ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইতিহাস এবং ব্যাচকে K কেন বলে?
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ
আমি তখন চতুর্থ বছরের ছাত্র। সার্জারির বিভাগের নতুন শিক্ষক এলেন। সহকারী অধ্যাপক শহীদ হোসেন স্যার। স্যার ক্লাশে নিজের পরিচয় দিয়ে বললেনঃ আমি DMCএর K-29 ব্যাচ।
একদিন স্যারকে জিজ্ঞাসা করলামঃ স্যার, ডিএমসি ছাত্ররা K কেন বলে?
স্যার বললেনঃ Calcutta Medical College অন্তর্ভুক্ত ছিলো বলেই K বলে।
কিন্তু স্যারের উত্তর সঠিক মনোপ্রুত হলো না। কারণ ক্যালকাটা C দিয়ে হয়। আমার এক আত্মীয় ছিলেন K-10 ব্যাচ। উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম। উনি বিস্তারিত বললেন।
পূর্ব বাংলার খাজনার অর্থ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের এতো উন্নয়ন। ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধন্ত নিলো,
দুই বাংলার বিভক্ত। সেক্ষেত্রে পূর্ব বাংলার উন্নতি হবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের নেতৃস্থানীয়রা চায় না দুই বাংলা বিভক্ত হউক। তারা জানে, বিভক্ত হলে পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন থেমে যাবে।
১৯০৫ সনে দুই বাংলা বিভক্ত হলো। ১৯০৪ সনে East Bengal Governor's house (বর্তমান বঙ্গভবন) আর ১৯০৫ সনের East Bengal Secretariate Building (বর্তমান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ বিল্ডিং) নির্মিত হলো।
সরকার গঠন হলো ঠিকই কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের আন্দোলনের মুখে পূর্ব বাংলা সরকার ১৯১১ সনে বিলুপ্ত হয়ে যায়। East Bengal Secretariate Building এ তালা ঝুলতে লাগলো। রাস্তার কুকুরদের আবাস।
১৯২১ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৬ সনে শেরে বাংলা শিক্ষামন্ত্রী হলেন। বর্তমান DMCH ইমারজেন্সী বিভাগকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগার হিসাবে ব্যবহৃত হলো। আর বাকী বিল্ডিং বিশ্ববিদ্যলয়ের মেডিক্যাল সেন্টার।
তৎকালীন মুসলমান ছাত্র/ছাত্রী মেট্রিক পাশ করতে পারতো না। ৯৯% পরীক্ষক ছিলো হিন্দু। আর পরীক্ষার খাতায় রোল নম্বরের সাথে নাম থাকতো।
সকলের ধর্মের প্রতি দুর্বলতা আছে। শেরে বাংলা একটি বিল পাশ করলেন, পরীক্ষার খাতায়
কেন্দ্রে নাম আর রোল নম্বর থাকবে। কোন নাম থাকবে না। ১৯৩৭ সনে শেরে বাংলা দুই বাংলার প্রধানমন্ত্রী হলেন। উনি প্রথমেই বিল পাশ করলেন সরকারী চাকরীর ক্ষেত্রে
হিন্দু/মুসলিম কোটা সিস্টেম। মেধার দিক থেকে হিন্দুরা অনেক বেশী অধিকারী।
তারপর উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটদের সাথে মিটিং করে বললেনঃ আপনারা ব্রিটিশ সরকারের কাছে সুপারিশ করুন। আপনাদের হাসপাতালটিকে মেডিক্যাল কলেজ
হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে।
১৯৩৯ সনে সিন্ডিকেট ব্রিটিশ সরকারের নিকট আবেদন করলেন। কিন্তু দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কারণে অর্থ সংকট। ব্রিটিশ সরকার এই আবেদন নাকচ করে দেন।
ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস ছাত্র ভর্তির জন্য় বিভিন্ন প্রদেশের কোটা সিস্টেম ছিলো। কিন্তু পূর্ব বাংলার কোন কোটা ছিলো না।
১৯৪১ সনে শেরে বাংলা বিদায়ের আগে, পূর্ব বাংলাকে ১১তম কোটায় অন্তর্ভুক্ত করেন। এলফা/বেটাক্যালি ১১তম কোটা K হয়। K ১ থেকে ৪ পর্যন্ত ক্যালকাটা মেডিক্যালের ছাত্র ছিলো।
ব্রিটিশ তখন পাক-ভারত ছাড়ার চিন্তা করছে। ১৯৪৬ এর ১০ই জুলাই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত করা হয়। K-1 to K-4 ব্যাচ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে শিফ্ট করে দেয়। K-5 ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের প্রথম ব্যাচ হিসাবে ভর্তি হলো।
ভুল ত্রুটি হলে প্লিজ জানাবেন।