অধ্যাপক ডা. মোহা. বেলাল উদ্দিনকে যেমন দেখেছি
প্রফেসর ডা: বেলাল উদ্দিন স্যারের সঙ্গে ডা: মামুন, ডা: আতিয়া,ডা: নওরীন, ডা: রাজিকুল
অধ্যাপক ডা. মোহা. বেলাল উদ্দিন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব শেষে এখন বারিন্দ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ।
স্যার এ দেশের শিশু বিশেষজ্ঞদের তালিকার একেবারে উপরের কাতারের একজন। স্যার ভাল চিকিৎসকের পাশাপাশি একজন ভালো শিক্ষক। স্যার সম্পর্কে মন্তব্য করার যোগ্যতা আমাদের নেই।
আমরা খুব নিকট থেকে স্যারকে দেখেছি। স্যারের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। স্যার ওয়ার্ডে যখন ছোট শিশু দেখতেন তখন আমরা একবার শিশুর মুখের দিকে তাকাতাম, আর একবার স্যারের মুখের দিকে তাকাতাম। তুলনা করতাম কার হাসি বেশি সুন্দর। স্যারের হাসিটাই কেন জানি বেশি সুন্দর লাগত। অবিশ্বাস্য ভাবে ক্রন্দনরত শিশু স্যারের হাসি আর তার হাতের আলতো ছোঁয়াতে কান্না থামিয়ে দিত।
স্যারের মর্নিং রাউন্ড যেন একটা বড়সড় এনসাইক্লোপিডিয়া। রোগীর বেডের সামনে যেন একটা আস্ত খোলা বই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠত। ছোট ছোট ক্লু ধরে স্যার সামনে এগিয়ে যেতেন। মনে হত একজন বড় CID অফিসার অপরাধের চিহ্ন ধরে ধরে অপরাধীকে চিহ্নিত করছেন। আমাদের মস্তিষ্কে যা ধরা পড়ত না, স্যার সহজেই ছোট ছোট ক্যালকুলেশন করে তা ধরে ফেলতেন। আমরা ট্রেইনি চিকিৎসকরা এসব দেখে বিস্ময় আর আনন্দের মিশ্র অনুভূতিতে বুঁদ হয়ে থাকতাম।
স্যার নিজ হাতে আমাদের রোগী দেখতে শিখিয়েছেন। রাউন্ডে সবাইকে পড়া ধরতেন, রোগী এক্সামিন করতে দিতেন। কখনও পারতাম, কখনও পারতাম না। স্যার কখনও বকাবকি করতেন না। বরং উৎসাহ দিতেন। স্যারের একটি বিশেষ ক্ষমতা আছে। আর তা হল তিনি একজনের ভিতর থেকে সবচেয়ে ভালটা বের করে নিতে পারতেন। স্যার তার ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে সন্তানের মত আচরণ করেন। স্যারের হাত ধরে অনেকের বড় বড় ডিগ্রী হয়েছে। স্যারের হাত ধরে অনেক ভাল চিকিৎসক তৈরী হয়েছে। তারা এখন দেশের সব প্রান্তে ছড়িয়ে আছে।
স্যারের পর্যবেক্ষণ শক্তি প্রখর। তিনি নিকট দূরে দৃষ্টি না দিয়ে একটু বেশি দূরে দৃষ্টি দেন। স্যার সময়ের কিছুটা আগে হাঁটেন। স্যার অত্যন্ত পরিশ্রমী ও উদ্যমী। স্যারের মধ্যে ক্লান্তিবোধের ছাপ দেখা যায় না। স্যার স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি স্মার্ট, রুচিশীল। এখনও নিজে পড়েন, অন্যদের পড়াতে ভালবাসেন।
যে নদীর গভীরতা বেশি সে নদীর স্রোতের শব্দ কম। স্যার হলেন সে ধাঁচের একজন মানুষ। স্যারের ব্যক্তিত্ব আর জ্ঞানের গভীরতা অতল সাগরের মত। স্যারের সামনে এখনও যখন আমরা দাঁড়াই, নিজেদেরকে ছোট উইঁয়ের ঢিবির মত মনে হয়। সন্মান আর শ্রদ্ধার কারণে এমনিতেই আমাদের দৃষ্টি নত হয়ে যায়।
স্যার তার নিজের মত করে অনেক চিকিৎসক তৈরী করেছেন। স্যারের চিন্তা আর জ্ঞান অনেক চিকিৎসকের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন। আমাদের সামনে কোন জটিল রোগী আসলে আমরা স্যারের মত করে চিন্তা করি। মুখে হালকা 'হু' শব্দ করে থিতুনিতে হাত রেখে ভাবতে থাকি। নিমিষেই স্যারের একটা প্রতিচ্ছবি আমাদের সামনে চলে আসে। স্যার নিজের অজান্তেই তার বীজ আমাদের মাঝে বপন করেছেন।
একজন আদর্শ শিক্ষক, একজন আদর্শ চিকিৎসক, একজন দক্ষ অভিভাবক, একজন দক্ষ নির্দেশক, একজন পরম আত্মীয়- সবকিছুর সংমিশ্রণ প্রফেসর ডা. বেলাল উদ্দিন স্যার।
আজ আমরা চারজন ( ডা: মামুন, ডা: আতিয়া,ডা: নওরীন, ডা: রাজিকুল) স্যারের নতুন কর্মস্থলে গিয়েছিলাম। স্যারের স্নেহ আর ভালবাসার জোয়ারে প্লাবিত হয়েছি।
Happy Doctors' Day.
লেখক : ডা. রাজিকুল ইসলাম রাজিব
জুনিয়র কনসালট্যান্ট, পেডিয়াট্রিক্স
উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স, পত্নীতলা, নওগাঁ।