জাতীয় স্বাস্থ্য ও কল্যাণ দিবস আজ

ডা. কামরুল হাসান সোহেল :
2023-05-02 10:17:17
জাতীয় স্বাস্থ্য ও কল্যাণ দিবস আজ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় (ইনসেটে লেখক)

আজ ২ মে 'স্বাস্থ্য ও কল্যাণ দিবস'। ১৯৭১ সালের এইদিনে কলকাতার ৮নং থিয়েটার রোডে প্রবাসী সরকারের কার্যালয়ে বাংলাদেশ সরকারের (মুজিব নগর সরকার) প্রথম অধিদপ্তর হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭১ সালের এক ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণে দেশমাতৃকার বীর সেনানি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা প্রদান, শরণার্থী শিবিরে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের মহান ব্রত নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যাত্রা শুরু, সেই থেকে অবিরাম পথচলা শুরু হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালির স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের দায়িত্ব নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।১৯৭১ সালে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা প্রদান, শরণার্থী শিবিরে সেবা প্রদানের পাশাপাশি সম্মুখ সমরে সরাসরি অংশগ্রহনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেয়। এই সোনালী দিনের স্মৃতিকে চির অম্লান ও স্মরণীয় করে রাখতে ২০২২ সাল থেকে ২ মে “স্বাস্থ্য ও কল্যাণ দিবস" হিসেবে পালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মলগ্নে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যাত্রা শুরু হয়। অবিরাম আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা, অগণিত শরণার্থীদের চিকিৎসা, নিহতদের মৃতদেহ সৎকার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এইসব ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলেছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়। চিকিৎসা যুদ্ধ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। ল্যানসেট সাময়িকীর বিশেষ প্রকাশনা ২০১৩ অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের অর্জনের অন্যতম নিয়ামক হলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

১৭ এপ্রিল, ১৯৭১ মুজিবনগরে শপথ নেয় বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সনদ ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীসভার প্রথমদিকের বৈঠকে মন্ত্রীদের দায়িত্ব বণ্টনের পাশাপাশি কর্নেল ওসমানীকে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ২ মে, ১৯৭১ তারিখে অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার বৈঠকে ডাঃ তোফাজ্জল হোসেন ( ডাঃ টি. হোসেন) কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর বন্ধুত্বধন্য এই সার্জন জীবনের মোহ ত্যাগ করে পালন করেছেন স্বাস্থ্য খাতের প্রথম মহাপরিচালকের দায়িত্ব। মন্ত্রীসভার কার্যবিবরণী ও সিদ্ধান্ত মস- ১৮ তে লিপিবদ্ধ আছে। মন্ত্রীসভার কার্যবিবরণী থেকে প্রতীয়মান হয় যে সেনাবাহিনীর পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরই স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম অধিদপ্তর।

ডাঃ টি. হোসেনের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যাত্রা শুরু হয় ওয়ান ম্যান আর্মির মত।। কলকাতার হাই কমিশন অফিসের অন্যান্য অনেক কর্মকর্তার সাথে অপ্রতুল দাপ্তরিক সুবিধাদি নিয়ে তিনি অধিদপ্তরের কাজ শুরু করেন কোন রকম আর্থিক বরাদ্দ ছাড়া। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সরকারের বাজেট বরাদ্দ ছাড়াই প্রায় দুই হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত করতে পেরেছিলেন। উল্লেখ্য চিকিৎসকের চাইতে অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা ছিল ৪ থেকে ১০ গুণ।

১৯৭১ সালের জুলাই মাসে সরকারের সাংগঠনিক বিন্যাসকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য ও কল্যাণ বিভাগে রূপান্তর করা হয় যেখানে মহাপরিচালক ডাঃ টি. হোসেনকে সচিব হিসেবে এবং চারটি অধিদপ্তরের নাম প্রস্তাব করা হয়; সেগুলো হলো প্রতিরক্ষা মেডিকেল সার্ভিস, সিভিল মেডিকেল সার্ভিস, ওয়েলফেয়ার সার্ভিস এবং মেডিকেল শিক্ষা পরিদপ্তর।

বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নির্বাহী ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাসমূহের মধ্যে অন্যতম। এই অধিদপ্তরের প্রধান কাজ দেশের সর্বস্তরে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং প্রশাসনিকভাবে বিভিন্ন নীতি কার্যকর করা। এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়কে স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কিত দিক নির্দেশনা প্রণয়নে কারিগরী সহযোগিতাও প্রদান করে থাকে। কোভিড-১৯ মহামারী নিয়ন্ত্রণ এবং পরিকল্পনা প্রণয়নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভূমিকা অপরিসীম।

সংস্থাটি স্বাধীনতাপূর্ব ১৯৫৮ সনে স্বাস্থ্য পরিদপ্তর নামে স্থাপিত হয়। ১৯৮০ সনে এটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে উন্নীত হয়। মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।

'স্বাস্থ্য ও কল্যাণ দিবস' সফল হোক, স্বার্থক হোক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুযোগ্য নেতৃত্বে স্বাস্থ্য সেবা খাতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বহুদূর, জনগণ তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবে আশা করি।
'স্বাস্থ্য ও কল্যাণ দিবস' এ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাই অভিনন্দন, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা


আরও দেখুন: