শিশুদের লিঙ্গ বিকাশজনিত ত্রুটি
অধ্যাপক ডা. মালিহা রশিদ, বিভাগীয় প্রধান (প্রাক্তন) স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
তৃতীয় লিঙ্গ বা থার্ড জেন্ডার, জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া, ট্রান্সজেন্ডার এবং লিঙ্গ বিকাশজনিত ত্রুটি বা ডিজঅর্ডার অফসেক্স ডেভলপমেন্ট। এই বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তি এবং ভুল কনসেপ্ট আছে। এটাকে আমরা পরিস্কার করতে চাই।
ডিজঅর্ডার অফসেক্স ডেভলপমেন্ট কাকে বলে?
প্রথমেই আমরা আসি ডিজঅর্ডার অফসেক্স ডেভলপমেন্ট বলতে কি বুঝি। অর্থাৎ লিঙ্গ বিকাশজনিত ত্রুটি। আমরা লিঙ্গ বলতে বুঝি যে, একটা মানুষের বাহিরগত, ভিতরগত এবং হরমোনাল বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে সে মেয়ে অথবা ছেলে হিসাবে প্রকাশিত হয়। যখন তার বাইরের দিকটা দেখে আমরা সঠিকভাবে বুঝতে পারি না যে, সে ছেলে না মেয়ে অথবা ছেলে মেয়ের মাঝা-মাঝি। যেটাকে একসময় ইন্টারসেক্স অথবা হার্মফোডাইটস বলা হতো। বর্তমানে সেটাকেই মেডিকেলের পরিভাষায় ডিজঅর্ডার অফসেক্স ডেভলপমেন্ট বলে। জন্মের পরেই এদেরকে শনাক্ত করা যায়। শুরুতেই চিকিৎসা দিলে ধাপে ধাপে তারা জেন্ডার অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে ছেলে অথবা মেয়ে হিসেবে বড় হতে পারে।
জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া ট্রান্সজেন্ডার কি?
জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া হচ্ছে আরেকটি বিষয়, সেটা হচ্ছে- একজন ছেলে অথবা মেয়ে জন্মের পরে তার যে লিঙ্গ বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মায় সেখানে তার কোন সমস্যা থাকে না। কিন্তু সে যে এই লিঙ্গ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে সেটা মানসিকভাবে তার ভাল লাগেনা। বিপরীত লিঙ্গ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করে। এরকম বিষয়টিকে বলা হয় জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া। যখন এরকম অবস্থা হয়, তখন যদি কেউ তার সেই লিঙ্গ ট্র্যানস্ফার করে অর্থাৎ জন্মের সময় তার যেই লিঙ্গ ছিল সেটা ট্র্যানস্ফার করে তখন তাকে ট্রান্সজেন্ডার বলা হয়।
থার্ড জেন্ডার কি?
আর থার্ড জেন্ডার হচ্ছে- যখন মানুষ এই ডিজঅর্ডার অপসেক্স ডেভলপমেন্ট অথবা জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া অথবা ট্রান্সজেন্ডার যেটাই বলেন সেগুলোর যথাযথ চিকিৎসার আওতায় আসে না এবং চিকিৎসার সহায়তা পায় না। তখন সমাজে তাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। পরিবারে থাকতে তাদের কষ্ট হয়। তারা বিভিন্ন ধরনের ব্লেইমের শিকার হয়, বুলিং এর শিকার হয়। তখন তারা নিজেরা নিজেদেরকে বসবাসের জন্য আলাদা একটা গ্রুপ বা একটা সমাজ তৈরি করে। এটা শুধুমাত্র তাদের জীবনধারণের জন্য। এই ধরনের জনগোষ্ঠীকে আমরা থার্ড জেন্ডার অথবা তৃতীয় লিঙ্গ বলে থাকি।
তৃতীয় লিঙ্গ আসলে কোন লিঙ্গ নয়। এটি হচ্ছে তাদের পেশা অথবা তাদের কমিউনিটি। তারা নিজেরা নিজেদেরকে থার্ড জেন্ডার হিসেবে উপস্থাপন করে। প্রকৃতপক্ষে তারা হচ্ছে ডিজঅর্ডার অফসেক্স ডেভলপমেন্ট এবং জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি। এরা সঠিক পদ্ধতিতে চিকিৎসার আওতায় আসেনি।
লেখক : অধ্যাপক ডা. মালিহা রশিদ
বিভাগীয় প্রধান (প্রাক্তন) স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।