যাদের রক্ত নেওয়া যাবে না

অধ্যাপক ডা. সালমা আফরোজ
2021-06-14 08:43:11
যাদের রক্ত নেওয়া যাবে না

যাদের রক্ত নেওয়া যাবে না

জীবন রক্ষার অন্যতম উপায় রক্ত পরিসঞ্চালন কখনো কখনো তৈরি করতে পারে জটিলতা। নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন রক্ত গ্রহীতার তার জন্য যেমন প্রয়োজন, আবার রক্তদাতার জন্যও প্রযোজ্য।

১৪ই জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উপলক্ষে ডক্টর টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বারডেম জেনারেল হাসপাতালের হেমোটলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. সালমা আফরোজ এ কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, রক্তের মাধ্যমে অনেক ধরনের রোগ একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে যেতে পারে। সেজন্য রক্ত নেওয়ার আগে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিতে হয়। যেমন- এনিমিয়া বা রক্ত স্বল্পতা, জন্ডিস, পালস রেট, রক্তচাপ, শরীরের তাপমাত্রা, ওজন, হিমোগ্লোবিন টেস্ট, ব্লাড সুগার বা চিনির মাত্রা পরিমাপ করা, ইসিজি। এ পরীক্ষাগুলো খুব সাধারণ।

ডা. সালমা আফরোজ বলেন, যারা রক্ত দেয় তোদের অবশ্যই দেখতে হবে, যে রক্ত নিচ্ছে, তার জন্য রক্ত গ্রহণ অপরিহার্য কিনা। কারণ অনেকে রক্ত গ্রহণ করাটাকে একটা ব্যবসাতে পরিণত করেছে। রক্ত নিলে সাধারণত একটা লাভ। যে উপাদানটি কম আছে, সেটা বৃদ্ধি পায়। যেমন যার হিমোগ্লোবিন কম, তার হিমোগ্লোবিন বাড়ে। কারো রক্তের সাদা অংশ থেকে প্লাটিলেট দিতে হয়, সেটা বাড়ে।

তিনি বলেন, রক্তবাহিত রোগের সংক্রমণ এখনো একটি প্রধান সমস্যা। হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, এইডসসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী জীবাণু সহজেই রক্তের মাধ্যমে রক্তগ্রহীতার দেহে প্রবেশ করতে পারে।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, এই পরিস্থিতির মূল কারণ রক্ত পরিসঞ্চালনের আগে রক্তটি জীবাণুমুক্ত কিনা, তা যথাযথভাবে পরীক্ষা না করা। অনুমোদনহীন এসব রক্ত বিক্রি করা হয়। আর তা আসে মূলত নেশাগ্রস্ত পেশাদার রক্তদানকারীদের থেকে। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ রক্ত বা ভেজাল রক্তও বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংক থেকেই আসে।

যে সকল রোগীদের রক্ত নেওয়াটা অপরিহার্য নয়, তাদেরকে রক্ত না নেওয়ার পরামর্শ দেন অধ্যাপক ডা. সালমা আফরোজ। কারণ কার শরীরে কী জীবাণা আছে তা গ্রহীতা জানে না।

তিনি আরও বলেন, অনেক সময়, যাদের কিছুদিন পরপর রক্ত নিতে হয়, তাদের দেহে লৌহের আধিক্যসহ অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও অধিক রক্ত দ্রুত প্রবেশ করলে বৃদ্ধ অথবা হৃদরোগীর হার্ট ফেইলিউর জাতীয় সমস্যা হতে পারে।

যাদের রক্ত নেয়া যাবে না:

১. হেপাটাইটিস বি’ এবং সি’ রোগে যারা ভুগছেন
২. হিমেফেলিয়াতে যারা ভুগছেন
৩. ক্যানসারের রোগী
৪. যারা মাদক গ্রহণ করেন
৫. মানসিক ভারসাম্যহীন
৬. যাদের অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট আছে, অর্থাৎ শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ যেমন- অ্যাজমা, হাঁপানি যাদের আছে
৭. মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিক চলাকালীন সময়ে, গর্ভবতী অবস্থায় ও সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার ১ বছর পর পর্যন্ত রক্তদান করা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ
৮. যাদের এইচআইভি পজিটিভ তথা এইডস আছে
৯. যাদের ওজন গত ২ মাসে ৪ কেজি কমে গেছে
১০. মাস ছয়েকের ভেতর বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন বা অপারেশন হয়েছে

এছাড়াও যকৃতের রোগী, যক্ষ্মার রোগী, লেপ্রসি, মৃগী রোগী, পলিসাইথেমিয়া ভেরা প্রভৃতি রোগ থাকলে তাদের রক্ত নেয়া যাবে না।


আরও দেখুন: