শিশু সিয়ামের প্যারোটিড রিজিওন থেকে কাঠের টুকরো বের করলেন ঢামেকের চিকিৎসক দল
সিয়ামকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের চিকিৎসকেরা
রোগীর নাম সিয়াম। বয়স ৭ বছর।
ওর প্যারোটিড রিজিওন থেকে এই কাঠের টুকরোটি বের করা হয় আজকে।
কিন্তু এই বের করার পেছনে রয়েছে ইতিহাস। চলুন জেনে আসি সেই ইতিহাস।
সিয়াম প্রথম ঢাকা মেডিকেল কলেজে এসেছিল ১২ মার্চ, ২০২৩ ।
১২ মার্চ আমাদের ঢাকা মেডিকেলের ইউনিট ২ এর ইভিনিং ডাক্তার ডা Mizan Mridul এর কাছে আসে। ডান কানের প্যারোটিড রিজিওনের ওখান থেকে পূঁজ বের হচ্ছিলো। হিস্ট্রি নিতে গিয়ে রোগীর লোক জানালো খেলতে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছে, কিছু ঢুকেছে সেই হিস্ট্রি দেয় নাই রোগী।
রোগীর পূঁজ পড়া স্থান থেকে পূঁজ কালেক্ট করে কালচার করতে পাঠানো হল এবং রোগীকে ভর্তি দেয়া হলো। প্ল্যান ছিল- পরের দিন রাউন্ডে রোগীর রোগ ইভালুয়েট করা হবে। এডমিশান এর দিন রোগীর প্রচুর রাশ থাকায় ইভালুয়েশন অনেকটা অসম্ভব।
তো এই রোগী সেই যে গেল তো গেল, আর ফিরে এলোনা।
অবশেষে দীর্ঘ তিন সপ্তাহ পর সিয়াম আজ আমাদের মাঝে ফিরে এলো। ফিরে এলো আরো বেশি পূঁজ নিয়ে, ঘা বাড়িয়ে। সিয়ামের বাবার ভাষ্যমতে, পূজ এর ভায়াল জমা দিতে গিয়ে তাহারা দালালের খপ্পরে পড়ে। দালাল তাদের নিয়ে যায়- সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল সংলগ্ন প্রাইম অর্থোপেডিক এন্ড জেনারেল সার্জারি হাস্পাতালে। সেখানে ৩ দিন তারা থাকে। এ সময় রোগীর এবসেস ড্রেইন করা হয় এবং সেলাইও (!!!) দেয়া হয়। এত বড় সার্জারি করলো, ড্রেইন করলো কিন্তু আসল জিনিস বের করার নাম নাই।
বোঝাই যাচ্ছে, মহান কোন কোয়াক সার্জনের হাতে পড়েছে!!! এই তিনদিনে রোগী থেকে নেয়া হয় ৩৭ হাজার টাকা!!!!
ইতোমধ্যে রোগীর ডান চোখ পুরো বন্ধ হয় না, ডান দিকের মুখ বেঁকে গেছে (ফেসিয়াল নার্ভ পালসি)
আজ আসার পর আমাদের ফেইজ বি রেসিডেন্ট ডা Asif Uddin রোগীর ঘা যুক্ত স্থান পালপেশন করে শক্ত কিছুর অস্তিত্ব টের পায়। এরপর আর্টারি ফরসেপস দিয়ে ডা আসিফ চেষ্টা করে বের করে এই কাঠের টুকরোটি, যেটি আটকে ছিল প্রায় ২১ দিন।
মূলত খেলতে গিয়ে এই কাঠের টুকরো বাচ্চাটির প্যারোটিড রিজিওনে ঢুকে যায়। এরপর রোগী ৮-১০ দিন দেরি করে চিকিৎসা নিতে আসে। ততদিনে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানের চারপাশে পূঁজ জমে যায়।
আমরা রোগীটিকে ভর্তি রেখেছি আমাদের ওয়ার্ডে। আশা করি, প্রপার ড্রেসিং ও ওষুধ খেলে রোগীর ঘা ও শুকাবে, মুখ ও চোখের সমস্যার সমাধান হবে।
পোস্টটা দেয়ার কারণ তিনটি
১. ডা আসিফের সিন্সিয়ারিটি
২. কোয়াকের কবলে পড়ে নামসর্বস্ব হাস্পাতালে গিয়ে কোয়াকের হাতে অপচিকিৎসা পাবার ফলে ছেলেটি মুখ বেঁকে যাওয়া।
৩.বাবা মায়ের অসচেতনতার দরুণ বাচ্চাটিকে ১ মাস কষ্ট পেতে হলো।
জনসচেতনতা সৃষ্টি ও রোগীদের সর্বশেষ ভরসা ঢাকা মেডিকেল সেটা জানাতে এই পোস্ট দেয়া।
এবার আসি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে। প্রথমে কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের বিভাগীয় প্রধান, আমার মেন্টর, প্রখ্যাত নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর Sk Rumi Rumi স্যারকে। যিনি আমাদের উপর আস্থা রেখেছেন, স্বাধীনতা দিয়েছেন যে কোন রোগী ডিলিং এর। একাডেমিক পরিবেশ তৈরি করেছেন।
এরপর ধন্যবাদ জানাই আমাদের ইউনিট প্রধান প্রফেসর Debesh Talukder স্যারকে। যে কোন ক্রিটিকাল রোগীর চিকিৎসা নির্নয়ে স্যারকে পাওয়া যায় পরামর্শ দানে, আমাদের পড়ানো বা ওটি শেখানোর সময়।
এছাড়া ধন্যবাদ জানাই আমাদের সকল শিক্ষক, সহকর্মী বৃন্দ, নার্স, ওয়ার্ড বয়, ওটি বয়দের।
#জয়তু_ইউনিট_২
#জয়তু_নাক_কান_গলা_বিভাগ_ঢামেকহা