অপারেশনটা আমার নিউরোসার্জারী জীবনে ব্যাপক প্রভাব রেখেছে

অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী
2023-01-28 13:15:36
অপারেশনটা আমার নিউরোসার্জারী জীবনে ব্যাপক প্রভাব রেখেছে

ব্রেইন টিউমার অপারেশনের পর সুস্থ জীবন-যাপন করা রোগীর সঙ্গে বিশিষ্ট নিউরো সার্জন অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী

আলহামদুলিল্লাহ।

মাস্ক পরা মেয়েটি সম্পর্কে আজ লিখতে পেরে মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি  এবং এই রোগী ; তার পরিবারের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। 

গতকাল সন্ধ্যা : ২০২৩ সালের জানুয়ারী মাস:

সে আমার শেভরন চেম্বারে ; সাথে তার মেয়ে। এক অনাবিল আনন্দে মন ভরে গেল -

আমি কি ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভেবেছিলাম তাকে সন্তান সহ দেখবো?  আমি জানি না... সত্যিই আমার মনে  নাই।

২০১৪ সালের খুব সম্ভবত আগষ্ট মাসে তার মা তাকে আমার কাছে নিয়ে আসে; আমার শেভরনের চেম্বারে। তখন শুধু শুক্রবার চেম্বার করতাম শেভরনে; আমি তখন ন্যাশনাল ইনিষ্টিটিউট অব নিউরোসাইন্সেস এন্ড হাসপাতাল (নিনস) এ সহযোগী অধ্যাপক ও ব্লু ইউনিট প্রধান হিসাবে কর্মরত। ওর মা চেম্বারে প্রবেশ করার কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ ডুকরে কান্না করে বললো, তার মেয়ের ব্রেইন টিউমার !! 


আমি সাথে নিয়ে আসা MRI Scan দেখলাম। ব্রেইনের অত্যন্ত ক্রিটিকাল স্থানে এক বিরাট টিউমার। সেরিবেলো পন্টাইন এঙ্গেল থেকে বিস্তৃত হয়ে ব্রেইন স্টিম ( Cerebello-pontine angle extended to Posterior fossa with severe compression to brain stem) সহ পোস্টেরিয়র ফোসা পর্যন্ত বিস্তৃত।

তখন বাংলাদেশ নিউরোসার্জারী আজকের পর্যায়ে আসেনি। আমিও এত বড়; জটিল এবং সেনসেটিভ জোনে খুব বেশি অপারেশন করি নাই।

তৎকালীন সময়ে আমার সিনিয়রদের কাছে রেফার করতে চাইলে- রোগীর মা জানালেন, সিনিয়র নিউরোসার্জন যাদের কাছে তারা গিয়েছিল তারা কেউ রাজি হন নাই অপারেশন করতে; বরং তারা বিদেশে নিয়ে যেতে উপদেশ দিয়েছেন। কিন্তু তাদের সে সক্ষমতা নাই এবং তারা আমাকে দিয়েই অপারেশন করাতে ইচ্ছুক।

আমি রোগী ও রোগীর স্বজনকে অপারেশন ঝুঁকি বুঝিয়ে এবং তাদের সম্মতিতে ব্রেইন টিউমারের এই জটিল অপারেশনের দায়িত্ব নেই। খুব সম্ভবত সেপ্টেম্বর মাস ২০১৪ তে তার অপারেশন করি আমার অপারেশন টিম নিয়ে ঢাকার পান্থপথের হেলথ এন্ড হোপ হাসপাতালে। মোটামুটিভাবে পুরো টিউমার অপারেশন করতে সমর্থ হই। তৎকালীন সময়ে সহযোগী অধ্যাপক ডা. মানস ছিলেন এ্যানেসথেসিওলজিস্ট; অপারেশন টিমের অন্য সদস্য ছিলেন খুব সম্ভবত ডা. ফরহাদ;  ডা মোরশেদ; ডা মারুফ; ডা ফজলু...। খুব সম্ভবত  ৭-৮ ঘন্টা সময় লেগেছিল। 

অপারেশনের আগে পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত নিউরোসার্জনদের অভিমত গ্রহন করি। (তাদের কিছু সাজেশন সম্বলিত বক্তব্য আপলোড করা আছে)। রোগীকে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডেই রাখা হয়; কোন ICU সাপোর্ট লাগে নাই। আল্লাহর অশেষ রহমতে কোন ধরনের জটিলতা ছাড়া রোগী সুস্থ হয়।

এই অপারেশনটা আমার নিউরোসার্জারী জীবনে ব্যাপক প্রভাব রেখেছে। আমার এবং আমাদের নিজেদের সক্ষমতা ও বিশ্বাস অনেক বৃদ্ধি পায়; এবং অনেকের আস্থা ও আশা আমাদের প্রতি বেড়ে যায় - যা পরবর্তীতে নিনসে (Blue Unit of National Institute of neuroscience &Hospital ; NINS) আমার নেতৃত্বের ব্লু ইউনিটের কর্মতৎপরতা ও সাফল্যের অন্যতম নেপথ্য প্রভাবক।

আমি আমাদের প্রতি আস্থা রেখে অপারেশন সুযোগ দেয়ার জন্য রোগী ও তার স্বজনদের আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার টিমের সদস্যদেরও অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি আজ আবারও। 

আর মহান আল্লাহর কাছে আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।


আরও দেখুন: