একজন চিকিৎসকের প্রত্যাশা
‘একজন চিকিৎসকের প্রত্যাশা’- ডা. কামরুল হাসান সোহেল
ডাক্তার শব্দটি বলার সাথে সাথে আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে একজন মেধাবী, চৌকস, সদা হাস্যোজ্জ্বল, মানবিক গুণসম্পন্ন কারো চেহারা। যার কথা শুনেই রোগীর রোগ সেরে যাবে, অন্ততপক্ষে রোগী তা-ই আশা করেন। মানুষ যখন অসুস্থ হন তখন নিজেকে খুব অসহায় বোধ করেন, আল্লাহর কাছে সুস্থতার জন্য দোয়া করেন, আর রোগের চিকিৎসার জন্য ডাক্তাররের উপর নির্ভর করেন। তাই রোগীরা বলেন, "আল্লাহর পরেই ডাক্তারের স্থান"।
একজন ডাক্তার তার জ্ঞানের সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটান তার রোগীকে সুস্থ করে তোলার জন্য। একজন ডাক্তারের কাছে তার রোগীর সুস্থতাই সবার আগে প্রাধান্য পায়। আজকাল আমাদের দেশে একটা বাজে সংস্কৃতি চালু হয়েছে- চিকিৎসাধীন অবস্থায় কোন রোগী মারা গেলে রোগীর আত্মীয় স্বজনরা তা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেন না। তারা চিকিৎসককে দায়ী করেন, চিকিৎসার ভুল ধরেন। মানুষ মরণশীল, একজন ডাক্তার রোগের চিকিৎসা করেন, কিন্তু মৃত্যু অবধারিত। কখনো কখনো সকল চিকিৎসাকে ব্যর্থ করে দিয়ে যে কেউ মারা যেতে পারেন।
চিকিৎসকের উপর আস্থাহীনতার জন্য দায়ী আমাদের সমাজব্যবস্থা, প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থাপনা নিয়ে অতিরিক্ত নেতিবাচক প্রচারণা। কিছু দায় অবশ্যই চিকিৎসকদেরও আছে। কেউ কেউ রোগীদের যথেষ্ট সময় নিয়ে দেখেন না, রোগীদের কথা মন দিয়ে শুনেন না, পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট মনোযোগ দিয়ে দেখেন না, রোগীদের ভালভাবে কাউন্সেলিং করেন না। উনি হয়তো সঠিক চিকিৎসাই দিচ্ছেন রোগীকে। কিন্তু রোগীর সাথে তার কমিউনিকেশন গ্যাপ রয়ে যাচ্ছে। এইভাবে ধীরে ধীরে চিকিৎসকের প্রতি রোগীর আস্থাহীনতা তৈরি হচ্ছে।
এই আস্থাহীনতা দূর করতে উদ্যোগ নিতে হবে আমাদেরকেই। রোগীদের প্রতি সহমর্মিতা দেখাতে হবে, রোগীদের সাথে ভালো আচরণ করতে হবে, রোগীদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে, রোগীদের যথাযথভাবে কাউন্সেলিং করতে হবে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা এখন অনেক উন্নত। বাংলাদেশের চিকিৎসকদের মান ও অনেক ভালো।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে, মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী জনাব জাহিদ মালেক এমপি মহোদয়ের সঠিক পরিকল্পনা ও দিক নির্দেশনায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় গত ১৫ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন থিয়েটার চালু হয়েছে। এখন উপজেলায় জরুরি প্রসূতি সেবা দেয়া হয়, সিজারিয়ান অপারেশন হয়, মেজর ও মাইনর সার্জারি অপারেশন হয়। সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ দ্বারা নরমাল ডেলিভারি করানো হয়।
এছাড়া নিয়মিত এ এন সি সেবা, পি এন সি সেবা, জরায়ুমুখের ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সার শনাক্তকরণ টেস্ট (ভায়া টেস্ট) হয়, কমিউনিটি ভিশন সেন্টার এ চোখ পরীক্ষা করা হয়, এক্সরে সুবিধা,প্যাথলজি সুবিধা, জিন এক্সপার্ট সুবিধা, বিনামূল্যে যক্ষ্মা রোগ শনাক্তকরণ সহ বিনামূল্যে যক্ষ্মারোগীর ঔষধ বিতরণ করা হয় ডটস' কর্ণার থেকে। এছাড়া অসংক্রামক রোগ যেমন: ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট, মানসিক রোগের চিকিৎসা এবং বিনামূল্যে ঔষধ দেয়া হয় এনসিডিসি কর্ণার থেকে।
প্রায় প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সার্জারী বিশেষজ্ঞ, গাইনি বিশেষজ্ঞ, নাক, কান, গলা রোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ, অর্থোপেডিকস বিশেষজ্ঞ, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদায়িত আছেন। এর ফলে উপজেলা পর্যায়ে জনগণ তাদের দোরগোড়ায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেন।
জেলা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতালে সেবার কলেবর বেড়েছে, সেবার মান বেড়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে জটিল ও দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসা ও দেয়া সম্ভব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে জটিল কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট হয়, জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা হয়।
আমাদের দেশের প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে আপনারা আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় যে নিরব বিপ্লব ঘটেছে তার ইতিবাচক প্রচারণা করেন। ভাল কাজের প্রশংসা করেন, ভাল কাজ যারা করে তাদের উৎসাহিত করেন, ভাল কাজের প্রশংসা করলে, ভাল কাজে উৎসাহ দিলে ভাল কাজ করার স্পৃহা আরো বৃদ্ধি পায়।
রোগীদের প্রতি অনুরোধ জানাবো- আপনার চিকিৎসক আপনার রোগের চিকিৎসা করে, আপনার সুস্থতা কামনা করেন সবসময়ই। আপনার চিকিৎসকের প্রতি আস্থা রাখুন, চিকিৎসককে শ্রদ্ধা করুন।
চিকিৎসকদের প্রতি অনুরোধ জানাবো- আপনার রোগীর প্রতি সহমর্মিতা দেখান, আপনার রোগীকে গুরুত্ব দেন, তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন, রোগীকে যথাযথভাবে কাউন্সেলিং করুন, সর্বোচ্চ সেবা দিন।
বাংলাদেশের সকল চিকিৎসকদের জানাই অভিনন্দন ও ধন্যবাদ। অসহায় অসুস্থ রোগীদের সুস্থ করে তোলার জন্য আপনাদের এই প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক সবসময়।