খেলতে খেলতে খাওয়া!

ডা. তাইফুর রহমান, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
2022-11-12 10:46:36
খেলতে খেলতে খাওয়া!

ডা. তাইফুর রহমান, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ

ছেলে কম্পিউটারে গেমস খেলছে আর তার মা মুখে লোকমা তুলে দিচ্ছে। এখানে মা-ই সিদ্ধান্ত নেয় কোন খাবারটা তার মজা লাগবে, কখন তার পেট ভরবে, কখন তার ক্ষুধা মিটবে, কখন তার খাওয়া শেষ হবে।
ভালোই তো। অল্প সময়ে নিজের ইচ্ছেমত খাইয়ে দেয়া যায়।

সমস্যা কোথায়?

এই বাচ্চা বুঝলোইনা সে কি কি খেলো। বুঝলোনা খাবারটা কতটুকু মজাদার ছিলো। জিহ্বার একেকটা অংশ একেক ধরণের স্বাদ অনুধাবণ করে। সেগুলো ক্লাম্সি হয়ে যায় । তাই বুঝতে পারে না কোন খাবারের কি স্বাদ। বুঝলোনা কখন তার ক্ষুধা মিটলো। বুঝলোনা উপাদেয় খাবার খাওয়ার কি তৃপ্তি।

মন-মগজের সাথে সাথে শরীরটাও অন্ধ হয়ে যায় এই পরিস্থিতিতে। সিগনাল ডাইভার্টেড হয়।

একেককটা খাদ্য উপাদান হজম করার জন্য একেক ধরনের এনজাইম সিক্রেশন হয়। সেখানেও তৈরি হয় বিভ্রান্তি। তাই হজমটা পরিকল্পিত ও পূর্ণাঙ্গ হয় না।
টিভি, মোবাইল বা কম্পিউটারে মনোযোগ থাকার কারণে পর্যাপ্ত খাওয়ার পরও ব্রেইনের সেটাইটি সেন্টার স্টিমুলেটেট হয় না। তাই আপনি যে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি খেয়ে ফেলছেন সেটা বুঝতে পারেন না। তাই আপনার দিন দিন মোটা হওয়ার প্রবণতাও বেড়ে যাবে অনেকগুণ।

খুব দ্রুত খাওয়াও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। দ্রুত খেলে সেটাইটি সেন্টার স্টিমুলেটেড হওয়ার আগেই অনেক খাওয়া হয়ে যায়।

একবার বাসায় ফিরে দেখলাম আমার ছেলে কম্পিউটারে গেমস খেলছে আর তার মা খাবার তুলে দিচ্ছে মুখে। আমি নিষেধ করলাম এভাবে খাওয়াতে। তাকে খাওয়ানো শেষ করার পর আমরা খেতে বসে ডাকলাম, ইশমাম খেতে আসো।
ছেলে উত্তর দিলো আসতেছি। তার মানে এতোক্ষণ যে খেয়েছে, খাওয়া শেষ করেছে সে বুঝতেই পারে নি!

তাই খাওয়ার সময় স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলো, কেবলমাত্র খাবারের দিকেই মনোযোগ দেওয়া। তাহলে খাবার সঠিকভাবে হজম হবে। কারণ হলো মনোযোগ অন্যদিকে থাকলে পেটে ঠিকমতো হজম প্রক্রিয়া শুরুই হয় না।

গবেষনায় দেখা গেছে, যারা টিভি চালিয়ে খাদ্য গ্রহণ করেন তাদের মধ্যে দিনের প্রধান আহার গ্রহণ করার সময় ফাস্টফুড গ্রহণ করার প্রবণতা বেশি থাকে । সেই তুলনায় যারা টিভি না চালিয়ে খাওয়া-দাওয়া করেন তারা ন্যচারাল ফুড বেশি খায়।
নিউ ইয়র্কের ট্রয়ের দ্য সেইজ কলেজের সহকারি অধ্যাপক ইলেন ফিটজ প্যাটরিক জানিয়েছেন, খাওয়ার সময় মনোযোগ যখন একটুও নষ্ট হচ্ছে না, কোথাও টিভি চলছে না, তখন বাচ্চারা খাওয়ার আনন্দ খুব উপভোগ করতে পারে।

ফিটজ প্যাটরিক আরও জানিয়েছেন, টিভির বিজ্ঞাপন শিশুদের অস্বাস্থ্যকর খাদ্য খেতে প্ররোচিত করে। তারা দিনের প্রধান খাদ্য খাওয়ার সময় কী খাবে সেটা তারা টিভির বিজ্ঞাপন দেখেই ঠিক করে নেয়। তিনি জানিয়েছেন, প্রত্যেকটা পরিবারেই এই একসাথে খাওয়ার ব্যাপারটাকে একটা আনন্দপূর্ণ সময়ের সূত্র হিসেবে দেখা উচিত। তখন মনে রাখতে হবে খাওয়াটা শুধু স্বাস্থ্যের প্রয়োজনেই নয়। যেসব পরিবারে খাওয়ার সময়ে সকলে গল্পগুজব করে, একে অন্যের সঙ্গে মনের কথা শেয়ার করে নেন, তারা টিভির সুইচ বন্ধ করেই খাওয়াদাওয়া করেন। তাদের খাওয়া খুব ভাল হয়। দেহের পুষ্টি বৃদ্ধি হয় এবং তারা সকলে একসঙ্গে খাওয়াটাকে খুব উপভোগও করেন।

হৃদরোগ থেকে বাঁচার জন্য খাদ্য গ্রহণের সময় টিভি দেখা, মোবাইল দেখা, পেপার পড়া, বইপড়া বর্জন করা একান্ত বাঞ্ছনীয়।

মনে রাখতে হবে, প্রতিটি খাদ্যকনা আল্লাহ পাকের অপূর্ব নেয়ামত। কোথায় এই শস্য উৎপাদিত হয়েছে, কে উৎপাদন করেছে, খাওয়ার উপযোগী হয়েছে কোথায়, কোন রুটে আপনার কাছে এসেছে আপনি কিছুই জানেন না। অথচ আপনার প্লেটে আপনি খাচ্ছেন!!

সুতরাং শুকরিয়া স্বরূপ অন্তত মনোযোগ দিন, অনুধাবন করুন।

মনোযোগ দিয়ে খাদ্য গ্রহণ করা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা। বিসমিল্লাহ বলে যখনই খাদ্যে হাত রাখা হয় তখনই শরীর মন প্রস্তুত হয়ে যায় এটা গ্রহণ করার জন্য। এটাকে হজম করার সকল সিস্টেম, সকল এনজাইম প্রস্তুত হয়ে যায় তৎক্ষনাৎ।
এটাই সাইন্স,এটাই ফিজিওলজি। এটাই মহান স্রস্টার অপূর্ব সুন্দর সৃষ্টিকৌশল।


আরও দেখুন: