এমন মৃত্যু কারও কাম্য নয়
আচমকা কেন জানি চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছে, শিশুটির করুণ মুখ
হাসপাতালে মৃত্যুর মিছিলের যাত্রা আজ নতুন নয়। তবে এমন নির্মম মৃত্যু কারও-ই কাম্য নয়। আজ (২৯ মে৩) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইমারজেন্সিতে পরিচয়হীন ১০-১১ বছরের ছেলেটি পথচারীর সহায়তায় আসে।
তথ্যসূত্রে, মহাখালীতে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের ৬০ ফিট উপর থেকে আলগা দুটি রড এসে হঠাৎ নিচে পড়ে। ৬-৭ ফিট রডের একটি সামনে পড়লেও অপরটি শিশুটির মাথার পেছনে সজোরে এসে ঢুকে চোয়াল দিয়ে বেরিয়ে আসে।
আমার জীবনে এত নির্মম মৃত্যুর দৃশ্য এর আগে কখনও দেখিনি। মাথায় ঢোকা অংশটুকু বাদে রডের তিন-চতুর্থাংশ ধরে ড্রিল মেশিন দিয়ে খুব সাবধানে কাটা হয়েছিল। শিশুটির ম্যাসিভ হেমোরেজ হচ্ছিল, গজ পিচ দিয়ে টাইট করে মাথায় ব্যান্ডেজ করা হলেও তা সব ভিজে রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে আসছিল।
নারভাস সিস্টেম আনস্টাবল, পালস খুবই স্যালো পাওয়া যাচ্ছিল। শিশুটির দু’হাতে দুটি আইভি চ্যানেল ওপেন করে কন্টিনিউয়াস নরমাল স্যালাইন চলছিল। এতই ব্লিডিং হচ্ছিল যে, আমরা যারা ছিলাম কেউ পালস দেখছে, কেউ ব্যান্ডেজ করছিল, কেউ মুখের অক্সিজেন মাস্ক বারবার ঠিক করে দিচ্ছিল, কেউবা আবার স্যালাইন বটেল চেপে চেপে ফাস্ট রানিং ফ্লুইড দেওয়ার চেষ্টা করছিল।
শিশুটির চোখ তখনও খোলা, সে দু-একবার মাথা ঘোরানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু এত খানি রড পেছনে গেঁথে আছে, আমরা তার মাথাটা এক কাঁধ করে শুয়ে রাখার জন্য বার বার বলছি। শিশুটার রেসপন্স আসতে আসতে কমে আসছিল, দু-তিন বার খিঁচুনি হয়ে শরীর অসাড় হয়ে যাচ্ছিল।
অক্সিজেন ও ফ্লুইড কাভারেজ দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরবর্তীতে শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করা হয়। পরে তারা আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে শিশুটির চিকিৎসা চালিয়ে যায়।
সন্ধ্যার আগে খবর পেলাম শিশুটি মারা গেছে। তার বেঁচে থাকার ৫-৬ ঘণ্টার নির্মম চেষ্টার কিছু মুহূর্তের সাক্ষী আমিও হয়ে গেলাম। এখন আচমকা কেন জানি চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছে, সকালে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার শিশুটির সেই করুণ মুখ। কোনো কাজেই মনোযোগ বসাতে পারছি না। পথচারী শিশুটির মৃত্যুর সময়ও তার পরিবারের কাউকেই পাশে পায়নি। কেন না তার পরিচয় কেউই সঠিকভাবে দিতে পারেনি।
মৃত্যু যে কতটা অসহায় ও সব নির্মমতার ঊর্ধ্বে শিশুটি তারই বাস্তব প্রমাণ। শুধু এটুকুই প্রার্থনা আল্লাহ শিশুটিকে জান্নাতবাসী করুক, আমিন।