স্থায়ী হচ্ছে ডিএনসিসি’র করোনা হাসপাতাল

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
2021-07-11 21:10:11
স্থায়ী হচ্ছে ডিএনসিসি’র করোনা হাসপাতাল

ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এবিএম নাসির উদ্দিন।

দেশের করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। রোগীর চাপে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। এমন পরিস্থিতিতে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে চলেছে রাজধানীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল। ডক্টর টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এবিএম নাসির উদ্দিন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ডক্টর টিভির রিপোর্টার দেলাওয়ার হোসাইন দোলন

ডক্টর টিভি: দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। ডিএনসিসি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগীর চাপ কেমন?

হাসপাতাল পরিচালক: আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের হাসপাতালেও প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এখন পর্যন্ত আমাদের ৪৬০ জন রোগী ভর্তি আছেন। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র-আইসিইউতে আছেন ১৪৪ জন। রোববার সকাল ৮টা নাগাদ ২৪ ঘণ্টায় ৭৮ জন করোনামুক্ত হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন।

ডক্টর টিভি: ঢাকার বাইরের রোগী আগের চেয়ে বেড়েছে…

হাসপাতাল পরিচালক: আমাদের এখানে বেশিরভাগ রোগী ঢাকার বাইরে থেকে আসেন। ভর্তি রোগীদের ৭০ ভাগই ঢাকার বাইরের। আমাদের এখানে যারা আসেন, খুবই ক্রিটিক্যাল কন্ডিশন নিয়ে আসেন। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে থেকে যারা আসেন, তাদের অবস্থা বেশি খারাপ। সাধারণত তারা কিছুদিন জেলায় চিকিৎসা নেওয়ার পর আমাদের কাছে আসেন। আমরা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি সবসময়।

ডক্টর টিভি: রোগীর বাড়তি চাপ সামলানোর প্রস্তুতি কেমন?

হাসপাতাল পরিচালক: আমাদের এখানে প্রায় ৫০০ রোগীর চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের আমরা অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে হলেও রাখতে পারবো। যে ৫০০ শয্যা আছে, সেগুলোকে আপডেট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখানেও আমরা হাই-কেয়ার এরিয়া ডেভলপ করবো। যে সকল মেডিকেল ইকুইপমেন্ট প্রয়োজন হবে, সেগুলো সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। তিন-চার দিনের মধ্যে সেগুলো আমাদের হাতে চলে আসবে। তখন আরও সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে। শয্যা সংখ্যা বাড়ানো যাবে।

ডক্টর টিভি: যে হারে রোগী বাড়ছে, কতদিন সামাল দেওয়া সম্ভব?

হাসপাতাল পরিচালক: এখন পর্যন্ত যে হারে আমাদের এখানে রোগী আসছে, আমরা আরও কিছুদিন সামাল দিতে পারবো মনে করছি।

ডক্টর টিভি: হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগ বাইরে গিয়ে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে…

হাসপাতাল পরিচালক: কোনো সরকারি হাসপাতালেই সবগুলো পরীক্ষা একসঙ্গে পাওয়া যায় না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এটি একটি ইনস্টিটিউট নয়, একটি ডিপার্টমেন্ট। যেহেতু আমাদের ইনভেস্টিগেশন এরিয়া না, তাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় টেস্টগুলো রাখা হয়েছে। বিশেষ করে কোভিডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাগুলো এখানে রয়েছে। তারপরও আপনাদের কাছে যে অভিযোগুলো এসেছে, সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করবো, বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।

ধীরে ধীরে আমরা সক্ষমতা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছি। নতুন নতুন কিছু ইকুইপমেন্ট যুক্ত করছি। আমাদের ইনভেস্টিগেশন ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে আমাদের এখানকার কোনো রোগীকে আর বাইরে গিয়ে টেস্ট করানোর প্রয়োজন হবে না।

ডক্টর টিভি: খাবার পানি নিয়ে রোগীদের বিশেষ অভিযোগ…

হাসপাতাল পরিচালক: আমাদের এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা ওয়াটার সাপ্লাই এবং টয়লেট। পানির সমস্যাটা আমরা দ্রুত সমাধান করবো। টয়লেটের সমস্যা সমাধানে একটু সময় লাগবে। যদিও এটার আমরা অল্টারনেটিভ চিন্তা করছি।

এটি একটি মার্কেটের স্থান হলেও, একটি পার্মানেন্ট হসপিটাল হিসেবে থাকবে। আজ হোক কাল হোক এটা থেকে যাচ্ছে, আর কোথাও যাচ্ছে না; স্থায়ী হাসপাতাল হবে।

পানি সমস্যা আছে। আমরা আশা করছি, এটা খুব দ্রুত সমাধান করবো। আমাদের কোনো সরকারি হাসপাতালে খাবার পানির জন্য আলাদা পদ্ধতি নেই। আমরা সেন্টার ওয়াটার বসানোর চিন্তা করছি প্রতিটা ফ্লোরে। এ বিষয়টা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে। আমরা আশা করছি, পানি নিয়ে যে সমস্যাটি রয়েছে, দ্রুত এর সমাধান হবে। টয়লেটেরও সমস্যা রয়েছে। এটা যেহেতু একটি মার্কেট, সে ক্ষেত্রে সব জায়গায় টয়লেট বাড়ানো যায় না। বিষয়টা নিয়ে আমরা ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা কাজ করছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে কীভাবে বিকল্প কিছু করা যায়, সে চেষ্টা করা হচ্ছে।

ডক্টর টিভি: ডাক্তার এবং নার্সদের সেবা নিয়ে অনেক রোগীই প্রশ্ন তুলেছেন…

হাসপাতাল পরিচালক: কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ আসছে। হয়তো নার্সিং কেয়ার কিংবা ডক্টর কেয়ার তারা কম পাচ্ছে। আমাদের ডিউটি ডক্টর যারা রয়েছেন, তারা কাজ করে যাচ্ছেন। নার্স রয়েছেন, তারা কাজ করে যাচ্ছেন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, যে পরিমাণ সিরিয়াস পেশেন্ট আমাদের এখানে ভর্তি হচ্ছেন, সেখানে আমাদের আরও অনেক বেশি জনবল দরকার। আরও কিছু জনবল আমরা চেয়েছি, সেগুলো খুব শিগগিরই যুক্ত হবে ইনশা আল্লাহ।


আরও দেখুন: