নারীদের অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক রোগ এন্ডোমেট্রিওসিস
নারীদের এন্ডোমেট্রিওসিস রোগকে এখনো রহস্যাবৃত একটি অসুখ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ভুক্তভোগী নারীই জানেন জরায়ুতে হওয়া অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক এই রোগটি কতটা অসহনীয়।
বাংলাদেশ এন্ডোমেট্রিওসিস সোসাইটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, জেড আই শিকদার ওমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শেখ জিন্নাত আরা নাসরিন ডক্টর টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এন্ডোমেট্রিওসিস একটি রহস্যাবৃত অসুস্থতা।
তিনি বলেন, জরায়ুর একদম ভেতরের লেয়ারটির নাম হল এন্ডোমেট্রিয়াম (যেখানে প্রেগন্যান্সি হয়)। কোনো কারণে যদি এই এন্ডোমেট্রিয়াম জরায়ুর বাইরে জন্মায়, তখন সেখানে এন্ডোমেট্রিওসিস হতে পারে।
অধ্যাপক জিন্নাত আরা নাসরিন বলেন, এটি রহস্যাবৃত একটি অসুস্থতা। আমরা গবেষণা করে এখনো সম্পূর্ণভাবে এন্ডোমেট্রিওসিস উদঘাটন করতে পারিনি। তবে মেয়েদের মূল জরায়ু থেকে দুই পাশে দুটি ওভারি থাকে। আর জরায়ুর ভেতরে পাতলা আবারণ থাকে, সেটি প্রতি মাসে ঋতুস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।
তিনি বলেন, এন্ডোমেট্রিওসিসের বেলায় দেখা যায় এই পাতলা আবরণগুলো পেটের ভেতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়। পরে সেখানে থেকে এটি মাসিকের ঋতুস্রাবের মত সেখানেই সংঘটিত হয়। এটিই হচ্ছে এন্ডোমেট্রিওসিস। মূলত এটি জরায়ুর ভেতরে থাকার কথা এবং মাসিক হলে বের হয়ে যাওয়ার কথা- এটিই সাধারণ। কিন্তু যেসব মেয়ে এন্ডোমেট্রিওসিসে ভুগে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে এই পাতলা আবরণটি পেটের ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যায়।
এই স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- অনেক সময় দেখা যায়- ক্যান্সার ছাড়া যেটা অন্য কোনো অসুখের বেলায় কল্পনাও করা যায় না, এটি দেখা গেছে শুধু পেটে বা জরায়ুতে নয়, অনেক দূরের জায়গায় যেমন- লাং, নাকে অথবা হাতের কোথাও ছড়িয়ে পড়ে।
আবরণটি যদি অন্য জায়গায় থাকে তার প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটিই হচ্ছে এন্ডোমেট্রিওসিসের কষ্ট দেওয়ার কারণ। দেখা যায় পেটের ভেতরে মাসিকের যে টিস্যুগুলো জমা হয়, সেখানে এটা মাসিকের মতো হতে থাকে। কিন্তু বের হওয়ার কোনো পথ পায় না, যেমন জরায়ুর আবরণটি বেরিয়ে যাচ্ছে মাসিকের সময়। আর ওরাতো পথ পাচ্ছে না; ফলে ওখানে জমে জমে একদম চকলেটের মত হয়ে যাচ্ছে।
অধ্যাপক জিন্নাত আরা নাসরিন বলেন, এর ফলে মেয়েদের মাসিকের সময় জরায়ুর ভেতর থেকেও মাসিক হচ্ছে, ওদিকে পেটের ভেতর যে টিস্যুগুলো আছে সেখানেও মাসিক হচ্ছে। কিন্তু সেগুলো প্রচণ্ড ব্যথা দিচ্ছে। ফলে যে মেয়েরা এন্ডোমেট্রিওসিসে আক্রান্ত, তারা ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলে থাকেন যে, মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা হয়। এটি তার প্রথম এবং প্রধান উপসর্গ। আবার অনেক সময় পেটের ভেতরে বা মলত্যাগ করার সময় অথবা প্রস্রাবের সময় ব্যথা হয়।
তিনি বলেন, এ কারণে এই মাসিকের সময়ে একটা মেয়ে বা একটা মহিলা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে থাকেন। ফলে কর্মজীবন থেকে যেমন তাদের সরে পড়তে হচ্ছে, জীবনে চলার পথে থমকে যেতে হচ্ছে শুধু ব্যথা ব্যথা করে।
বাংলাদেশ এন্ডোমেট্রিওসিস সোসাইটি, রংপুর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক, রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহী ফারজানা তাসমীন ডক্টর টিভিকে বলেন, এন্ডোমেট্রিওসিস এমন একটা রোগ যেখানে শুধু ব্যথা, ব্যথা আর ব্যথা। মাসিকের সময় ব্যথা, স্বামীর সঙ্গে থাকতে গেলে ব্যথা, তলপেটে ব্যথা। রোগীরা বলেন, ব্যথা ছাড়া কখনোই থাকেন না। ব্যথা ছাড়া কেমন লাগে তিনি যানেন না।
তিনি বলেন, অন্যান্য ব্যথার সাথে এন্ডোমেট্রিওসিসের পার্থক্য হলো- পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগ থেকে এন্ডোমেট্রিওসিসের ব্যথাটা শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে এটা বাড়তে থাকে। আর যখন পিরিয়ড শুরু হবে তখন ব্যথাটা তীব্র হবে এবং যখন পিরিয়ড শেষ হতে থাকবে, সে সময় সবচেয়ে ভয়ংকর একটা ব্যথা শুরু হবে। আরেকটা বিষয় হলো দুটি পিরিয়ড়ের মাঝখানে রোগীর কখনো ব্যথা অনুভাব থাকে না।