জিবিএস!
রোগীর সাথে ডা. মো. তরিকুল হাসান
জিবিএস রোগটির নাম শুনলেই আমার ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষার কথা মনে পড়ে! এই প্রফে মেডিসিন পরীক্ষায় দুইটি ভাইভা বোর্ড ফেস করতে হয়। প্রথম বোর্ডে অধ্যাপক (ডা.) জাকির হোসেন স্যার ও ডার্মাটোলজির একজন স্যার ছিলেন। এই বোর্ডে মোটামুটি পরীক্ষা দিয়ে ২য় বোর্ডে ঢুকলাম। দেখি অধ্যাপক (ডা.) অমরেশ চন্দ্র স্যার ও শিশু বিভাগের অধ্যাপক (ডা.) মুস্তাকিম স্যার বোর্ডে আছেন।
প্রথমে শিশু বিভাগের প্রশ্ন তুলতে বলা হলো। একের পর এক প্রশ্ন সঠিকভাবে উত্তর দিতে ব্যর্থ হলাম। স্যাররা হতাশ হবেন কি? আমি নিজেই হতাশ হয়ে গেলাম! মুস্তাকিম স্যার শিশু বিভাগের শেষ টোকেন তুলতে বললেন। লেখা জিবিএস!
দেখে স্যার মুচকি হাসলেন। হয়তো বুঝতে পারলেন এই বালক এই নাম শুনেছে কিনা সন্দেহ!
স্যার বললেন, তুমি জিবিএস সম্বন্ধে কি কিছু জান? জানলে, যা জান তা বল।
আশ্চর্য ব্যাপার আমিও জিবিএস দেখে মুচকি হাসলাম। আমি নি:সন্দেহ হলাম আল্লাহ আমাকে পাশ করাচ্ছেন। কারণ, আমি জিবিএস সম্বন্ধে খুব ভালো পড়েছি।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আমি সাধারণত প্রথম বক্তা হিসেবে আবির্ভূত হতাম। সেক্ষেত্রে 'ঝাড়া মুখস্থকরণ ও উদগীরণ' এই বিষয়ে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। আমি স্যারের চোখের দিকে তাকিয়ে জিবিএসের প্যাথোফিজিওলজি থেকে শুরু করে প্রোগনোসিস পর্যন্ত বিশাল এক বক্তব্য দিয়ে বসলাম।
অমরেশ স্যার আয়েশী ভঙ্গিতে আধশোয়াভাবে বসে ছিলেন। স্যার টান টান হয়ে উঠে বসে বললেন, বাবা জিবিএস সম্বন্ধে তুমি এতো কিছু শিখলে কিভাবে! এই উত্তর এর রেশে মেডিসিন অংশেও পরীক্ষা পার হয়ে গেলো।
গতমাসে পুরুষ ওয়ার্ডে ছিলাম এখন মহিলা ওয়ার্ডে রোগী দেখি। প্রচুর রোগী। এর মধ্যে আজকে রোগী রিসিভ করার দায়িত্ব। হঠাৎ খবর পেলাম বিভাগীয় প্রধান মানবেন্দ্র স্যার রাউন্ডে আসবেন। রোগীর ফলোআপ আরো ভালোভাবে দিতে হবে। কয়েকজনের নাকে নল পড়াতে হবে। এলপিও আছে দুইটা।
এরমধ্যে পুরুষ ওয়ার্ড থেকে এই জিবিএস রোগীর স্বজন জানালেন আজ তাদের ছুটি হচ্ছে। কিন্তু আমার সাথে দেখা না করে রোগী বিদায় নিতে রাজি না। আমি গিয়ে মাথায় হাত বুলাতেই উনি আমাকে অবাক করে দাঁড়িয়ে গেলেন। উনারা একটা ছবি তুলে রাখার আবদার করলেন। আমি বললাম, আমিও একটা তুলে রাখি। আলহামদুলিল্লাহ, মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড় সম্পদ আর কি হতে পারে?
______________
জিবিএস!
ডা. মো. তরিকুল হাসান
০৫/০৩/২৩।