ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রতারনা ও ভারতের প্রতি অতি বিশ্বাস

অধ্যাপক ডা. এ কে এম রেজাউল করিম
2022-11-15 19:29:27
ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রতারনা ও ভারতের প্রতি অতি বিশ্বাস

ক্যান্সারের চিকিৎসা বিষয়ে লিখেছেন শিশু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ কে এম রেজাউল করিম

ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রতারনা, ভারতের প্রতি অতি বিশ্বাস, একটি শিশুর করুন পরিনতি-

শিশু -সুষমা ( ছদ্মনাম) কম্পিউটার ইন্জিনিয়ার পিতার একমাত্র মেয়ে। একমাস যাবত জ্বরে ভূগছিল, সাথে শারিরীক দূর্বলতা, ক্রমেই ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া এই ছিল প্রাথমিক লক্ষণ। পরীক্ষা নিরিক্ষা করার পর ধরা পরল শিশুটির Acute Lymphoblastic Leukemia (ALL) নামক রক্তরোগ হয়েছে।খবরটি মা-বাবার একমাত্র সন্তানের সুখের নীড়ে যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতই ছিল। প্রাথমিক শোক কাটিয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শে ক্যান্সার চিকিৎসা শুরু করলেন।

সৌভাগ্যক্রমে সুষমার ক্যান্সার ছিল লো রিস্ক বা কম ঝুঁকিপূর্ন ধরনের। যে কারনে চিকিৎসা শুরু করার পর দ্রুতই তার রোগের লক্ষন কমতে থাকে। চিকিৎসার প্রথম দিকে ক্যান্সার ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় বমি ভাব, শারিরীক দূর্বলতা ইত্যাদি বেড়ে গেলে ও ক্রমেই অবস্থার উন্নতি হতে লাগল। পাঁচ সপ্তাহ চিকিৎসার পর সুষমা প্রায়ই সুস্থ্যই বলা যায়।

চিকিৎসকরা যখন পুনরায় বোন ম্যারো পরীক্ষা করে জানালেন সুষমার ক্যান্সার রেমিশনে গেছে অর্থাৎ বোন ম্যারো বা অস্থি মজ্জায় ক্যান্সার সেল মারাত্বক পর্যায় (৮০%) থেকে কমে ১% এ নেমে গেছে। তার শরীরে ক্যান্সার এর যে লক্ষন ছিল সবগুলোই মিলিয়ে গেছে।

এবার শুরু হবে নতুন চিকিৎসার পালা। ALL বা ব্লাড ক্যান্সার এর পরিপূর্ন সুস্থতার জন্য ২-২.৫ বছর ব্যাপী দীর্ঘ চিকিৎসা করতে হয়। এই দীর্ঘ চিকিৎসাকে ক্ষতগুলো স্টেজ বা পর্যায়ে ভাগ করা হয়।

যেমন-
1. Induction of Remission
2. Consolidation
3. Interim maintenance
4. Delayed intensification
সবশেষে সল্প মাত্রায় কেমো সমন্বয়ে
5. Maintenance cycle.

সুষমা কেবল প্রথম পর্যায়ের চিকিৎসা শেষ করেছে, যদিও এটি খুব দুরূহ ও কষ্টকর চিকিৎসা।এই চিকিৎসার সফল সমাপ্তির উপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে সুস্থ্য হবার সম্ভাবনা।

সুষমা ১ম সাইকেল বা ইনডাকশন শেষ করে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে বাসায় আসল। পরবর্তি সাইকেল বাসা থেকে হাসপাতালে আসাযাওয়া করে চলবে। সমস্যা হলে আবার হাসপাতালে ভর্তি।

বাসায় আসার পর সুষমার বাবার মনেই প্রথম সন্দেহটা আসে! আসলেই কি আমার মেয়ের ব্লাড ক্যান্সার হয়েছিল! লোকমুখে শুনেছিল ক্যান্সার ভয়ংকর রোগ, যেখানে মরন যখন তখন থাবা বসায়। সুষমার ত চিকিৎসাকালীন প্রচন্ড বমি ভাব, মাথার চুল পরে যাওয়া ছাড়া তেমন কিছুই হয় নি।

সেদিন ও ফেসবুকে পড়েছে বাংলাদেশের ডাক্তাররা এক রোগীর ক্যান্সার ডায়াগনসিস করেছে, ভারতে গিয়ে শুনে আসলে ক্যান্সার নয়। সৃষ্টিকর্তা জানেন আমাদের ছোট সোনার আসলে কি হয়েছে!

দুয়েকজন ঘনিষ্ঠজনদের সাথে পরামর্শের করলে তারা ও ভারতে যাবার পরামর্শ দেন। এবার তারা বাংলাদেশের চিকিৎসকের সব পরামর্শ, উপদেশ পেছনে ফেলে নতুন গন্তব্য ঠিক করেন।

নতুন গন্তব্য-

বাংলাদেশের রোগীদের সবচেয়ে পছন্দের হাসপাতাল-
সিএমসি, ভেলুর।

চলবে -


আরও দেখুন: