কিডনি সংযোজন কি

অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম
2021-05-18 00:22:12
কিডনি সংযোজন কি

ছবি: সংগৃহীত

কিডনি ফেইলিওরের সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা হচ্ছে কিডনি সংযোজন। একজন সুস্থ ব্যক্তি তার নিকট আত্মীয়কে নিজের একটি কিডনি দান করে তাকে নতুন জীবন দিতে পারেন। এতে কিডনি দাতার স্বাস্থ্যের তেমন কোনো ঝুঁকি নেই।

ক্রনিক কিডনি ডিজিজ রোগীর শরীরে পেটের নিম্নভাগে ডানে বা বামে কিডনি দাতার একটি সুস্থ কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। রোগীর নিজের দুটি অসুস্থ কিডনি পূর্বের স্থানে রয়ে যায়। এ প্রক্রিয়াকে কিডনি সংযোজন (Transplantation) বলা হয়।

কিডনির উৎস অনুযায়ী কিডনি সংযোজন দুই ধরনের। ১. জীবিত সুস্থ ব্যক্তি কিডনি ফেইলিওর রোগীকে কিডনি দান করার মাধ্যমে ২. ক্যাডোভার কিডনি সংযোজন অর্থাৎ আইসিইউতে ‘ব্রেন ডেথ’ রোগীর কিডনি দান করার মাধ্যমে।

জীবিত কিডনি দাতার ক্ষেত্রে দাতার বয়স ১৮-৫৫ বৎসর হওয়া বাঞ্ছনীয়। দাতা গ্রহীতার আত্মীয় হতে হবে। অনাত্মীয় দাতার কিডনি গ্রহণের আইন কোনো কোনো দেশে চালু আছে। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে কিডনি দান করতে পারবে।

ক্যাডোভার কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন

যখন আইসিইউতে ব্রেইন ডেথ রোগীর কিডনি আত্মীয় বা অনাত্মীয়ের দেহে সংযোজন করা হয় তখন তাকে ক্যাডোভার কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন বলা হয়। এক্ষেত্রে দাতার বয়স ২-৬০ বৎসর পর্যন্ত হতে পারে।

ব্রেন ডেথ কী

আইসিইউতে চিকিৎসাধীন কোনো রোগীর ব্রেনের ফাংশন যখন সম্পূর্ণ লুপ্ত হয় এবং তার ব্রেনের ফাংশন পুনরায় ফিরে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না, তখন তাকে ব্রেন ডেথ বলা হয়।

মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন কী

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ১৯৯৯ সালে মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনের আইনগত বাধাসমূহ দূর করার উদ্দেশ্যে আইন পাস করা হয়। এই আইন নিম্নরূপ:

১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম: এই আইন মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন, ১৯৯৯ নামে অভিহিত হবে

২। সংজ্ঞা: বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কোনোকিছু না থাকলে, এই আইনে—

ক) ‘অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ’ অর্থাৎ মানবদেহে কিডনি, হৃৎপিণ্ড, যকৃত, অগ্ন্যাশয়,অস্থি, অস্থিমজ্জা, চক্ষু, চর্ম ও টিস্যুসহ মানবদেহে সংযোজনযোগ্য যেকোনো অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গ।

খ) ‘আইনানুগ উত্তরাধিকারী’ অর্থাৎ স্বামী, স্ত্রী, প্রাপ্ত বয়স্ক পুত্র ও কন্যা, পিতা, মাতা, প্রাপ্ত বয়স্ক ভাই ও বোন এবং রক্ত সম্পর্কের অন্যান্য প্রাপ্ত বয়স্ক আত্মীয়। তবে এই আইনের অধীন আইনানুগ উত্তরাধিকারী

ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমোল্লিখিত ব্যক্তিরা ক্রমানুসারে তৎপরবর্তীতে উল্লিখিত ব্যক্তিদের তুলনায় অগ্রাধিকার লাভ করবেন;

গ) ‘নিকট আত্মীয়’ অর্থাৎ পুত্র, কন্যা, পিতা, মাতা, ভাই, বোন ও রক্ত সম্পর্কিত আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা ও স্বামী-স্ত্রী। ‘ব্রেইন ডেথ’ অর্থাৎ ধারা ৫ এর অধীন ঘোষিত ব্রেইন ডেথ; ‘মেডিকেল বোর্ড’ অর্থাৎ ধারা ৭ এর অধীন গঠিত মেডিকেল বোর্ড।

৩। জীবিত ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান: সুস্থ ও সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন যে কোনো ব্যক্তি তার দেহের এমন কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যা বিযুক্তির কারণে তার স্বাভাবিক জীবনযাপনের ব্যাঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা নাই, তা তার কোনো নিকট আত্মীয়ের দেহে সংযোজনের জন্য দান করতে পারবেন।

তবে শর্ত থাকে যে, নিম্নবর্ণিত ব্যক্তিরা তাদের দেহের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে পারবেন না, যথা:

ক) ১৮ বৎসরের কম বয়স্ক ব্যক্তি। তবে রিজেনারেটিভ, টিস্যুর ক্ষেত্রে যদি দাতা ও গ্রহীতা ভাই-বোন সম্পর্কের হন, তা হলে এই শর্ত কার্যকর হবে না; এরূপ ব্যক্তি যা টিস্যু এইচ. বি. এস. এজি. এন্টি এইচ. সি. ভি. অথবা খ) এইচ. আই. ভি. পজেটিভ এবং গ) মেডিকেল বোর্ড কর্তৃক এই ধারার উদ্দেশ্যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করার অযোগ্য বলে ঘোষিত অন্য যে কোনো ব্যক্তি।

৪। মৃত ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিযুক্তকরণ: ধারা ৫ অনুসারে কোনো ব্যক্তির ব্রেইন ডেথ ঘোষণার পর নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রসমূহে তার দেহ হতে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অন্য কোনো ব্যক্তির দেহে সংযোজনের উদ্দেশ্যে নিযুক্ত করা যাবে, যথা: ক) উক্ত ব্যক্তি যদি তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কারো দেহে সংযোজনের উদ্দেশ্যে উইল করে থাকেন, অথবা খ) উক্তরূপ উইলের অবর্তমানে উক্ত ব্যক্তির ব্রেন ডেথ ঘোষণার পর তার কোনো আইনানুগ উত্তরাধিকারী যদি উক্ত ব্যক্তির দেহ হতে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিযুক্ত করার জন্য লিখিত অনুমতি প্রদান করেন; অথবা গ) উক্ত ব্যক্তির মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি কেহ মৃতদেহ দাবি না করেন, তা হলে অ) মৃতদেহ কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা অন্যবিধ চিকিৎসালয়ে থাকলে তার প্রশাসনিক কর্তৃত্ব পালনকারী ব্যক্তি; অথবা আ) মৃতদেহ অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা স্থানে থাকলে উক্ত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা স্থান যে জেলা প্রশাসকের প্রশাসনিক এখতিয়ারধীন তিনি বা ক্ষেত্রেমত তার নিকট হতে এতদুদ্দেশ্যে লিখিতভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি অনুরূপ বিযুক্তির জন্য লিখিত অনুমতি প্রদান করেন। (চলবে)


আরও দেখুন: