ইন্ডিয়ায় ভুল চিকিৎসায় অসুস্থ রোগীকে সুস্থ করে তুললেন বাংলাদেশী চিকিৎসক
এমআরআই রিপোর্ট
স্পাইন সার্জারিতে সবচেয়ে কমন স্বীকৃত কমপ্লিকেশন হচ্ছে রং লেভেল সার্জারি। স্পাইনের কোন এক লেভেলে ডিস্ক প্রলাপ্স অথবা অন্য সমস্যা আছে, কিন্তু সেখানে অপারেশন না করে উপরের বা নিচের লেভেলে অপারেশন করে দেয়ার অনেক উদাহরণ আছে। সি-আর্ম, অর্থাৎ পার অপারেটিভ এক্সরে সহজলভ্য হবার পর এই সমস্যা কমলেও এখনো এক্সটিংট হয়নি। রং লেভেল সার্জারি একটা ভুল। এটা যে কোন দেশের যেকোন সার্জনের হাতে যেকোন দিন হতে পারে।
তবে, রং লেভেল সার্জারি হয়ে গেলে পেশেন্টকে সেটা ব্রিফ না করে, না জানিয়ে ভুজুং ভাজুং দিয়ে ফিজিওথেরাপি-সাইকিয়াট্রি তে পাঠিয়ে ডিশোল্ডার করা এবং ক্ষতির সময় প্রোলং করা একটা অপরাধ। অমার্জনীয় অপরাধ। নিউরোসার্জন রক্ত-মাংসের মানুষ। আসমান থেকে নাজিল হওয়া ফেরেশতা না যে, ভুল করবেনা। কিন্তু অতি দ্রুত সেই ভুলের কারণে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করতে হবে, করতেই হবে। এটা না করা অপরাধ।
এই রোগী দীর্ঘদিন কোমর ব্যথায় ভোগার পর ইনফার্টিলিটির ট্রিটমেন্ট করাতে ইন্ডিয়া গিয়েছিলেন, সেখানে গিয়ে দৌঁড়াদৌড়ির পর কোমরের ব্যথা বেড়ে যাওয়ায় এমআরআই করিয়ে লাম্বার ৩/৪ লেভেলে ডিস্ক হার্নিয়েশন ডায়াগনোসিস হয় (ছবিঃ ১)। এবং চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে অপারেশন হয়। অপারেশনের আগে রোগী খুঁড়িয়ে হাঁটতে পারতো, কিন্তু এরপর একেবারে প্যারালাইজড হয়ে যায়।ওখানেই বেশ কিছুদিন ফিজিওথেরাপি নিয়ে হুইলচেয়ার বাউন্ড অবস্থায় দেশে ফেরত আসে। ইন্ডিয়ার ডাক্তারের এডভাইজ অনুযায়ী সে বাংলাদেশে এসেও থেরাপি নিতে থাকে এবং এক পর্যায়ে দুই পা ই সরু হতে থাকে (বাল্ক লস)। একসময় দুই পায়ের অনুভূতি (টাচ, পেইন সেনসেশন) কমতে থাকে এবং এরপর সে আমাদের অর্থাৎ বাংলাদেশের ডাক্তারের কাছে আসে (ভিডিওঃ ১)।
রিপিট এমআরআই (ছবিঃ ২) করিয়ে দেখা যায়, ইন্ডিয়া থেকে অত্যন্ত সুন্দর করে গুছিয়ে লেখা ডকুমেন্টেশন একেবারে মিথ্যা (ছবিঃ ৪)। লাম্বার ৩/৪ লেভেলে আসলে অপারেশন করাই হয়নি, হয়েছে সুস্থ ডিস্কের উপর লাম্বার ৪/৫ লেভেলে। রোগী প্যারালাইজড হবার পর ইনএডভার্টেন্ট থেরাপি এডভাইজ করে দেয়া হয়। এতে তার সমস্যা দিনদিন আরো বাড়তে থাকে। পেশায় নরসুন্দর রোগী অদৃষ্ট মেনে নিয়েই চলছিলেন। কিন্তু সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় আবার ডাক্তারের কাছে আসায় ডায়াগ্নোসিস হয়।
খুব আশাবাদী না হলেও পেশেন্টকে ঠিকমতো কাউন্সেলিং করে এগ্রেসিভ সার্জারি করি গত মঙ্গলবার। আসল সমস্যার লেভেল এবং ভুল সার্জারি করা লেভেল সহ পেডিকেল স্ক্রু ফিকজেশন আর ডিসকেক্টমি সহ ডিকম্প্রেশন করে দেই। এক বছরের উপর তীব্র চাপে থাকা নার্ভ রুটগুলো ফ্রি করে দেই এবং ফিউশনের জন্য ডিস্ক স্পেসে বোন চিপ্স দিয়ে আসি (ছবিঃ ৩)। অপারেশনের পর রোগীর পায়ের বোধ ফিরতে শুরু করে এবং দুই দিন পরে রোগী ওয়াকার সাপোর্টে হাঁটা শুরু করে- দীর্ঘ এক বছর পর (ভিডিওঃ ২)।
যতোটা রোগী খুশি, সার্জনও ততটাই খুশি হয় এরকম রেস্পন্স দেখলে। আল্লাহ রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে দিন- এটাই প্রার্থনা এখন।
ডিসক্লেইমার: ইদানিং কিছু লিখতে ভয় লাগে। ডাক্তারদের প্রতি সবাই তুমুল অসহিষ্ণু এবং বিদেশে চিকিৎসা করাতে যত উৎসাহ রোগীদের মানুষেরা দেন, ততোটা দালালরাও দেয় কিনা সন্দেহ। দাবী করছি না- আমরা শতভাগ সফল সার্জারি করি। আমরা মিল্ক-ওয়াশড তুলসী লিভস। তবে একটা মেসেজ, আমরা যেন এরকম সমস্যা হলে সাথে সাথে সেটা ডিসক্লোজ করি এবং রেক্টিফাই করার মেজার নেই। মিথ্যা কথা বলে ডিসোল্ডার না করি। যারা মনে করি ইন্ডিয়ায় বেস্ট অফ দ্য বেস্ট ট্রিটমেন্ট হয়। বাংলাদেশের ডাক্তাররা আমরা লালশাক পাতা বাছি আর খাই। তারা আবার বিবেচনা করবেন, প্লীজ।
আমাদের সাধারণ জনগণ এমনকি অনেক ডাক্তাররাও খোঁজ করেন "ইন্ডিয়ার ডাক্তারদের মতো সময় নিয়ে দেখবে। মধুর ব্যবহারসম্পন্ন, অনেক কথা শুনবে এবং বলবে" এমন ডাক্তারকে. আরেকবার ভেবে দেখেন। মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আপনার সাড়ে সর্বনাশ করে দেয় এমন ডাক্তার চাইবেন? নাকি দক্ষ কিন্তু রুক্ষ ডাক্তার চাইবেন?