মস্তিষ্ক-মেরুরজ্জুর প্রদাহ মেনিনজাইটিসের উপসর্গগুলো কী?

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
2021-07-12 18:31:21
মস্তিষ্ক-মেরুরজ্জুর প্রদাহ মেনিনজাইটিসের উপসর্গগুলো কী?

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণ, কোনো কিছুর আঘাত এমনকি ক্যানসারে মেনিনজাইটিস হতে পারে।

মেনিনজাইটিস জীবাণু মস্তিষ্কের এবং মেরুরজ্জুর আবরণীকে আক্রমণ করে। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণ, কোনো কিছুর আঘাত এমনকি ক্যানসারে মেনিনজাইটিস হতে পারে। বিশ্বে স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, প্রতিবছর ১২ লাখ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। ডক্টর টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেনিনজাইটিস নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. খায়রুল ইসলাম। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ডক্টর টিভির রিপোর্টার দেলাওয়ার হোসাইন দোলন

প্রশ্ন: মেনিনজাইটিস কী?

ডা. মো. খায়রুল ইসলাম: আমাদের ব্রেনের ওপরে পাতলা একটা আবরণ থাকে। যেটাকে আমরা মেনিনজিস বলি। সেখানে পানি থাকে। আমাদের ব্রেনটা সেখানে ভাসতে থাকে। একটা মানুষের ব্রেন ৩০০ গ্রাম। আর সেখানে সিএসএফ থাকে। সিএসএফ’র কারণে ব্রেনের ওজন কমে যায়। ব্রেন ভাসতে থাকে। সিএসএফ’র সবসময় সার্কুলেশনে থাকে। মেনিনজেসকে কিছু ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস ইনফেকশন করে, যেখানে প্রদাহ করে। সেটাকে আমরা বলি মেনিনজাইটিস।

প্রশ্ন: মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার মাধ্যেমগুলো কী?

ডা. মো. খায়রুল ইসলাম: ব্যাকটেরিয়ায় মেনিনজাইটিস হয়। রোগী তখন কথাবার্তা এলোমেলো বলে। অনেক ক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে যায়। এদের মৃত্যুর হার অনেক বেশি। এছাড়াও খাবারের মাধ্যমে অর্থাৎ উদাহরণ স্বরূপ শীতকালে খেজুরের রসে যদি বাদুড়ের লালা পড়ে, সেখানে নিপা ভাইরাস থাকে যা খেজুরের রসের মাধ্যমে মানুষ খায়। সেটা ব্রেনে যায়, তখন ব্রেনের মধ্যে এক ধরনের ইনফ্লামেশন হয়। ফলে রোগী অজ্ঞান হয়ে মারা যেতে পারে।

প্রশ্ন: কত ধরনের মেনিনজাইটিস হয়ে থাকে?

ডা. মো. খায়রুল ইসলাম: মেনিনজাইটিস আমরা দুই ভাগে ভাগ করি। ইনফেক্টিভ মেনিনজাইটিস আর নন ইনফেক্টিভ মেনিনজাইটিস। ইনফেক্টিভ মেনিনজাইটিস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হতে পারে, ফাঙ্গাস দ্বারা হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হলে অনেক বেশি জ্বরসহ দ্রুত রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়।

ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে হাইয়েস্ট ফিভার নিয়ে আসে। এক্ষেত্রে অনেক বেশি জ্বরসহ খুব দ্রুত রোগী অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। ঘাড় শক্ত হয়ে যায়। এগুলো হচ্ছে ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস।

নন ইনফেক্টিভ মেনিনজাইটিস মধ্যে যেগুলো রয়েছে, এগুলো কোনো ইনফেকশন না। কিছু ডিজিজ রয়েছে। ডিজিজের কারণে মেনিনজাইটিস হচ্ছে। একজন ব্লাড ক্যানসারে পেশেন্ট, লিউকিমা পেশেন্ট মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে তার ব্লাড ক্যানসার টাইপ হচ্ছে মেনিনজাইটিসের কারণ। লিম্ফোমা পেশেন্টেরও মেনিনজাইটিস হতে পারে। এগুলোকে আমরা আরেকভাবে বলি নন ইনফেক্টিভ মেনিনজাইটিস।

প্রশ্ন: করোনারভাইরাস থেকে মেনিনজাইটিস হতে পারে?

ডা. মো. খায়রুল ইসলাম: করোনাভাইরাস মেনিনজাইটিস নিয়ে আসতে পারে। কিছু কমন ফাঙ্গাস রয়েছে, হিস্টপলাস্মসিস। এছাড়াও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস যেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেটাও মেনিনজাইটিস সংক্রমিত করতে পারে।

প্রশ্ন: মেনিনজাইটিস চিকিৎসা কী?

ডা. মো. খায়রুল ইসলাম: চিকিৎসার আগে প্রথমে তিনটি লক্ষণ খেয়াল রাখতে হবে। ক্লাসিক্যাল সিম্পটম। রোগীর ঘাড় শক্ত হয়ে যায়। কোমর থেকে সুই দিয়ে রোগীর রস পরীক্ষা করে আমরা যে সিম্পটম পাই, তিনটি বিষয় তখন প্রমাণিত হয়। সেটাকে আমরা মেনিনজাইটিস বলি। চিকিৎসা খুব দ্রুত শুরু করতে হয়। দেরি করলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।

প্রশ্ন: অসংলগ্ন কথা বলা কী মেনিনজাইটিসের লক্ষণ?

ডা. মো. খায়রুল ইসলাম: একটু এলোমেলো আচরণ করলেই বা কথাবার্তা উল্টা-পাল্টা বললেই মানুষ বলে, ভূতে ধরছে। ভূতের চিকিৎসা করে। ওঝা নিয়ে আসে। অনেকেই আবার তাবিজ দেয়। আর তখনই চিকিৎসা দেরি হয়ে যাচ্ছে, তখনই বিপদ বাড়ে।

প্রশ্ন: দেশে মেনিনজাইটিসের চিকিৎসা কেমন?

ডা. মো. খায়রুল ইসলাম: বাংলাদেশের এর ভালো চিকিৎসা রয়েছে। তবে সমস্যা হচ্ছে, ডায়াগনসিস। ডায়াগনসিস করাটা অনেক ক্ষেত্রেই দেরি হয়ে যায়। অনেকের ক্ষেত্রেই লোকাল এন্টিবায়োটিক খাচ্ছে রোগীরা। এক্ষেত্রে যখনই কোন জ্বরের রোগী থাকবে, এলোমেলো আচরণ করবে, অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড পাস করা ডাক্তার দেখাতে হবে। দ্রুত সময়ে চিকিৎসা শুরু করার মাধ্যমে মেনিনজাইটিস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।


আরও দেখুন: