একজন অজ্ঞান রোগীর গল্প!
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগ
গত বুধবারের কথা৷ বানের জলের মত রোগী আসছে। রোগী রিসিভ করছি সাদিক ভাই, আনোয়ার ভাই ও আমি। সাদিক ভাই, আনোয়ার ভাই দুজনেরই মেডিসিনে এফসিপিএস কমপ্লিট করা। আমি নিউরোলজি বিভাগের সামান্য ট্রেইনী চিকিৎসক। তাদের মত জ্ঞানী ব্যক্তিদের সাথে কাজ করা অনেক সৌভাগ্যের। আলহামদুলিল্লাহ।
মর্নিং শিফট একদম শেষ হয়ে আসছে। রোগীর চাপে মাথার বাম দিকে ভোতা এক ধরনের ঝিন ঝিন মাথাব্যথা হচ্ছে। ভ্রু কুচকে ভাবছিলাম, ভেতরে ভেতরে কোন দৈত্য বাসা বাধছে নাতো?
মফিজ সাহেব আমাদের সহকারী। টি-রুম লক করে বেরোচ্ছিলেন।
আমি বললাম, লক করবেন না; কফি খাবো। এমন সময়েই আরেকটি রোগী এলো। একদম অচেতন রোগী। হঠাৎ দেখলে মৃত মনে হয়। দ্রুত হিস্ট্রি নিলাম-
-আগে থেকে ডায়াবেটিস বা হাই-প্রেশার ছিল?
-না।
....
দ্রুত ভাইটাল চেক করলাম। চোখে লাইট ফেললাম, ঘাড় দেখলাম, পায়ের প্লান্টার রেসপন্স দেখলাম। অর্ডার লিখবো। এসময় মনে পড়লো, অজ্ঞান রোগীর ব্লাড সুগার দেখা জরুরী। রোগী ডায়াবেটিক না? তবু জরুরী।
সরকারি হাসপাতালে আমাদের এক্সট্রিম লেভেলের অল্প রিসোর্সে কাজ করতে হয়। প্রায় দেড়শো রোগীর জন্য আমাদের ওয়ার্ডে একটি মাত্র গ্লুকোমিটার আছে। হারাধনের সেই একটিমাত্র ছেলেকে সিস্টারের কাছ থেকে নিলাম।
ব্লাড সুগার মাত্র ০.৯!!
আমার জীবনে দেখা এটি সর্বনিম্ন ব্লাড সুগার। হাতের কাছে ২৫% গ্লুকোজ পাওয়া গেলো না। ওয়ার্ডে ৫% গ্লুকোজ ছিল তা-ই দ্রুত শুরু করতে বললাম। রোগী মৃত্যুর কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। সিস্টাররা চারবার চেষ্টা করেও ক্যানুলা করতে পারলো না। আমি তাদের সঙ্গে নেমে গেলাম। খুঁজে খুঁজে একটা মোটামুটি শিরা বের করলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে ক্যানুলা করা সম্ভব হলো।
আমি রোগীর লোককে বললাম, রুমের ভেতর থেকে একটা স্যালাইন স্ট্যান্ড নিয়ে আসেন। লোকটা আমতা আমতা করতে লাগলো। ভয়ে ভয়ে বললো, স্যার কেউ যদি কিছু বলে, আপনি একটু আমার সাথে আসেন। তার কথা শুনে সিস্টাররা এই সঙ্গীন মুহূর্তেও হেসে দিল। একজন বললো, 'পাইছো একজন ফিরি ডাক্তার, তারে দিয়া স্ট্যান্ডও আনাও!'
ইভিনিং ডাক্তারকে হ্যান্ডওভার দিয়ে বাসায় ফিরে এসেছিলাম। আজ হঠাৎ মনে পড়ায় সেদিনের ইভিনিং ডাক্তারকে তার কুশল জিজ্ঞেস করলাম। শুনলাম, সেই প্রায় মৃত রোগী যখন কিছুক্ষণ পর উঠে বসলো তখন খুশির চোটে রোগীর লোকজন নাকি আমাদের দেবতা (নাউজুবিল্লাহ) আখ্যা দিয়ে গেছে!
_______________
একজন অজ্ঞান রোগীর গল্প!
ডা. মো. তরিকুল হাসান
১৮/০২/২৩
ময়মনসিংহ