আঁখির মৃত্যুর জন্য দায়ী কে?
সেন্ট্রাল হাসপাতালে আঁখির মৃত্যুর চুলচেরা বিশ্লেসণ
আমার মতে, আঁখির মৃত্যুর জন্য, তার স্বামী ইয়াকুব আলী শত ভাগ দায়ী। এটা কেন নজরে আনা হচ্ছে না?
কারণ:
১. রোগীর প্রসব বেদনা শুরু হয় নয় তারিখ সকাল ছয়টা/সাতটার সময়। আট বা নয়টার দিকে তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রোগী সন্ধ্যা সাতটা পযর্ন্ত অবস্থান করে বিনা চিকিৎসায়। রোগীর স্বামী ডাক্তারদের পরামর্শ উপেক্ষা করে একক সিদ্ধান্তে রোগীর চিকিৎসা প্রদানে ভাক্তারদের বিরত রাখে। এরপর সন্ধ্যা সাতটায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অগোচরে,অনুমতি না নিয়ে রোগীসহ হাসপাতাল ত্যাগ করেন। discharge certificate বা ডাক্তারদের উপদেশ না নিয়ে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী বিনা চিকিৎসায় ১২ ঘণ্টা অতিবাহিত করেন।
২. রাত নয়টা/দশটার দিকে ঢাকার দিকে রওনা করেন। মধ্যরাতে বারটা আটাশ মিনিটে সেন্ট্রাল হাসপাতালে রিপোর্ট করেন। ১২ ঘন্টা লেবার পেইনে থাকার পর ২/৩ ঘন্টা ভ্রমণ; রোগীর জন্য কতটা সহনীয় ছিল, তা সহজেই অনুমান করা যায়। বাহ্যিক দৃষ্টিতে রোগীকে ভাল দেখালেও, আসলে কি তার অবস্থা ভালো ছিল? রোগীকে এ অবস্থায় ঢাকায় এনে নরমাল ভেলিভারি করানোর সিদ্ধান্ত ইয়াকুব আলীর। যা করানো সম্ভব নয়, ডাক্তাররা তাকে আগেই জানিয়ে ছিল। এভাবে সে রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।
৩. ডাক্তার সংযুক্তার সাথে বিগত তিন মাস রুগীর কোনো রকম যোগাযোগ ছিল না। ইয়াকুব আলী কিভাবে এতটা দৃঢ়তার সাথে ডা. সংযুক্তাকে দিয়ে নরমাল ডেলিভারি করাবেন, নিশ্চিত হলেন তার সহকারীর কথায়? এটা কি পরোক্ষভাবে কোনো চক্রান্ত কিনা.......ভেবে দেখা দরকার।
৪. ইয়াকুব আলী সেন্ট্রাল হসপাতালের ডাক্তারের নিকট পূর্ববর্তী হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য গোপন করে।
ডাক্তাররা জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এটাই দোষ। কারাগারে আছেন। যিনি আঁখির মৃত্যুর কারিগর, তিনি দিব্যি আরামে আছেন। ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
"চিকিৎসা ভুল বা ঠিক"- "বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিমের" মাধ্যমে তদন্ত করে বলা উচিত, এর আগে নয়। একটা building এর construction এ ভুল হয়েছে সেটি অভিজ্ঞ ইন্জিনিয়াররা মতামত দিবে- একজন ডাক্তার না। প্রতিটা পেশার বেলায়...
ডাক্তার শব্দটা নামের আগে লেখার জন্য একজন মেধাবীকে ৬-৭ বছর কঠোর পড়াশোনা ও পরিশ্রম করতে হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক লেখার জন্য আরো ৬-৭ বছর বা আরো বেশী সময় জীবনের অনেক কিছু বিসর্জন দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। এসব না করে.., চিকিৎসায় অভিজ্ঞ না হয়ে "অভিজ্ঞ মন্তব্য" করা সমাজ/রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। অল্প বিদ্যা সবসময় ভয়ংকরী।
আমাদের দেশের চিকিৎসকদের দক্ষতা করোনা মহামারীর সময় সবাই অবগত।
সব পেশার প্রতি সম্মান রেখে বলছি, যিনি যে পেশায় অভিজ্ঞ, কেবল তিনিই সে ব্যাপারে মতামত দিন। এতে পেশাগত উন্নয়ন হবে। চিকিৎসা পেশার মতো একটি sensitive পেশায় অনভিজ্ঞ হয়ে অভিজ্ঞ মন্তব্যে- দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। এতে রোগীদের বিদেশে যাওয়ার প্রবনতা বেড়ে যাবে। রোগীদের বিদেশে চিকিৎসা সংক্রান্ত আর্থিক কষ্ট, সময় নষ্ট দুটোই হবে। দেশের টাকা বিদেশে চলে যাবে। পক্ষান্তরে দেশ ও জাতির ক্ষতি হবে।
আমার বাসার বুয়া আমার জ্বর হলে আমাকে প্যারাসিট্যামল খেতে বলে। এটা জানা মানে চিকিৎসক হয়ে যাওয়া নয়।
চিকিৎসা সংক্রান্ত জটিলতাকে ভুল চিকিৎসা বলা বন্ধ করুন।
লেখক :
ডা. রেহানা আকতার
কনসালট্যান্ট, গাইনী এন্ড অবস বিভাগ,
জরায়ু ও স্তন ক্যান্সার নির্ণয় কেন্দ্র,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।