সেন্ট্রাল হাসপাতালের ঘটনায় কার লাভ, কার ক্ষতি?
সেন্ট্রাল হাসপাতালের ঘটনায় কার লাভ? (ইনসেটে ডা. রতীন্দ্র নাথ মন্ডল)
সেন্ট্রাল হাসপাতালের ঘটনায় কার লাভ? কার ক্ষতি? স্বাস্থ্যখাতের অরাজকতার সমাধান আছে কি?
সেন্ট্রাল হাসপাতালের ঘটনায় সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে মাহবুবার পরিবারের। একজন স্বামী তার স্ত্রীকে হারিয়েছেন, একজন বাবা তার আগত সন্তানকে হারিয়েছেন, মাহবুবার বাবা-মা তার নয়নের মনিকে হারিয়েছেন।
আরো ক্ষতি হচ্ছে যারা সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেন, যারা সেন্ট্রাল হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসকের চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেই সাথে সারাদেশে ক্রিটিক্যাল রোগীরা কষ্ট পাচ্ছেন। কিভাবে? আজকের একটা ঘটনা বলি।
আমার খুব কাছের বন্ধুর বোন গর্ভজনিত জটিলতা নিয়ে আসছেন, ওর ৩২ সপ্তাহ চলছে, প্রেসার ২০০/১৩০। আমি রংপুরের অনেক সিনিয়র গাইনিকলজিস্টদের সাথে যোগাযোগ করলাম। সবাই বলছে এই রোগী আমি দেখবো না, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। কারণ এই রোগীর অবস্থা খুব খারাপ, রোগীর কিছু একটা হলে মামলা করবে, জীবন শেষ। আমি ৩ জনকে এপ্রোচ করেও পাই নাই। তাহলে অন্য রোগী যারা প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতেন তাদের কি অবস্থা??
চিকিৎসা ক্ষেত্রে অরাজকতা উত্তরণের উপায়ঃ
১) চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে দেশের অন্যান্য সিস্টেম জড়িত। অন্য সব সিস্টেম দুর্নীতিগ্রস্ত, অসৎ রেখে শুধু স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন অসম্ভব। তাই সবার আগে দেশের সকল বিভাগের পরিবর্তন করতে হবে।
২) চিকিৎসা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ। উন্নত দেশের মত পারিবারিক চিকিৎসক ব্যবস্থা বা জিপি- রেফারেল সিস্টেম গঠন। প্রেসার চেক করার জন্যও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে হবে -এই কনসেপ্ট থেকে বের হতে হবে।
৩) চিকিৎসার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করতে হবে। সবার জন্য হেলথ ইন্সুরেন্স চালু করতে হবে। হেলথ ইন্সুরেন্স কোম্পানি সকল প্রাইভেট হাসপাতালগুলোকে মনিটর করবে। তারা সবকিছু দেখভাল করবে- টেস্ট বেশি দিল কিনা, ঔষধ বেশি লিখলো কিনা, অপ্রয়োজনীয় অপারেশন করল কিনা ইত্যাদি। রোগীর চিকিৎসার খরচ ইন্সুরেন্স কোম্পানি দেবে তাই রোগীর লোকজনের টাকা পয়সা নিয়ে মাথাব্যথা থাকবে না।
৪) মানসম্মত চিকিৎসক তৈরি। বর্তমানে সারা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশে। উন্নত দেশে সবচেয়ে মেধাবীদের মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা হয়। সেখান থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে মেডিকেল কলেজে কারা ভর্তি হতে পারবেন তা নির্ধারণ হয়। আবার এমবিবিএস শেষ হবার পর কারা কারা চিকিৎসা দেবার জন্য কোয়ালিফাইড তার জন্য লাইসেন্স পরীক্ষা দিতে হয়। আমাদের দেশে এসবের বালাই না। যা আছে তা যথোপযুক্ত নয়। এগুলো আপগ্রেড না করলে মানসম্মত চিকিৎসক তৈরি হবে না।
শেষ কথা, চিকিৎসকরা এদেশের মানুষ। আপনারই ভাই বা বোন বা বাবা বা মা বা চাচা বা চাচী। চিকিৎসকের শরীরে আপনারই রক্ত। আপনারা যদি শুদ্ধ না হোন তাহলে চিকিৎসরা শুদ্ধ কিভাবে হবে? সুতরাং ব্লেম গেম বাদ দিয়ে সর্বপরি সারাদেশকে নিয়ে চিন্তা করুন। একটি দেশের সকল সিস্টেম ঘুনে ধরা, সেখানে শুধু স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ১০০ ভাগ সঠিক চলবে এটা চিন্তা করা বোকামী।
লেখক :
ডা. রতীন্দ্র নাথ মন্ডল
সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ
প্রাইম মেডিকেল কলেজ, রংপুর।