বিপদের নাম অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন
মুনীরউদ্দিন আহমদ
বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের শরীরে নানা পরিবর্তন আসে। আস্তে আস্তে শরীরের নানাবিধ স্বয়ংক্রিয় কার্যক্রম অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শরীর এসব পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে পারে না বলে দুর্ঘটনা ঘটে।
বয়স বৃদ্ধির সাথে এসব দুর্ঘটনার মাত্রাও বাড়তে থাকে। আজকে এমন একটি স্বাস্থ্য সমস্যার কথা লিখব, যা বয়স্কদের ক্ষেত্রে ঘটে এবং অনেকে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হয় এমনকি মারাও যান। যেমন: বয়স্কদের অনেকেই বিছানায় শোয়া অবস্থা থেকে চট করে বসতে গেলে বা নিচে বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াতে গেলে মাথায় চক্কর দিতে থাকে, শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, চোখে ঝাপসা দেখে এবং ঘুরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।
এমন ঘটনায় বহু মানুষ ভারসাম্য ঠিক রাখতে না পেরে ফ্লোর, চেয়ার, টেবিল, খাট, সোফা, শক্ত ধাতব বস্তুর ওপর পড়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙে ফেলেন, মাথায় মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং এ কারণে অজ্ঞান হওয়া ছাড়াও মৃত্যুও হয়। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনার খবর আমরা শুনে থাকি।
এমন ঘটার কারণ কী
এর কারণ হলো, হঠাৎ উঠতে গেলে রক্তচাপ কমে যায়। রক্তপ্রবাহ কমে যায় বলে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ হ্রাস পায়। অল্প বয়স্ক মানুষের ঘাড়ে এক ধরনের রিসেপ্টর থাকে, যা হঠাৎ ওঠার সময় রক্তচাপ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে রক্তনালিকে সঙ্কুচিত করে দেয়। ফলে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ ও রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এসব রিসেপ্টর কাজ করে না।
তাই কোনো কোনো সময় মাথায় রক্ত সরবরাহ ও চাপ কমে যাওয়ার কারণে হঠাৎ ওঠার সময় বয়স্করা পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব যাতে না হয়, সেজন্যে বয়স্কদের শোয়া বা বসা থেকে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়া ঠিক নয়। এসব ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটায়।
হঠাৎ শোয়া থেকে বসে পড়া বা বসা থেকে দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য রক্তচাপ কমে যাওয়াকে বলা হয় পস্টিউরাল হাইপোটেনশন বা অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন। আগেই বলেছি, পস্টিউরাল হাইপোটেনশনের ফলে পড়ে গিয়ে উরুর হাঁড় ফাটা বা ভাঙা, হাত-পা ভাঙা ও মাথায় আঘাত পাওয়ার কারণে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য বয়স্ক মানুষ গুরুতর আহত হন বা মৃত্যুবরণ করেন।
এ মারাত্মক দুর্ঘটনা এড়াতে হলে সবাইকে সচেতন ও সাবধান হতে হবে। আর নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলতে হবে—
১. আপনি দীর্ঘ সময় শোয়া অবস্থায় থাকলে কাত হয়ে আস্তে আস্তে ওঠে বসুন এবং দাঁড়ানোর আগে কয়েক মিনিট বসে অপেক্ষা করুন।
২. আপনি দীর্ঘক্ষণ বসা অবস্থায় থাকলে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ান। চট করে ওঠে দাঁড়িয়ে যাবেন না। হঠাৎ করে ভুলে উঠে গেলে এবং মাথা ঘুরতে থাকলে পাশে যা-ই পান ধরে শরীর ঠিক না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নিন অথবা আবার বসে বা শুয়ে পড়ুন যাতে আপনাকে পড়ে গিয়ে আঘাত পেতে না হয়।
৩. দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে গেলেও এ সমস্যাটি হতে পারে। যাদের প্রায়ই এ সমস্যা হয়, তাদের উচিত আশেপাশে ধরার মতো সাপোর্ট আছে এমন জায়গায় নামাজ পড়া বা চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করা। অনেক সময় রুকু বা সেজদা থেকে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলে পস্টিউরাল হাইপোটেনশনে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই সাবধান হওয়া উচিৎ। আমার মাঝে মাঝে এ সমস্যা হয়।
৪. ডিহাইড্রেশনের কারণেও পস্টিউরাল হাইপোটেনশন হতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করতে ভুলবেন না।
৫. অ্যালকোহল পান পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলতে পারে।
৬. ডায়াবেটিস ও লো-প্রেসারের রোগীদের বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
মনে রাখবেন, বয়স যত বাড়বে, এ সমস্যাও তত বাড়বে। বৃদ্ধদের ওঠা-বসা, চলা-ফেরায় সাহায্য করুন। নতুবা পড়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙে বা মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হলে বয়সের কারণে সঠিক চিকিৎসা পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে এবং পঙ্গুত্ব নিয়ে বাকি জীবন কাটাতে হতে পারে।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আল্লাহকে স্মরণ করুন, জীবনকে ভালোবাসুন।