অনন্য পেশা চিকিৎসা
ডা. মো: তরিকুল হাসান
ছেলেটির বয়স বড়জোর ২৫ হতে পারে। মুখভর্তি দাড়ি। আমার রুমের ফ্লোরে শুয়ে আছে। গায়ে হাত দিয়ে দেখলাম, জ্বর আছে। হাতে অদ্ভূত অঙ্গভঙ্গি করছে। অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছে! ঘাড় শক্ত। পকেট থেকে চাবি বের করে পায়ের তালুতে এক ধরনের রিফ্লেক্স দেখলাম। বোঝা যাচ্ছে- সে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছে। দ্রুত রোগ শনাক্ত না করতে পারলে একটি পরিবার শেষ হয়ে যাবে।
নিউরোলজিস্ট সাজ্জাদ ভাই দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বললেন, আমার ধারণা তার টিবি থেকে মস্তিষ্কের ইনফেকশন হয়েছে। তুমি তার এলপি, বুকের এক্স-রে করো।
এলপি হলো এক ধরনের পরীক্ষার প্রক্রিয়া, যাতে শিরদাঁড়া থেকে রস বের করে ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হয়। মস্তিষ্কের ইনফেকশনের রোগীদের এই পরীক্ষা করার সময় আবার গবেষণার জন্য হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি রাশেদ সাহেবকে স্যাম্পল দিতে হয়।
মনে মনে হিসেব করে দেখলাম, তিনটি এলপি করতে হবে। রেসিডেন্ট সাজ্জাদ আমার বন্ধু। এক নামে দুইজন আছেন আমাদের ওয়ার্ডে। সাজ্জাদের এলপি করার হাত ভালো। তবে আজ সে ব্যস্ত। আজ তার রোগী রিসিভ করার দায়িত্ব। আমি তাকে বললাম, বন্ধু আমি কিছু এলপি করছি, অসুবিধা হলে তোমাকে ডাকবো।
এলপি ও এক্স-রে থেকে নিঃসন্দেহ হলাম, নিউরোলজিস্ট সাজ্জাদ ভাইয়ের সন্দেহ ঠিক। ভাইয়ার ক্লিনিক্যাল আই খুব ভালো। খুব দ্রুতই সিদ্ধান্তে চলে আসেন। টিবি বুকে, মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়েছে। ১৭ তারিখ টিবির ওষুধ শুরু করলাম। গতকাল রোগীকে দেখলাম তার স্ত্রীর সাথে হেসে হেসে কথা বলছে!
মাঝে মাঝে ভাবি- সৃষ্টিকর্তার তৈরি পেশার মধ্যে চিকিৎসা পেশা একটি অনন্য পেশা! আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ এই পেশায় কবুল করেছেন। নিজের চাকরিও হলো আবার মানুষের উপকারও করা হলো।