকেশন কেমন হওয়া উচিত সে উদাহরণ দিতে ইকবাল ভাইকে রেফার করি। এবং ক্যারিয়ার নিয়ে ভাইয়াকে কোট করি।
উনার কাছ থেকেই শোনা,
❝যে সাবজেক্টের উপর প্র্যাকটিস করে আজীবন চলবো, সে সাবজেক্টে চান্স পেতে প্রয়োজনে ২ বছর অপেক্ষা করবো। তাও নিজের পছন্দের সাবজেক্টে পড়বো। চান্স পাওয়া সহজ- তাই যে সাবজেক্ট পছন্দ করিনা সেটাতে ভর্তি হয়ে যাবো, এমনটা করা যাবেনা। ❞
কোন সাবজেক্টে ক্যারিয়ার করবো- আমাকে এ প্রশ্ন কেউ জিজ্ঞেস করলে আমি তাই বলি, যে সাবজেক্ট পছন্দ করো সেটাতে ভর্তি হতে চেষ্টা করো। সময় দুই বছর বেশি লাগুক।
কার্ডিওলজিতে এমডি শুরু করার আগে ইকবাল ভাই এনেসথেসিওলজিতে ট্রেইনিং করেন। কতো ক্রিটিকাল সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করেছেন, রাত জেগে জেগে ক্রিটিকাল পেশেন্ট ডিল করেছেন, কতো হাজার ক্যানুলা করেছেন- তার মুখেই শুনেছি।
এমবিবিএস পাশ করেই আমরা আর ক্যানুলা করতে চাই না। অনেকে ভালোভাবে পারিও না। নার্স ক্যানুলা করে দিবে- সে অপেক্ষায় থাকি।
ইন্টার্ন পিরিয়ডে যতো হাতের কাজ শেখার আছে তার মধ্যে ক্যানুলা করতে শেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যারা এখন ইন্টার্ন করছো বা করবে, তারা ওয়ার্ডে প্রচুর ক্যানুলা করবে। শিশু ওয়ার্ডে প্লেসমেন্ট থাকার সময় শিশুদের ক্যানুলা করা শিখবে। নিওনেট ওয়ার্ডে গিয়ে সিস্টারদের কাছে ক্যানুলা করা দেখবে এবং নিজেও করবে।
আমরা শুধু সিএ/রেজিস্ট্রার বা স্যারদের কাছে শিখি।
❝হাসপাতালের নার্স, ব্রাদার, দাদু, ওয়ার্ড বয়, ওটি বয়, টেকনিশিয়ান এদের সবার কাছেই হাতের কাজ অনেক কিছু শেখার আছে।❞
ইকবাল ভাই বলেছিলেন, ইমারজেন্সি অবস্থায় রোগীকে পজিশানিং করার সুযোগও থাকে না সবসময়। ফ্লোরেই টিউব দেয়ার মতো প্র্যাকটিস থাকতে হয়। ভেইন কলাপ্স হওয়া রোগীকে ক্যানুলা করতেও প্রচুর প্র্যাকটিস করা লাগে।
হাতের কাজ শিখলে কী লাভ?
কখন কোন জ্ঞান কী কাজে লাগে আমরা কেউ জানিনা। তবে কাজে লাগবে এটা শিউর।
হাতের কাজ শিখতে গুরুত্ব দেয়া ইকবাল ভাই এখন জটিল জটিল কার্ডিয়াক ইন্টারভেনশন করেন।
এমডি ডিগ্রি শেষ করেই এক বছরের জন্য চলে গিয়েছেন ভারতের দিল্লিতে ফর্টিস হাসপাতালে।
কার্ডিয়াক ইন্টারভেনশন শেখা এবং ইন্টারভেনশন করার জন্য ইকবাল ভাইয়ের ডেডিকেশন দেখে আমি অবাক হই। আবার অবাক হই না। তিনি একজন ম্যাজিশিয়ান। চাইলেই ম্যাজিক করা যায় না। ম্যাজিক শিখতে দিনের পর দিন হাত সাফাইয়ের অনুশীলন করতে হয়।
এই উদাহরণটাও আমি দিই। ম্যাজিক শিখতে ইকবাল ভাই অনেক পরিশ্রম করেছেন। ফিংগারের এই যে ফাইন মুভমেন্ট এবং প্রিসিশান আয়ত্তে এনেছেন, একজন ইন্টারভেনশনিস্ট এর জন্য এটাই তো বিরাট সম্পদ। কতো সূক্ষ্ম রক্তনালী দিয়ে গাইড ওয়্যার প্রবেশ করিয়ে স্ক্রীনে দেখে দেখে হার্টের নির্দিষ্ট জায়গায় স্টেন্টিং করতে হয়, ভালব মেরামত করতে হয়!
ইকবাল ভাই চট্টগ্রামেই থাকবেন বলে মনস্থির করেছেন।
আগামী দিনগুলোতে চট্টগ্রামের জরুরি কার্ডিয়াক পেশেন্টরা ইকবাল ভাইয়ের কাছ থেকে সেবা পাবেন- চট্টগ্রামে থাকা আমার অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন এর জন্য একজন স্কিলড কার্ডিওলজিস্ট পেলাম; এটা বিরাট সৌভাগ্য।
আল্লাহ উনাকে সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ হায়াত দিন।
উনার সাথে কয়েকদিন আগেও সারাদিন কাটিয়ে একটা ছবি তোলা হলো না। এতো বড় মানুষদের সামনে নিজেকে খুব ছোটো মনে হয়। এক ফ্রেমে আর হওয়া হয় না।
লেখক :
ডা. শামসুল আরেফিন
ফাউন্ডার এন্ড চিফ ইন্সট্রাক্টর, পিটুএ (P2A)।