সম্প্রতি বিএসএমএমইউ প্রাসঙ্গিকতায় চিকিৎসকদের প্রতি দু’টি কথা

ডা. বাহারুল আলম :
2023-06-14 11:42:25
সম্প্রতি বিএসএমএমইউ প্রাসঙ্গিকতায় চিকিৎসকদের প্রতি দু’টি কথা

সম্প্রতি বিএসএমএমইউ প্রাসঙ্গিকতায় চিকিৎসকদের প্রতি দু’টি কথা (ইনসেটে লেখক : ডা. বাহারুল আলম)

ভুক্তভোগীরা দুর্বল ও অসহায় থাকে। ভোগান্তি যখন চরমে ওঠে তখন নড়াচড়া করতে চায় কিন্তু সাহস ও শক্তিতে কুলায় না। উদাহরণ বিএসএমএমইউ –তে প্রতিবাদী চিকিৎসকরা ঘেরাও হয়ে থাকে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী দ্বারা।

চিকিৎসক বঞ্চনার চালচিত্র সমগ্র বাংলাদেশে বিদ্যমান। সুবিধাভোগী চিকিৎসক নেতৃত্ব কথা বলে না। যারা অধিকার হরণ করেছে তাদের তোষামোদি করে, অবস্থান হারানোর ভয়ে পাশ কাটিয়ে কথা বলে। অপরদিকে, ভুক্তভোগী চিকিৎসকরা দুর্বল মেরুদণ্ডী। তারা অভ্যস্ত হয়ে গেছে শোষণ-নির্যাতনে। তারাও অধিকার হরণকারীদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করে না।

ভুক্তভোগী চিকিৎসকদের হৃদয়ে তার অধিকার ও মর্যাদার স্থলে অন্য কোন মোহ/উচ্চাভিলাষ কাজ করে। হঠাৎ কোথাও প্রতিবাদের সূচনা হলে নেতৃত্ব তখন ঘটনার সমালোচক হয়ে ভুক্তভোগীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে, কিন্তু অধিকার হরণকারী কর্তৃপক্ষকে কিছু বলে না ও তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় না।

বাংলাদেশের সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিকিৎসকদের নিয়ে ইঁদুর–বিড়াল খেলা খেলছে ৫২ বছর ধরে। সরকারের ভাড়া করা আমলাতন্ত্র চিকিৎসকদের উপর যে মাত্রায় আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে, তার বিরুদ্ধে চিকিৎসকদের তারচেয়েও শক্তিশালী কাউন্টার আধিপত্য তৈরি করা ক্ষণিকের ব্যাপার। কেবল “কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয়” প্রতিষ্ঠা হলেই এর সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু তারা পারছে না কারণ তাদের অনুভূতিতে ‘চিকিৎসক সত্ত্বা ও মর্যাদা’ মোটেও ক্রিয়াশীল নয়। পদ–পদবী ও সম্পদ আহরণের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আত্মমর্যাদা ও অধিকারের লড়াই চলে না। আত্মপরিচয় ও উপলব্ধির সংকটের অবসান না হলে চিকিৎসকদের মধ্য হতে যে নেতৃত্বই গড়ে উঠুক না কেন- তারাও মোহগ্রস্ত ও আপোষকামী থাকবে এবং নেতৃত্বের অবস্থানে থেকে তার আকাঙ্ক্ষা স্বপ্ন পূরণে সুবিধাভোগী হয়ে উঠবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েট ‘ট্রেইনি’ চিকিৎসকদের বেতন-ভাতার বঞ্চনার প্রতিবাদের রূপ হাস্যকর নয়, দুঃখজনক। ডাকসাইটে দুটি সংগঠন বিএমএ ও স্বাচিপ দীর্ঘদিন ধরে সমগ্র বাংলাদেশে চিকিৎসকদের এ বঞ্চনা নিয়ে সরকারের সাথে লড়াপেটা করছে না বা করতে পারছে না। করার মনস্তাত্ত্বিকতা আছে কিনা সন্দেহ!

স্পার্টাকাস তার জীবন দিয়েও কৃতদাসদের বোঝাতে পারেনি– তারাও মানুষ। যখন বুঝেছে তখনই দাস প্রথা উচ্ছেদ হয়েছে। ‘চিকিৎসকরা যে চিকিৎসক’– কেবল এটুকু বুঝলে মুহূর্তেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সকল আধিপত্যের অবসান ঘটবে। আজও ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে আমরা মনস্তাত্ত্বিক ভাবে মুক্ত হতে পারিনি স্বাধীন হলাম কিভাবে!

(ভিন্নমত ও বিশ্লেষণ প্রত্যাশা করছি)

লেখক :

ডা. বাহারুল আলম, 

সভাপতি, বিএমএ খুলনা। 


আরও দেখুন: