মাঝেমধ্যে মাথাটা জাম্বুরা হয়ে যায়
ডা. সাঈদ এনাম, সহকারী অধ্যাপক,মনোরোগ বিভাগ, এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, সিলেট
আজ এক রোগীনী -বয়স ৩৮, চেম্বারে এসে বললেন তার মাথা নাকি প্রায় সময় "জাম্বুরা" হয়ে যায়।
তার ফিলিংস এক্সেটলি বুঝার জন্যে প্রায় ৭/৮ মিনিট আমি এ বিষয়ে কথা চালাচালি করতে থাকলাম।
জাম্বুরা একটা ফল। অনুভূতি ফলের সাথে যায় না। তারপরও আমার মনে হলো, আমি হয়তো নতুন কিছু শিখতে যাচ্ছি এ রোগীর কাছ থেকে।
বই হলো শিক্ষক যে শিক্ষক মৃত কিন্তু রোগী হলো সেই শিক্ষক যিনি জীবিত।
সাধারণত রোগীরা যা ফিল করে সে তার নিজের ভাষায় অত্যন্ত চমৎকার উপমা দিয়ে বলার চেষ্টা করে। যা টেক্সট বইয়ে ঠিক ওভাবে লেখা থাকেনা। তাছাড়া টেক্সট বুকের বেশীর রাইটার বিদেশী।
তার মাথা "জাম্বুরা" ফিল হয় এটি বুঝার জন্যে আমি যতই চেষ্টা করছি, রোগীর সিমটমের যতই গভীরে যাচ্ছি দেখলাম ভদ্র মহিলা ততই খুশি হচ্ছিলেন। তার চোখ চকচক করছিলো।
এক পর্যায়ে বললেন, "স্যার এখন আর আমার মাথা জাম্বুরা মনে হচ্ছেনা"।
কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম তার অনুভূতি জানতে, এটা আমার জানা প্রয়োজন চিকিৎসার স্বার্থে। আমি নাছোড়বান্দা।
অবশেষে অনেক চিন্তা ভাবনা করে তিনি বললেন, "আসলে মাঝেমধ্যে আমার মাথা হিমশিতল ঠান্ডা জাম্বুরার মতো হয়ে যায়। মাথা হয়ে যায় ঠান্ডা আর শক্ত ও নরমের মাঝামাঝি একটা জড় পদার্থ"।
এতোদিন "মাথা গরম হয়ে যায়" এ সিমটম নিয়ে প্রায় শতকরা ৯৯ ভাগ রোগীই আসতেন, অভিযোগ করতেন আর আমি চিকিৎসা করতাম।
আজ এই প্রথম একজন রোগী এসে বললেন, মাঝেমধ্যে তার মাথা ঠান্ডা শীতল হয়ে যায়।
যাবার সময় জিগ্যেস করলাম, "এখন কেমন লাগছে আপনার?"
তিনি খুশি হলেন, হেসে বললেন, "স্যার বেশ ভালো লাগছে, অনেকটা পাকা পেপের মত নরম, উষ্ণ"। আর ভালো লাগছে আপনার ধৈর্য দেখে।