ব্রেস্ট ফিডিং নিয়ে যত সমস্যা
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন মা
বেশির ভাগ শিশুরা বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় হঠাৎ করে মায়ের নিপলে কামড় দিয়ে বসে। মা ব্যথা পেলে বরং আরো বেশি করে কামড় দেয়। শিশুরা এটিকে খেলা মনে করে, কিন্তু একজন মা জানেন ব্যাপারটা কত স্পর্শকাতর ও বেদনাদায়ক। ব্রেস্ট ফিডিংয়ের সময় নিপলে কামড় দেওয়া মায়েদের জন্য একটি অস্বস্তিকর সমস্যা। কিছু বলাও যায় না, সহ্য করাও যায় না। অধিকাংশ শিশু ৪-৬ মাস বয়সে এ রকম আচরণ করে। তবে, দুয়েক সপ্তাহ পর ঠিকও হয়ে যায়।
সমস্যার কারণ
১. শিশুদের দাঁত উঠার সময় মাড়িতে অস্বস্তি, ব্যথা ও শিরশির অনুভূতি হয়। এ সময় শিশুরা সহ্য করতে না পেরে হঠাৎ করে নিপলে কামড় দেয়। কামড়ালে কিছুটা ভালো বোধ করে।
২. পর্যাপ্ত বুকের দুধ না পেলে বা পেট ভরে গেলে আর কিছু করার থাকে না। এজন্য বুকের দুধ পাওয়ার জন্য বা খাওয়া শেষে খেলার ছলে শিশুরা নিপলে কামড় দেয়।
৩. মায়ের মনোযোগ আকর্ষণের জন্যও শিশুরা এমনটা করে। যেমন-মা শিশুর দিকে খেয়াল করছে না, তখন মায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যেও শিশুরা এমন করে।
৪. শিশুকে খাওয়ানোর সময় পদ্ধতি ভুল হলে বা ঠিকমতো না খাওয়ালেও এমনটা হতে পারে।
প্রতিকারের উপায়
১. দাঁত উঠার সময় শিশুকে চিবানোর জন্য টিথার বা রাবারের খেলনা দিলে অথবা নিপল সিল্ড ব্যবহার করলে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়। তবে টিথার দেওয়া নিয়ে মতবিরোধ আছে। এ ছাড়া দাঁতের মাড়ি ম্যাসাজ করে দিলেও ব্যথা কম হয় এবং শিশুরা আরাম পায়। সমস্যা বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।
২. বুকের দুধ পর্যাপ্ত হওয়ার জন্য প্রচুর পানি, তরল, মাছ ও শাকসবজি খান। সেই সঙ্গে এই সময়টাতে দুশ্চিন্তা কম করা, পর্যাপ্ত ঘুম ও মায়ের বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া দরকার।
৩. শিশুকে যথেষ্ট মনোযোগ দিতে হবে, চোখে চোখ রেখে আশ্বস্ত করতে হবে যে, মা আছে তার সাথে।
৪. সমস্যা বেশি হলে শিশুকে বুকের দুধ দেওয়া বন্ধ করে সরিয়ে দিন ও দৃঢ় চেহারায় মানা করুন, ‘কামড় দেয় না মাকে’।
৫. কামড় দিতে শুরু করলে মা একটি এক আঙুল শিশুর মুখের ভিতর দিয়ে আস্তে করে ছাড়িয়ে আনুন অথবা শিশুর মাথা সামনে টেনে আনুন, যেন তার নাক বুকের মধ্যে চাপ খায় এবং ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
শুরুর দিকে কামড় দিলে খাওয়ানোর পজিশন ঠিক আছে কিনা দেখুন, শিশু পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে কিনা খেয়াল রাখুন। খাওয়ানোর শেষ দিকে আগ্রহ আর নেই মনে হলে, কামড় দেওয়ার আগেই শিশুকে সরিয়ে আনুন।
চিকিৎসা
কামড়ের স্থানে ঘা তৈরি হলে, ওই পাশে খাওয়ানো বন্ধ রাখুন। চিকিৎসকের পরামর্শে মলম বা ওষুধ খেতে হবে। শিশু খাওয়ার পর নিপলে যে আঠালো ভেজা পদার্থ লেগে থাকে, তা দিয়ে নিপল ম্যাসেজ করে দিবেন। এতেও ভালো কাজ হয়।
ডা. লুনা পারভীন
আবাসিক মেডিকেল অফিসার (বহির্বিভাগ)
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট