এমন গল্প অনেক চিকিৎসকের
সন্তান হাসপাতালে জেনেও নিজ চেম্বারে রোগী দেখছেন চিকিৎসক পিতা
আরিজ...
আমার সকল শক্তির উৎস!
আমার এই ফেরেশতাটা...স্কুলে বসেই এভাবে আঘাত পেয়েছে...অল্পের জন্যে চোখটা বেঁচে গেছে। খবর পেলাম চেম্বারে বসেই...পকেটে টাকা ছিল...উবার-সিএনজি ছিল...চাইলে এ্যাম্বুলেন্সও পেতাম..
কিন্তু..
সামনে তখন ২৫ জন রোগী অপেক্ষমাণ...ব্যাকী ৪ টা ক্যাথল্যাব...সব শেষ করতে রাত ১১ টা বাজবে!
আমার ঘড়িতে তখন দুপুর সাড়ে ১২টা...আরিজের ফুফু ততক্ষণে আরিজকে নিয়ে নিকটস্থ হাসপাতালে...আরিজের মা হাসপাতালের পথে..
আর আমি...?
শুধুই ভাবছি...
এখন চলে গেলে সারাদেশ থেকে আসা রোগীরা কই যাবে...আজ অপারেশন না হলে শিডিউল (ক্যাথ) পেতে আবার ৩ দিন...বাড়তি বিল রোগীরা কিভাবে দিব? তাঁদের ক্ষতের কি হবে? চাইলেই কি আর সব ছেড়ে দৌড় দিতে পারব!
পড়ে রইলাম অসুস্থ অনেক পিতার পায়ের কাছে...মনে অস্থিরতা...কষ্টগুলো অশ্রু হয়ে বের হতে গিয়েও সুযোগ পেল না...লোকলজ্জার ভয়ে।
অন্তরের এই ঝড়ের খবর না পেল উপস্থিত রোগী...না পেল আমার সহকর্মীরা।
ফাঁকে ফাঁকে শুধু ফোনে খোজ নিলাম...
সেলাই হলো?
আরিজ কি বেশি ব্যথা পেয়েছে?
ও কি সেলাই করতে দিচ্ছে? ওর কি কষ্ট হচ্ছে?
কিভাবে এমন হলো? কেন এমন হলো?
ওরা না পারলে আমার কাছে নিয়ে আসো...আমি সেলাই করব।
স্বভাবসুলভ হাসিটা মুখে রেখে একে একে সকল রোগী দেখে...অপারেশন শেষ করে রাত ১১.৩০ টায় ঘরে ফিরে আরিজের পাশে বসলাম।
আরিজ ততক্ষণে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
খুব ছোট্ট কাটা..দ্রুত শুকিয়ে যাবে ক্ষতটাও...কিন্তু বিপদে সন্তানের পাশে ছুটে যেতে না পারার যে কষ্ট...সেই কষ্টের ক্ষত কি কখনো শুকাবে?
এমন গল্প...
জীবনের বাঁকে বাকেঁ পড়ে থাকে অনেক চিকিৎসকের...অনেক পেশাজীবির!
আমি চাইনা আপনি এমন গল্প শুনে আমাকে নিয়ে বন্দনায় মেতে ওঠেন...
শুধু চাই...একটু অনুভব করুন এই কষ্টটা...অস্ফুটস্বরে বলে উঠুন...আহা! কী কষ্ট!
অথচ...
আমি আতংকে থাকি....
না জানি শিরোনাম হই...
"লোভী ডাক্তার...সন্তান হাসপাতালে জেনেও অর্থের লোভে চেম্বার চালিয়ে গেলেন''।
আমরা এমন কেন?