ডেঙ্গু রোগীর পানিশূন্যতা কতটা ভয়াবহ

ডা. নুসরাত সুলতানা
2022-11-01 09:58:45
ডেঙ্গু রোগীর পানিশূন্যতা কতটা ভয়াবহ

ডেঙ্গু রোগীর পানিশূন্যতা

জ্বর হলে শরীর ভীষন দূর্বল হয়ে পড়ে। মুখে কোন স্বাদ থাকেনা। এমনকি পানি পান করতেও ইচ্ছা করেনা। ফলে রোগী খুব সহজে পানিশূন্য হয়ে যায়।

আপনারা কি জানেন, পানিশূন্যতা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে কি ভয়ংকর পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে?

ডেঙ্গু মূলত: তিনভাবে প্রকাশিত হতে পারে, সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর, রক্তক্ষরণজনিত ডেঙ্গু জ্বর এবং এক্সপ্যান্ডেড ডেংগু সিনড্রোম (বিরল কিন্তু ভয়াবহ রূপ যেখানে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশী)। পানিশূন্যতা রক্তক্ষরণজনিত ডেঙ্গু জ্বরের উপর সবচেয়ে বেশী প্রভাব ফেলে।

কারণ, এখানে দুই উপায়ে একজন রোগী পানিশূন্য হতে পারে, ১। প্রচন্ড অরুচি ও দুর্বলতার কারণে তরল খেতে না পারা ২। প্লাজমা লিকেইজ (plasma leakage) অর্থাৎ, ডেঙ্গুর ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত সাইটোকাইনের প্রভাবে রক্তনালীর মধ্যে ফুটো তৈরী হওয়ায় রক্তের তরল অংশ রক্তনালী থেকে বের হয়ে রক্তকে ঘন ( hemoconcentration) করে। রক্তে hematocrit এর পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় ২০% বেড়ে যাওয়া plasma leakage শুরু হওয়াকে বোঝায়।

পানিশূন্যতার জন্য অনেক সময় রোগী হাইপোভলেমিক শকে চলে যায়, যাকে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম বলে। এতে হার্ট দুর্বল হয়ে যায় এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন লিভার, কিডনী অকেজো হয়ে যায়।

এজন্য জ্বর শুরু হওয়ার পর থেকেই আক্রান্ত রোগীকে তরল খাবার খাওয়াতে পারলে Plasma leakage জনিত পানিশূন্যতাকে Compensate করা সম্ভব। যেসব রোগী একেবারেই খেতে পারেন না এবং শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি রেখে প্রয়োজনীয় পরিমাণ স্যালাইন শিরা পথে দেয়া উচিৎ।

স্যালাইন দেয়ার সময় কয়েকটি বিষয় মনিটর করতে হবে, ১। রক্তচাপ ২। প্রশ্রাবের পরিমাণ ৩। শ্বাসকষ্ট শুরু হয় কিনা। ৪। Hematocrit level.

যদি রক্তচাপ কমে যায় এবং সাথে সাথে সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক প্রেসারের পার্থক্য বা পালস প্রেসার কমে যায়, রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, হেমাটোক্রিট স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়, তাহলে বুঝতে হবে অতিরিক্ত স্যলাইন রক্তে প্রবেশ করেছে। এতেও কিন্তু হার্ট ফেইলিউর হয়ে রোগী মারা যেতে পারে। তাই কোন ভাবেই বাসায় শিরাপথে স্যালাইন দেয়া যাবেনা। এবং হাসপাতালেও যত্নের সাথে মনিটর করতে হবে।

আপনাদের মনে এখন প্রশ্ন জাগবে, hematocrit level কোন ল্যাবে হয়?
আসলে CBC টেস্ট করলে দেখবেন রক্তের অনেকগুলো প্যারামিটারের ফলাফল দেয়া হয়, তার মধ্যে একটি হিমাটোক্রিট যা রিপোর্টে HCT হিসেবে লেখা হয়।
একজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে আমরা দেখি রোগীর স্বজনেরা প্ল্যাটলেট কাউন্টের দিকে অতিরিক্ত মনযোগী হয়ে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো address করতে ভুলে যান। প্লেটলেট সংগ্রহের জন্য ছুটাছুটি করতে থাকেন।

বলে রাখা ভালো, প্লেটলেট কাউন্ট ২০ হাজারের নীচে না নামা পর্যন্ত প্লেটলেট সংগ্রহের জন্য দুশ্চিন্তা করার কোন কারণ নেই। কারণ খুবই কম সংখ্যক রোগীর প্লেটলেট প্রয়োজন হয়।

ডেঙ্গু রোগের মূল চিকিৎসা প্লেটলেট দেয়া নয়, বরং নিখুতভাবে পানিশূন্যতা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করা। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী রক্তক্ষরণের জন্য নয়, বরং ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে মারা যায়। যদি পায়খানা বা বমির সাথে রক্ত যায়, তাহলে প্লেটলেট না সঞ্চালন করে Whole blood দেয়া উচিৎ।


আরও দেখুন: