সাবাস সোসাইটি, যাও এগিয়ে

ডা. বাহারুল আলম
2023-07-20 10:09:40
সাবাস সোসাইটি, যাও এগিয়ে

চিকিৎসক সোসাইটির আন্দোলন বিএমএ-কে অতিক্রম করে গেছে (ইনসেটে লেখক)

এই প্রথম চিকিৎসক সোসাইটির দেশব্যাপী আন্দোলন- সাবাস সোসাইটি, যাও এগিয়ে। 

* আন্দোলনের অর্থ প্রতিপক্ষের সহানুভূতি আদায় নয়, তাদের মৌলিক সিদ্ধান্ত ও চিন্তায় কঠোর কঠিন আঘাত হানা।

* চিকিৎসক সোসাইটির আন্দোলনে অবশেষে দু’জন চিকিৎসককে বিচার বিভাগ জামিন দিয়ে প্রমাণ করল– আমাদের বিচার বিভাগ এখনও তৎকালীন পাকিস্তানের আইয়ুব শাহীর আমলের বিচার বিভাগের মত। আন্দোলনের চাপে বিচারিক আইন কথা বলে। চিকিৎসক সোসাইটির আন্দোলনের মুখে আদালত যে আইনে জামিন দিয়েছে, গ্রেপ্তারের পরমুহূর্তে বিচারক সে আইনেই জামিন দিতে পারত। পারেনি কারণ রাষ্ট্র তথা সরকারের ইঙ্গিত ছিল না। চিকিৎসকদের আন্দোলনের চাপে এই ইঙ্গিত তৈরি হয়েছে।

* বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) চিকিৎসক সোসাইটির আন্দোলনে সমর্থন না দিয়ে বরং হুমকি ও বিরোধিতা করে নিজেরাই ঐতিহাসিক লজ্জাকর পরিস্থিতির জন্ম দিল।যেখান থেকেই জন্ম হোক না কেন চিকিৎসকদের যৌক্তিক আন্দোলনে বিএমএ প্রত্যক্ষ সমর্থন না দিলেও, নীরব থাকত। কখনও বিরোধিতা করেনি। কারাবন্দী দু’জন চিকিৎসককে মুক্তির আন্দোলনে বিএমএ নীরব না থেকে ডেঙ্গুর অজুহাতে বিরোধিতা করেছে।

* চিকিৎসক সোসাইটির আন্দোলন বিএমএ-কে অতিক্রম করে গেছে। যদি সোসাইটির এ নেতৃত্ব দৃঢ় ও মজবুত থাকে তাহলে বিদ্যমান ও আগামীতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চিকিৎসকদের অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা সংকটে তারা ভূমিকা রাখতে পারবে। কেবল বিএমএ-র নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তার কারণে হঠাৎ করে আন্দোলনে নেমে গ্রেপ্তার হওয়া চিকিৎসকদের জামিন পাওয়ার মধ্য দিয়ে আন্দোলন থামিয়ে দিয়ে পূর্বের ন্যায় চুপ হয়ে পদ-পদবী, পদন্নোতি ও পদ সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেদের আবদ্ধ করে ফেলে তাহলে রাষ্ট্রে রোগী– চিকিৎসকদের সংকট রয়েই যাবে।

* দুই তরুণ চিকিৎসক জামিন পাওয়ার সাথে সাথে সরকারকে কোন আল্টিমেটাম না দিয়ে কর্মসূচী প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে সোসাইটির নেতৃবৃন্দ আন্দোলনে অপরিপক্বতা ও অদূরদর্শিতার পরিচয় দিল। যে আইনে“ বিপর্যস্ত জরুরি চিকিৎসা”য় চিকিৎসা বিজ্ঞানের অক্ষমতার কারণে বা রোগীর অভিভাবকের চরম অবহেলা/সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হওয়ায় রোগীর মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের জন্য দায়মুক্তি আইন উপেক্ষা করে রাষ্ট্রের প্রশাসন গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে, এর বিরুদ্ধে আন্দোলনরত সোসাইটির নেতৃত্বের সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়ে দৃঢ় অবস্থানে থাকা প্রয়োজন ছিল।

* কোন আশায়, কাদের আশায় এবং ভবিষ্যতে আর কোন চিকিৎসককে/সোসাইটির সদস্যকে রাষ্ট্র এভাবে হেনস্তা করবে না– এ নিশ্চয়তা পাওয়ার আগেই সোসাইটির নেতাদের চুপ হয়ে যাওয়া কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। যেহেতু তারা বিএমএ-র মতামতকে উপেক্ষা করতে পেরেছে, চিকিৎসকদের সমর্থন পেয়েছে, সরকার নমনীয় হয়ে জামিন দিয়েছে, সেহেতু জামিনপ্রাপ্ত দুই চিকিৎসকের মামলা সহ সারাদেশে এ ধরনের মামলায় চিকিৎসক নিগৃহীত হচ্ছে– সে সকল মামলা প্রত্যাহার ও ভবিষ্যতে অপরাধী প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত দায়মুক্তি কার্যকর করতে হবে– সে দাবীতে সোসাইটি অনড় ও দৃঢ় থেকে অল্প কয়দিন পর আবার কর্মসূচী দেওয়া হবে বলে আল্টিমেটাম দিয়ে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে পারত। তা না হলে সোসাইটির এ আন্দোলন কেবল সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুইজন চিকিৎসকের জমিন পাওয়ার আন্দোলন বুঝাবে।

এ মুহূর্ত পর্যন্ত মেহেরপুরের প্রবীণ গাইনোকোলজিস্ট ডা. আব্দুস ছালাম রোগীর মৃত্যুতে একই ধরনের মামলায় ক্ষতবিক্ষত  বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে আরও চিকিৎসক আছে যারা রাষ্ট্রে একই ধরণের হেনস্তার শিকার।

* জামিন হওয়া মানে মামলা থেকে মুক্ত হওয়া নয়। জামিন বাতিল হয়ে আবার গ্রেপ্তার হতে পারে যদি সরকার চায়। আর যারা গ্রেপ্তার হয়ে আছে, তাদের কি হবে? চিকিৎসক নিরাপত্তা আইন দিয়ে সরকার চিকিৎসকদের শৃঙ্খলিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত কিনা– পূর্বাহ্ণেই সোসাইটির খতিয়ে দেখা উচিত। কারণ চিকিৎসক নিরাপত্তা আইন সরকারের পক্ষে প্রস্তুত করে দিচ্ছে- আমলারা।

সবশেষে বলি, যারা সোসাইটির এ আন্দোলনে শীর্ষে ছিল তাদের আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। এখনই সময়, সকল বিভাগীয়, জেলা শহরে উপস্থিত হয়ে আগামীর কর্মসূচীর বিষয়ে মত বিনিময় করার। না হলে চিকিৎসকদের কেবল সমর্থন থাকবে, আন্দোলনের সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ ও অংশীদারিত্ব থাকবে না। যেমনটা এবার হয়েছে- জামিনের সংবাদ শোনার সাথে সাথে কোন আল্টিমেটাম ছাড়া কর্মসূচী প্রত্যাহার করা হল।


আরও দেখুন: