গেঁটে বাত নিয়ে সচেতনতা জরুরী
গেঁটে বাত রোগ নিয়ে সচেতনতা জরুরী
রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস বা গেঁটে বাত রোগ নিয়ে সচেতনতা জরুরী …
১) আমার বড় দিদির ২০০৭ সালে হঠাত করে হাত এবং পায়ের জয়েন্টগুলোতে ব্যথা শুরু হয়। পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার পর রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস বা গেঁটে বাত ধরা পড়ে। ওই সময় দিদি, আমার বাবা-মা সবাইকে বুঝিয়ে চিকিৎসা শুরু করাতে পারি নাই। সবাই মিলে কবিরাজী করা শুরু করলো আমাকে না জানিয়ে। দিন দিন ব্যথা বাড়তে থাকল। দিদিকে নিয়ে নদী পাড় হয়ে কবিরাজের বাড়ি যাওয়া আসা, চিকিৎসা নেয়া চলছিল। ২০১২ সালের মার্চ মাসে দিদির হাতের আঙ্গুলগুলো বেকে যাওয়া শুরু হয়। এরপর বাবা-মা আমাকে বলেন উনারা ভুল করেছেন-আমি যেন দ্রুত চিকিৎসা শুরু করি। এরপর দিদির চিকিৎসা শুরু হয়। ওর ব্যথা কমে যায়, আঙ্গুলগুলো আর বেঁকে যায় না। তবে দেরীতে চিকিৎসা শুরু করার কারনে ওর কিছু জটিলতা তৈরী হয়। সেগুলোর চিকিৎসা নেয়ায় এখন ভালো আছেন।
২) আমার বন্ধু রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. কনক পারভেজের শ্বশুর ব্যথায় ভুগছিলেন অনেকদিন। একদিন কনক আমাকে ফোন দিয়ে আমার কাছে নিয়ে আসলো। উনি হাঁটতে পারতেন না। হুইল চেয়ারে আমার কাছে আসতেন। উনার অবস্থা অনেক খারপ ছিল, আমি আশ্বস্ত করেছিলাম যে সময় বেশি লাগলেও উনি স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারবেন। প্রায় ৬ মাস পর উনি স্বাভাবিকভাবে হাঁটা শুরু করেছিলেন। এখন একাই আমার চেম্বারে ফলোআপে আসেন।
রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস বা গেঁটে বাত রোগ কি?
রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস বা গেঁটে বাত রোগ শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের একটি রোগ। এটি সাধারনত ৩০ থেকে ৬০ বছরের মানুষের বেশি হয়, তবে যে কোন বয়সের মানুষের হতে পারে। মহিলাদের এই রোগ পুরুষের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। এটি একটি অনিরাময়যোগ্য রোগ। চিকিৎসা করে এই রোগ কন্ট্রোল রাখাই প্রধান উদ্দেশ্য। তবে যদি সঠিক চিকিৎসা না হয় তবে জয়েন্টগুলো বেঁকে যেতে পারে এবং জয়েন্ট বেঁকে গেলে সেগুলোকে আর আগের অবস্থায় ফিরে আনা সম্ভব হয় না।
আপনি কখন বুঝবেন যে রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস বা গেঁটে বাত রোগ হয়েছে?
১) দুই হাতের জয়েন্টগুলোতে ব্যথা এবং ফুলে যাওয়া। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে শুধু পায়ের ছোট ছোট জয়েন্ট এমনকি হাত এবং পা দুই জায়গার জয়েন্টগুলোই ফুলে যেতে পারে। এই রোগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছোট ছোট জয়েন্টগুলোতে সমস্যা দেখা যায় যেমন-হাত এবং পায়ের জয়েন্টগুলোতে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বড় বড় জয়েন্ট যেমন- হাঁটু, ঘারের জয়েন্ট, কনুই এর জয়েন্টও সমস্যা হতে পারে।
২) সকালে ঘুম থেকে উঠার পর ব্যথা বেড়ে যায়, জয়েন্টগুলো নাড়ানো সম্ভব হয় না। ধীরে ধীরে চলাফেরা করতে করতে কিছুটা কমে যায়।
৩) এছাড়াও জ্বর, খাবার অরুচী, শারীরিক দুর্বলতা থাকতে পারে।
রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস বা গেঁটে বাত রোগের লক্ষন দেখা দিলে কি করবেন?
এসব লক্ষন দেখা দিলে দ্রুত আপনি একজন এমবিবিএস চিকিৎসকে দেখাবেন। এই রোগ কনফার্ম করার জন্য কিছু পরীক্ষা করতে হবে। রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস বা গেঁটে বাত রোগ কনফার্ম হলে ঔষধ দেবার জন্য কিডনী, লিভার পরীক্ষা করতে হবে। এরপর সবকিছু দেখে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস বা গেঁটে বাত রোগের চিকিৎসা কতদিন করতে হবে?
এই রোগ অনিরাময়যোগ্য রোগ। হাইপ্রেসার এবং ডায়াবেটিসের মত এই রোগের ঔষধ সারাজীবন ক্ষেতে হবে।
রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস বা গেঁটে বাত রোগ এর রোগীর কি নিয়মিত ফলোআপ করতে হবে?
অবশ্যই। এই রোগের রোগীর জন্য ফলোআপ অত্যন্ত জরুরী, রোগীর অবস্থা এবং কোন ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা পাচ্ছেন তার প্রকারভেদে ৩-৬ মাস পর পর ফলোআপ করতে হবে। কারন ফলোআপের সময় দেখতে হবে উনার বর্তমান ঔষধে উনার রোগ কন্ট্রোল আছে কিনা এবং উনাকে যে ঔষধগুলো দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে সেগুলোর কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা।
শেষ কথা- আপনি যদি দেখেন যে হাত এবং পায়ের জয়েন্টগুলো ব্যথা করছে, সকালে বেশি হচ্ছে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস বা গেঁটে বাত রোগ এর সুচিকিৎসা আছে। এই রোগের রোগী সঠিক চিকিৎসায় একদম সুস্থ হয়ে যান। তবে চিকিৎসা শুরু করতে দেরী হয়ে গেলে বা কোন জয়েন্ট নষ্ট হয়ে গেলে সেই জয়েন্ট আর ভালো করা সম্ভব হয় না।
লেখক :
ডাঃ রতীন্দ্র নাথ মণ্ডল
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
রংপুর স্পেশালাইজড হাসপাতাল
প্রতিষ্ঠাতা- ডাক্তারখানা।