চিকিৎসকের অপার্থিব আনন্দ
চিকিৎসক
দুপুর থেকে মাথা ধরে আছে, দুপুর গড়িয়ে বিকেল, মাথা ধরেই আছে । চেম্বারে যেতে হলো, একজন রোগী এসেছেন সিলেট থেকে, দেখিয়ে আবার চলে যাবেন। চেম্বারে যাওয়ার পর আমার দীর্ঘদিনের রোগী বাকেরগঞ্জের সেতারা বেগমের ফোন পেলাম।
: ডাক্তার সাহেব কেমন আছেন?
: আলহামদুলিল্লাহ মোটামুটি, আপনি।
: আছি, চলতেছে।
আজকে খুব মরতবার রাত, রজব মাসের পনেরো তারিখের রাত। আজ গভীর রাতে নফল নামাজ পড়বেন, অনেক উপকার আছে, অনেক ভালো হবে।
: ঠিক আছে, আমার দুপুর থেকে মাথা ধরে আছে, কোন ওষুধ খাইনি, আমার জন্য দোয়া করবেন।
ফোন রেখে দিলাম, যথারীতি রোগী দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম, মনে করেছিলাম প্যারাসিটামল খাবো, খাওয়া হয়নি। এরপর একটু অবসরে খেয়াল করে দেখি, মাথা ধরা আর নেই, ঝরঝরে লাগছে, আর কোন অসুবিধা নেই বা অস্বস্তিও বোধ করছি না।
সেতারা বেগম অত্যন্ত পরহেজগার মহিলা, বয়স প্রায় আশি, বাবার আদরের একমাত্র মেয়ে। বাবা ইস্কান্দার আলী তালুকদারকে হারান মাত্র সাত বছর বয়সে, বাবা মারা যান যক্ষারোগে। তাঁর বাবার সাথে আমার কোথায় যেন মিল খুঁজে পান, আমাকে ভীষণ পছন্দ করেন,প্রত্যেকদিন তাঁর ডাক্তারের জন্য তাহাজ্জুদ নামাজে দোয়া করেন, ডাক্তারের বাসার সবার জন্য, দুই মেয়ের জন্য দোয়া করেন এসব আমার তাঁর মেয়ের কাছ থেকে শোনা।সবসময় তাঁর ডাক্তারের ভালো চান, ডাক্তার শুধু এখানে না এর পরেও যেনো ভালো থাকে।
আমি চেম্বার শেষ করে সেতারা বেগমের বাসায় ফোন করলাম, মেয়ে ফোন ধরলেন, বললাম আপনার মা'কে বলেন ডাক্তার ভালো আছে। জানলাম আমার সাথে কথা বলার পর তখনই তাঁর ডাক্তারের জন্য দোয়া করতে বসেছিলেন। গভীর ভালো লাগায় মন আচ্ছন্ন হয়ে গেলো, এ এক অন্যরকম অনুভূতি, অপার্থিব আনন্দ।
আমরা খুব স্বল্প সময়ের জন্য এই পৃথিবীতে আসি, আমাদের জীবনের বেশির ভাগ সময়ই চলে যায় ভীষণ ব্যস্ততায়, মনও মাঝে মাঝে ভীষণ খারাপ হয়ে যায় বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক ঘটনায়। সব কিছু গুছাতে গুছাতেই পাড়ি দেওয়ার সময় চলে আসে অন্য ভূবণে যাওয়ার। তার ভিতরেও এই সব ছোট ছোট ঘটনা আর বড় বড় আনন্দ আমাদের আপ্লুত করে, মনকে দোলা দিয়ে যায়।
ডা. মোহাম্মদ এজাজ হোসেন
হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হসপিটাল
ফেসবুক প্রভাইল থেকে নেওয়া
আরও দেখুন:
- ডক্টর-টিভি
- মেডিকেল-কলেজ
- স্বাস্থ্যসেবা
- ডা.-মোহাম্মদ-এজাজ-হোসেন
- হলি-ফ্যামিলি-রেড-ক্রিসেন্ট-মেডিকেল-কলেজ-হসপিটাল